উদ্বেগের সাথে ট্রাম্পের অপেক্ষায় জাতিসঙ্ঘ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৬
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্বেগ বোধ করছে জাতিসঙ্ঘ। এ উদ্বেগের প্রধান কারণ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শাসনামলে বিশ্বের বৃহত্তম এই সংস্থাটির প্রতি তার ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব।
জাতিসঙ্ঘের একজন এশীয় কূটনীতিবিদ রয়টার্সের কাছে এ ব্যাপারটি স্বীকার করে বলেছেন, ‘অতীত রেকর্ড যদি পুনর্বিবেচনা করা হয়, তাহলে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে জাতিসঙ্ঘের উদ্বেগের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, এই মেয়াদে এমনটা ঘটবে না। আমরা আরো প্রত্যাশা করছি যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন যে পৃথিবীতে জাতিসঙ্ঘের চেয়ে বড় এবং শ্রেয়তর আর কোনো বৈশ্বিক মঞ্চ নেই।’
জাতিসঙ্ঘের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। বৈশ্বিক এ সংস্থাটি চলে মূলত সদস্যরাষ্ট্রগুলোর চাঁদার ভিত্তিতে। জাতিসঙ্ঘের বৃহত্তম দাতা যুক্তরাষ্ট্র এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা চীন। উভয় রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের মূল বাজেটের ২২ শতাংশ এবং শান্তিরক্ষা মিশনের ২৭ শতাংশ সরবরাহ করে।
এর আগে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদার পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করেছিলেন ট্রাম্প। সেই সাথে জাতিসঙ্ঘের দুই অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্যারিস ক্লাইমেট অ্যাগ্রিমেন্টে অর্থপ্রদান সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। এর ফলে অর্থসঙ্কটে পড়তে হয়েছিল জাতিসঙ্ঘকে। সংস্থাটির অনেক বৈশ্বিক কর্মসূচিও মাঝপথে থেমে গিয়েছিল।
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যান, সে সময় জাতিসঙ্ঘের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ২৬০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৬০ কোটি ডলার জাতিসঙ্ঘের নিয়মিত বাজেট খাতের এবং ২০০ কোটি ডলার সংস্থাটির শান্তিরক্ষা মিশনের। পরে সেই বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করতে হয়েছিল জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনকে।
এদিকে জো বাইডেন প্রশাসনও জাতিসঙ্ঘের চাঁদা বকেয়া রেখেছে বলে জানা গেছে। জাতিসঙ্ঘের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের কাছে মূল বা নিয়মিত বাজেট খাতে ৯৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং শান্তিরক্ষা মিশন খাতে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার পাওনা রয়েছে জাতিসঙ্ঘের।
এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই দেরিতে চাঁদা পরিশোধ করে। এ কারণে বাইডেন প্রশাসনের কাছে এই অর্থ পাওনা থেকে গেছে। জো বাইডেন হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার আগে ওয়াশিংটন এই চাঁদা পরিশোধ করবে, এমন সম্ভাবনা খুব কম।’
তবে জাতিসঙ্ঘের থিংকট্যাংক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরিচালক রিচার্ড গোয়ানের অনুমান, যেহেতু ট্রাম্প এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই এবার তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তুতি থাকা উচিত এবং তা রয়েছেও।
রয়টার্সকে গোয়ান বলেন, ‘২০২৪ সালের পুরো বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে এটি চাউর ছিল যে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জিততে চলেছেন। তাই বাজেট সমস্যা ঘটলে কিভাবে তা মেটাতে হবে, সে বিষয়ক পরিকল্পনা-প্রস্তুতি জাতিসঙ্ঘের থাকার কথা এবং আমার ধারণা, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি জাতিসঙ্ঘ গ্রহণ করেছে।’
বুধবার এ ইস্যুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্তেফানে দুজারিক বলেন, ‘আমি (এ প্রসঙ্গে) আগে ভাগেই কিছু বলতে চাই না। আমি শুধু বলব, জাতিসঙ্ঘ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সাথে যেভাবে কাজ করে আসছে, তা সবসময় অব্যাহত থাকবে।’
ইলেক্টোরাল ভোট ৩০০ পার, বাকি আছে অ্যারিজোনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুধবারই একচেটিয়া বিজয় নিশ্চিত করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব রাজ্যের ফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত করে ফেলেন তিনি। সাত সুইং স্টেটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি রাজ্যের ফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ছয়টিতেই জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এখন বাকি আছে কেবল অ্যারিজোনা রাজ্যের ফল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, সবশেষ প্রকাশিত সুইং স্টেট নেভাদায়ও জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এই রাজ্যে গত দুইবারের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়েছিলেন হিলারি ক্লিন্টন এবং জো বাইডেন। আর এবার সেই তিক্ত হারের মধুর প্রতিশোধ নিলেন ট্রাম্প। জয় তো জয়ই, তবে সেই জয় যখন হয় প্রতিপক্ষের দুর্গ গুঁড়িয়ে দেয়ার মতো, সেখানে কৃতিত্ব আরো বিশাল।
শুধু তাই নয়, নেভাদা জয়ের মাধ্যমে ট্রাম্পের বর্তমান ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০১। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩০৪ ইলেক্টোরাল ভোট। মনে করা হচ্ছে, ইলেক্টোরাল ভোটের হিসাবে এবার আগের পরিসংখ্যান ভেঙে ফেলবেন তিনি। কারণ, সুইং স্টেট অ্যারিজোনার ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ১১টি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত যা ব্যালট গণনা হয়েছে সেখানে ৫২.৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। সেক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হতে দেরি হলেও, মনে করা হচ্ছে অ্যারিজোনাতেও জয় পাবেন ট্রাম্প। সেক্ষেত্রে এবার নির্বাচনে সুইং স্টেট তথা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য বিবেচিত সাতটি স্টেটেই জয়ী হচ্ছেন ট্রাম্প। যেখানে মাত্র একটি সুইং স্টেটে নিজের পক্ষে ফল আনতে পারেননি কমলা হ্যারিস।
পুতিনের সাথে কথা বলবেন
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলবেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, নিকট ভবিষ্যতেই কথা হতে পারে তাদের মধ্যে। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা কথা বলব এবং নিকট ভবিষ্যতেই এটা ঘটবে।’ মঙ্গলবার ভোটগ্রহণের পর বুধবারই নিশ্চিত হয়ে যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা শুভেচ্ছা জানানো শুরু করেন ট্রাম্পকে। এ পর্যন্ত ৭০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ট্রাম্পকে টেলিফোনে বা লিখিতভাবে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেই দলে পুতিন ছিলেন না। অবশ্য বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর সোচির একটি রিসোর্টে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। সেই সাথে তার সাহসিকতারও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তিনি।
হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ সুসি
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ হিসেবে নির্বাচনী প্রচার শিবিরের দুই ম্যানেজারের একজন সুসি উইলসকে বেছে নিয়েছেন। তিনি হবেন হোয়াইট হাউজের প্রথম নারী চিফ অব স্টাফ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ এই পদে সুসি উইলসের নাম ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনে অত্যন্ত শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং দারুণ পরিকল্পিত নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সুসি উইলসকে প্রশংসা করা হয়। বিশেষ করে ট্রাম্পের নিজস্ব লোকজনের ভেতরে ও বাইরে তার প্রশংসা শোনা যায়। আর তখনই মনে করা হচ্ছিল তিনি এই পদের জন্য হয়তো বা সামনের সারিতে আছেন। সুসি উইলসকে এই পদে নিযুক্ত করাটা নবনির্বাচিতক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, এছাড়া নিজের আসন্ন প্রশাসনের জন্য একইসাথে বড় রকমের পরীক্ষাও। কারণ বিশাল এই ফেডারেল সরকার পরিচালনার জন্য ট্রাম্পকে দ্রুতই প্রশাসনিক টিম গঠন করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা