মুজিববর্ষে অপচয় প্রকাশ করবে সরকার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
- সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে নীতিগত সিদ্ধান্ত
- বাড়ছে এসেনসিয়াল ড্রাগসের সংখ্যা
- তিন মাসে মোটা দাগে ৫ অর্জন সরকারের
বহু বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের ১২তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া বিগত মুজিববর্ষে মূর্তি নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে কোন মন্ত্রণালয়ে কত টাকা অপচয় হয়েছে তার তথ্যাদি সংগ্রহের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করবে সরকার। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে গতকাল সন্ধ্যায় শফিকুল আলম জানান, গত বছর পতিত স্বৈরাচার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে নতুন বোতলে এনে নাম দিয়েছিল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। কিন্তু উদ্দেশ্য একই ছিল। উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কণ্ঠরোধ করা। এই অ্যাক্টের মাধ্যমে অনেক মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের অনেককে জেলও দেয়া হয়েছে। কেবিনেটে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে এটি রিপিল (বাতিল) করার।
তিনি বলেন, এটা বাতিল করার পরে দ্রুত একটা ল’ (আইন) করা হবে। সাইবার সিকিউরিটির একটা উল্লেখযোগ্য জিনিস হচ্ছে সাইবার সেফটি। বিশেষ করে মহিলাদের সেফটি এবং ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি; বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ড। এ ছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম ব্যবহারকারীদের সেফটি, যেগুলোর মাধ্যমে সাইবার সমস্যা তৈরি বা হ্যাকিং হয়। মূল ফোকাস থাকবে আমাদের ভারনারেবল জনগোষ্ঠী বা ফিন্যান্সিয়াল ইনফ্র্যাস্টাকচার যাতে আমরা প্রটেক্ট করতে পারি।
সাইবার সিকিউরিটি আইনে যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলার কী হবে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, আইন মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে বলবে। আমরা কিছু কিছু মামলা যেমন- সাইবার রিলেটেড সেগুলো হয়তো থাকবে। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছিল যেসব মামলা, একজনকে ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বললে ৭ বছরের জেল হয়ে গেছে, সেসব মামলা হয়তো বাদ দেয়া হবে। তবে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি বা মেয়েদের সিকিউরিটির মামলাগুলো হয়তো চলবে। বৈঠকে ‘ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করবে। এ কমিটির মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ পরিমার্জনপূর্বক পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করবে। উচ্চপর্যায়ের এই কমিটির প্রধান হবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। ধূমপানের কারণে অনেক স্বাস্থ্যহানি যেমন হয় তেমন আবার সিগারেট ইন্ডাস্ট্রি থেকে বড় পরিমাণ রেভিনিউ আসে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে এই আইন করার বিষয়টি তারা ভাববেন।
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশে এসেনসিয়াল ড্রাগসের লিস্ট ছিল ১১৭টি। সেটা অনেক আগের। আপডেট লিস্টে ২৬০টি এসেনসিয়াল ড্রাগস রাখার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী, উচ্চমূল্যের কারণে যারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদেরকে প্রটেকশন দিতে এ সিদ্ধান্ত।
মুজিববর্ষ ঘিরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, আমরা যেখানে আইএমএফের কাছে হাত পাতছি, আমাদেরকে বেল আউট করার জন্য ৫.৮ বিলিয়ন চাচ্ছি সেখানে দেখা যাচ্ছে মুজিববর্ষে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করছি কিছু মুরাল বানিয়ে, কিছু স্ট্যাচু বানিয়ে। মুজিববর্ষে কী ধরনের কাজ হয়েছে, কত টাকা অপচয় হয়েছে, সেটার ডকুমেন্টশন (তথ্য সংরক্ষণ) করার কথা কেবিনেটে এসেছে এবং এটা নিয়ে কাজ হবে। কোন কোন মন্ত্রণালয় কত কত টাকা খরচ করেছে সেগুলোর একটা লিস্ট করা হবে। দেখা হবে কী কী খাতে টাকাগুলো গেছে। শুধু সরকারি কোষাগার থেকেই টাকা গেছে তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো দিতে বাধ্য হয়েছে। কেউ মুজিব কর্নার করতে বাধ্য হয়েছে, কেউ মুজিবের মুরাল বানাতে বাধ্য হয়েছে। এই যে একটা উন্মাদনা ছিল, মানুষের টাকা খরচ করা, মুজিববাদকে সামনে রেখে কত টাকা অপচয় হয়েছে এটা জানার একটা ডকুমেন্টশন করতে বলা হয়েছে আজকের কেবিনেট সভায়।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব একটি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রায় ১০ হাজার (মুজিব) ম্যুরাল এবং স্ট্যাচু বানানো হয়েছে। অথচ আমরা কয়েক বছর পর আইএমএফের কাছে হাত পাতছি। উনারাই হাত পেতেছেন। মুজিববর্ষে যারা বিভিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, বর্তমান সরকারে থাকা সচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, আগে ডকুমেন্টেশন হোক। আমরা দেখি কী পরিমাণ অপচয় হয়েছে। এটা অবশ্যই (জনগণের) ট্যাক্সের টাকা, এই টাকা কিভাবে ব্যয় হলো অবশ্যই আমরা দেখব। আপনারা দেখেছেন যে, শুধুমাত্র পদ্মা ব্রিজের পাশে দু’টি ম্যুরালের পেছনে ১১৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি আমরা দেখেছি। এটা নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। তারা মনে করেছে যে, একটা গোষ্ঠী সংবাদপত্রকে হুমকি দিচ্ছে, এতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। সরকার এটা লক্ষ করেছে এবং ইতোমধ্যে পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে যে, যেসব সংবাদপত্রকে হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে সরকার সিরিয়াস এবং সরকার মনে করে গণমাধ্যম অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে গত ৮ আগস্ট। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের ১১টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের সংখ্যা ৬৫টি। এর মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৯টি। অনুমোদিত নীতি/নীতিমালার সংখ্যা ২টি। অনুমোদিত চুক্তি/ প্রটোকল ৮টি। জারিকৃত অধ্যাদেশ ১০টি। অগ্রগতির এ প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা হয়।
তিন মাস পূর্তি হচ্ছে : এই সরকারের অনেক অর্জন আছে। এই তিন মাসে কোনো কেলেঙ্কারির কথা শুনেছেন? আমরা মনে করি মোটা দাগে ৫টি কাজ হয়েছে। সেগুলো হলো- স্মুথ ট্রানজিশন হয়েছে; একটা ভঙ্গুর অবস্থা থেকে ইকোনমিক রিকভারি হয়েছে; ম্যাসিভ গ্লোবাল সাপোর্ট পেয়েছি পুরো বিশ^ থেকে। রিফর্ম এবং ইলেকশনের একটা রোডম্যাপ দিয়েছি। বলতে পারেন যে, আপনারা তো ডেট দেননি। আমরা বলেছি যে, রিফর্মগুলো কেমনে হবে, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে যখন আলাপ হবে, তখন রিফর্ম কতটুকু করা হবে, এর ওপর নির্ভর করবে ইলেকশনের ডেট কবে পড়বে। পঞ্চম হচ্ছে, অনেকগুলো ক্রাইসিস ছিল এই তিন মাসে। যেমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুদফা বন্যা ছিল, এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করেছি আমরা।
জলবায়ু সম্মেলনে কতজন সফর সঙ্গী নিয়ে আজারবাইজান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, যতজন না গেলেই না ততজনকে নিচ্ছি। আমার মনে হয় নিউ ইয়র্ক সফরের চেয়েও এই সফরে কম লোক যাবেন। আপনারা জানেন, পতিত স্বৈরাচারের সময় আড়াই শ’ লোক নিয়ে বড় রকমের সফর করতেন, তাদের কী কী কাজ ছিল সেটাও ভালো জানেন।
অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, গত ১৫ বছরে আমরা অনেক সাংবাদিকের ভূমিকা আমরা দেখেছি। তারা স্বৈরাচারের কণ্ঠস্বর ছিলেন। আরেকজনের ভয়েস কেড়ে নেয়ার ব্যাপারে গ্রাউন্ড তৈরি করেছেন। এগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা কথিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার মতো কিছু করছি না। আপনারা জানেন কতগুলো টেলিভিশন, সংবাদপত্র স্বৈরাচারকে অন্ধভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধেও রিপোর্ট করেছে। আমরা তো বলছি না যে, টিভিগুলো বন্ধ করো। মিডিয়া স্বাধীন থাকুক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি, আমরা কে কী কাজ করেছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা