০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, empty
`

ইউনূস সরকারের পাশে আছে ইইউ

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের বাংলাদেশে ইইউর ডিএমডি পাওলা পামপোলিনি ও মিশেল মিলার সাক্ষাৎ করেন : পিআইডি -


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাব্য সব উপায়ে সমর্থন করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা পামপোলিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করে বলে পাওলা পামপোলিনি প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। তিনি বলেন, ‘বার্তা খুব স্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনার সঙ্গে আছে। আমরা আপনার সংস্কারকে সমর্থন করতে চাই।’

পামপোলিনি জানান, সংস্কার কাজের জন্য তহবিলের কোনো অভাব হবে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ জানান। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েনের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন। সে সময় উরসুলা ভন ডের লিয়েন বাংলাদেশকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টা জানান।
পামপোলিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে অন্যান্য অনেক দেশকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।
‘আমরা জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে আপনার ভাষণ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এখন আমাদের এমন একজন আছে যার সঙ্গে বাংলাদেশে কাজ করা যেতে পারে। আপনার একা বোধ করার দরকার নেই। আমরা সত্যিই সমর্থন করতে আগ্রহী,’ পামপোলিনি বলেন।

ইইউ কর্মকর্তারা বাংলাদেশকে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান, যা আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বাণিজ্য বাড়াবে। রাষ্ট্রদূত মিলার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ব্যবসার সুযোগ খুঁজতে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের শ্রম অধিকার সংস্কারে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করেন, যা আরও বিনিয়োগ আনার পথ প্রশস্ত করবে।
‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখি... কোনো লুকোচুরি থাকবে না। আমরা এই গেমটি আর খেলতে চাই না,’ ইইউ কর্মকর্তাদের বলেন তিনি।

ইইউ কর্মকর্তারা বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন। ‘এই প্রথমবারের মতো আমরা এমন কিছু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেখেছি যা আমরা সমর্থন করি। তাই, আমরা আপনার ওপর নির্ভর করছি,’ পামপোলিনি বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়াতে নেপাল ও ভারতের সঙ্গে কাজ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুরোধ করেন। তিনি জানান, নেপালের ব্যাপক জলবিদ্যুৎ রয়েছে, যা নষ্ট হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত এবং অন্যরাও এর থেকে উপকৃত হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের তরুণদের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল দলে বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সাম্প্রতিক অর্জন তুলে ধরেন। ‘তারা এসেছে এবং জয় করেছে, শুধু একবার নয়, দুবার,’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে অনুপ্রাণিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একটি ইউরোপীয় ফুটবল দল পাঠানোর অনুরোধও করেন তিনি।

সহযোগিতা বাড়াতে ব্রাজিলের প্রতি আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার : বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরেস ঢাকার তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করলে এ আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত ফেরেস প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ব্রাজিল এবং বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র আছে, যেগুলোতে এখনো কাজ হয়নি, যা উভয় দেশের জন্য সম্ভাবনাময় হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের পক্ষে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়িয়ে এটিকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে চাই।’

ব্রাজিল বর্তমানে বাংলাদেশে অন্যান্য আইটেমের মধ্যে চিনি, সয়াবিন এবং কাঁচা তুলা রফতানি করে এবং বাংলাদেশ থেকে বার্ষিক প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য আমদানি করে।
রাষ্ট্রদূত ফেরেস বলেন, ব্রাজিল স্থানীয় বাজারের ওপর প্রভাব না ফেলেই বাংলাদেশে গোশত রফতানি করতে পারে, যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রোটিনের একটি ভালো উৎস হতে পারে। তিনি গ্রিন এনার্জি, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, কৃষি এবং বিজ্ঞানকে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, আসুন আমরা একসাথে আরো সম্ভাবনার সন্ধান করি। রাষ্ট্রদূত ফেরেস গ্লোবাল অ্যালায়েন্স টু পোভার্টি অ্যান্ড হাঙ্গারে (দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে বৈশ্বিক জোট) বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন। বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যারা এই জোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলেও তিনি উল্লেøখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় যুব উৎসবে ব্রাজিলকে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর আহ্বান জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement