লজ্জার ব্যাটিংয়ে হারল বাংলাদেশ
- জসিম উদ্দিন রানা
- ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:১৬
ওয়ানডেতে ২৩৫ রানের টার্গেট দিয়ে ৯২ রানের জয়। অবিশ্বাস্য হলেও এটিই সত্যি করে দেখাল আফগানিস্তান। গাজানফারের ৬.৩ ওভারে ২৬ রান খরচায় বাংলাদেশের ছয় ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলে আর বাকি থাকে কী। যা রান করার করলেন সৌম্য সরকার (৩৩), নাজমুল হোসেন শান্ত (৪৭) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২৮)। বাকিরা ওই আগের মতোই আসা-যাওয়ার মিছিলে নাম লিখিয়ে ৩৪.৩ ওভারে করতে পারলেন ১৪৩ রান। টাইগার বোলাররা অতীতের মতো প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেন। তাসকিন ও মোস্তাফিজ সমান চারটি করে উইকেট নিলেন। নিলে কী হবে, ব্যাটারদের কারণে মলিন হয়ে যায় তাদের কর্মগুলো। একটা বৃত্তেই যেন আটকে আছে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-২০ হোক তারা যেন ১২০ থেকে ১৭০-এর মাঝে আটকে যাচ্ছে, যা দেশের ক্রিকেটের জন্য বিশাল অশনিসঙ্কেত।
মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হয়েছিল জয় পেতে খুব সমস্যা হবে না বাংলাদেশের। দুই উইকেট হারিয়ে ১২০ রান তুলেছিল দলটি। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ২৩ রান যোগ হতেই অলআউট বাংলাদেশ। যেন উইকেট বিলিয়ে কে কার আগে সাজঘরে যাবেন, সেই প্রতিযোগিতায় নামেন টাইগার ব্যাটাররা।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতে তানজিদ হাসান তামিমকে হারালেও সৌম্য সরকারের সাথে জুটি গড়ে ভালো সূচনায় আনেন অধিনায়ক। এরপর মিরাজের সাথে আরো একটি জুটি। দারুণ সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ঠিক তার মতো করেই আউট হয়ে যান মিরাজও। তারই খেসারত দেয় টাইগাররা। দুই সেট ব্যাটারের বিদায়ের পর যেন মড়ক ধরে ব্যাটিং লাইনআপে। একের পর এক ব্যাটার আউট হন কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পা রাখা আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফারের বলে। ক্যারিয়ারের আগের পাঁচ ম্যাচ মিলিয়ে ৪ উইকেট পাওয়া গাজনফার এবার মাত্র ২৬ রানে নিলেন ৬ উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই প্রথম আফগানিস্তানের কোনো বোলার পেলেন ৫ বা তার বেশি উইকেট। তাতেই ধস বাংলাদেশের।
এর আগে শারজায় টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল আফগানিস্তান। মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের পেস তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল তাদের ব্যাটিং লাইন-আপ। তবে দুই অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি ও হাশমতউল্লাহ শহিদি গড়েন ১০৪ রান। তাতে ভর করে ২৩৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে আফগানরা। ৪৯.৪ ওভারেই তাদের অলআউট করেছে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে আফগানিস্তানের ১০ উইকেটের ৯টি শিকার করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। একটি হয়েছে রান আউট। আর এই দিনে রেকর্ড গড়েছেন তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। হাশমতউল্লাহকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেট নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। গাজনফারকে বোল্ড করে তাসকিন আহমেদও নিয়েছেন নিজের চতুর্থ উইকেট। ওয়ানডেতে এই প্রথম একই ম্যাচে ৪ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের দুই পেসার।
পাওয়ার প্লের ভেতরে ৪ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে চাপে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ২০ ওভার হওয়ার আগে ফেরেন গুলবাদিন নাইবও। এরপর প্রতিরোধ গড়েন হাশমতউল্লাহ শহিদি ও মোহাম্মদ নবি। দু’জন মিলে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১০৪ রান। শহিদি ৯২ বলে ৫২ ও নবি ৭৯ বলে করেন ৮৫ রান। তাসকিন ৫৩ রানে ও মোস্তাফিজ ৫৭ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। এ ছাড়া একটি উইকেট শিকার করেছেন শরিফুল ইসলাম।
দীর্ঘ সাত মাস পর ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ দল। সে ক্ষেত্রে যে রকম আমেজ, আবহ থাকার কথা ছিল তা একদমই নেই। তা থাকার দায়ও নাজমুল হোসেন শান্তদের। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে তারা যেমন পারফর্ম করছেন তাতে করে দর্শকদের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের ওয়ানডেগুলো শুধু মাত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির চিন্তা টাইগারদের। সাথে আত্মবিশ্বাসের আবহ তৈরি করা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে এফটিপিতে বাংলাদেশের ওয়ানডে ছিল কেবল তিনটা। সেই তিন ম্যাচ ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। ফলে এই ম্যাচটি ভিন্ন বার্তা বহন করে, যা কিনা শুরুতেই বিশাল ধাক্কা। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল আফগানরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ৪৯.৪ ওভারে ২৩৫ (সাদিকউল্লাহ ২১, শহিদি ৫২, নাইব ২২, নবি ৮৪, রশিদ ১০, খারোতে ২৭*, শরিফুল ১/৩৪, তাসকিন ৪/৫৩, মোস্তাফিজ ৪/৫৮, মিরাজ ০/৩০, রিশাদ ০/৪৪, মাহমুদুল্লাহ ০/১১)।
বাংলাদেশ : ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ (তানজিদ ৩, সৌম্য ৩৩, শান্ত ৪৭, মিরাজ ২৮, হৃদয় ১১, মাহমুদল্লাহ ২, মুশফিক ১, রিশাদ ১, তাসকিন ০, শরিফুল ১, মোস্তাফিজ ৩*, গাজনফার ৬/২৬, নবি ১/২৩, ওমরজাই ১/১৬, রাশিদ ২/২৮)।
ফল : আফগানিস্তান ৯২ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : গাজানফার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা