বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা থাকবে
ট্রাম্পের বিজয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমত- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:১৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ট ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় আগামী মাসে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিদায় নিতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের অধিকার- এ সব ক্ষেত্রে নৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম পাবে। অন্যদিকে বাণিজ্য ও ভূ-রাজনীতির গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি পাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সাথে দেশটির সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। কেননা ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা পড়ে না। এতে জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য পায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এমন ধারণাই পোষণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ট ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার প্রভাব বাংলাদেশের সাথে দেশটির সম্পর্কে কতটা পরতে পারে জানতে চাইলে গতকাল নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, বাংলাদেশের ওপর এই নির্বাচনের প্রভাব বড় আকারে পড়বে এমন কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে একটা ধারাবাহিকতা থাকে। এ কারণে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাথে দেশটির সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়তো বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখব না। তবে ট্রাম্প প্রশাসনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের অধিকার- এ সব ক্ষেত্রে নৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম পাবে। অন্য দিকে বাণিজ্য ও ভূ-রাজনীতির গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি পাবে। এ সব ক্ষেত্রে প্রায়গিত ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আমরা লক্ষ করব। ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের জোরালো সমর্থন রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা দেবে কিনা- জানতে চাইলে সাহাব এনাম খান বলেন, বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি না। কেননা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে এ ধরনের আলোচনা ডেমোক্র্যাটিক শিবিরে ছিল। ট্রাম্প আসার কারণে এতে পরিবর্তন আসবে- এমনটা মনে করার কারণ নেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন লবি বা স্বার্থান্বেষী গ্রুপ রয়েছে। মার্কিন সরকার পরিবর্তনের পর এই গ্রুপগুলো কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে- সেটা দেখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এটা বাদ দিয়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরির্বতনকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে।
ডোনাল্ট ট্রাম্পের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগতভাবে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়বে কিনা- প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনে যেহেতু অর্থনীতি গুরুত্ব পাবে, তাই স্বাভাবিকভাবে এই অঞ্চলে ভারতের গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাড়বে। এই নির্বাচনে তথ্য প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো ট্রাম্পকে ভালো সমর্থন দিয়েছে। চীনকে মোকাবেলা করে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি গতিশীল করতে হলে ভারতের মতো একটা বড় বাজারের প্রয়োজনীয়তা ট্রাম্প প্রশাসন বেশ ভালোভাবে অনুধাবন করবে। এ কারণে ভবিষ্যতে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সাথে আলোচনা অন্তর্বর্তী সরকারের চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা নিলে নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়টা হয়তো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আরো পরিষ্কার করে জানতে চাইবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে টুইট বার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার করার কথা বলেছিলেন। ট্রাম্প দায়িত্বভার নেয়ার পর এটার প্রভাব কতটা পড়বে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে যে উৎসাহ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ছিল রিপাবলিকান পার্টির তা নাও থাকতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক সময় উল্টো-পাল্টা কথাবার্তা বললেও সরকার পরিবর্তনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি খুব একটা পরিবর্তন হয় না। তাই ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বড় ধরনের পরিবর্তন হবে সেটা মনে হয় না। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলিঙ্গনের ছবি দেখলে এর উষ্ণতা উপলব্ধি করা যায়। অন্য দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ততটা উষ্ণ নয়। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় কিছুটা ব্যতিক্রম আসতে পারে, তবে তা খুব বেশি কিছু নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তনে বাংলাদেশের একটি মহল উৎসাহিত হতে পারে উল্লেখ করে আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষা করা। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী স্বার্থ রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি ও চীনের সাথে সম্পর্ক বিন্যাসের বিষয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে পেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ব্যক্তি বিশেষকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নির্ধারণ করে না। এ ক্ষেত্রে দেশটির শক্তিশালী আমলাতন্ত্র ও বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ কারণে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে সামান্যই পরিবর্তন আসে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবাদল বাংলাদেশের সাথে দেশটির সম্পর্কে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা