মালদ্বীপ দিয়ে ঢাকার পোশাক রফতানি রাজস্ব হারাচ্ছে ভারত
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৮
ভারতীয় অনলাইন মিডিয়া লাইভমিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির বিমানবন্দর ও নৌবন্দর দিয়ে তৈরী পোশাক রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর পরিবর্তে এখন মালদ্বীপের মাধ্যমে গার্মেন্ট পণ্য বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো হচ্ছে। বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের নৌ ও বিমানবন্দর বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্মকর্তারা।
লাইভমিন্টকে এমএসসি এজেন্সি (ইন্ডিয়া) প্রাইভেট লিমিটেডের মহাপরিচালক দীপক তিওয়ারি বলেছেন, ‘আগে বাংলাদেশের পণ্য ভারতীয় বিমানবন্দরের মাধ্যমে পরিবহন হতো। কিন্তু এখন তারা অন্যান্য রুটে তাদের পণ্য পরিবহন করছে। যার অর্থ আগে এসব পণ্যের কার্গো থেকে ভারত যে রাজস্ব পেত সেটি এখন পাচ্ছে না। এমএসসি এজেন্সি (ইন্ডিয়া) ভারতের অন্যতম বৃহৎ কার্গো পরিবহন সংস্থা।
দেশটির তিন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন তৈরী পোশাক পণ্য জাহাজে করে প্রথমে মালদ্বীপে পাঠাচ্ছে। এরপর সেখান থেকে বিমানে করে বিশ্বব্যাপী গন্তব্যে পৌঁছানো হচ্ছে পণ্যগুলো, যার মধ্যে রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম এবং জারার মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানির পোশাকও। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশ, যার অর্থ ভারত দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিশ্বব্যাপী রফতানি করত ঢাকা।
ভারতের বদলে অন্য দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ পণ্য রফতানি করলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া লজিস্টিক ও কাঠামোগত প্রজেক্টে থাকা সহযোগিতাপূর্ণ সুযোগগুলো নষ্ট হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের এমন সিদ্ধান্তে ভারত সরকার একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজছে, যেটি ভারত হয়ে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ তৈরী পোশাক রফতানির বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং ভারতের স্বার্থ রক্ষা করবে।’
অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রফতানিকৃত এসব তৈরী পোশাক পণ্যের একটি বড় অংশ ভারতীয় অবকাঠামো বা কারখানায় উৎপাদিত হয়। যেগুলো বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় কোম্পানিগুলোই পরিচালনা করে। এ বিষয়টি (ভারত) সরকারের নজরে রয়েছে। ভারতের ওপর এটির প্রভাব কেমন হতে পারে, এখন আমরা সেটি নিরূপণের চেষ্টা করছি।’
তবে এক শিল্প বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ভারতের ওপর কোনো রাগ বা বিরাগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তার মনে হচ্ছে না। মূলত নিজেদের সাপ্লাই চেইনের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতীয় বন্দরগুলোর মাধ্যমে সময়মতো পণ্য রফতানি না হওয়ায় বাংলাদেশ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা তার।
অরুণ কুমার নামের এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে নতুন রুটের মাধ্যমে কৌশলগত সুবিধা, সাথে নিশ্চিত নির্ভরযোগ্যতা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ, যা আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারের কঠোর সময়সীমার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ভারতের বন্দরের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশ তাদের সাপ্লাই চেইনের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে।’
অরুণ কুমার বলেছেন, গার্মেন্ট পণ্যকে পচনশীল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চালান পৌঁছে দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল হয়ে যায় এবং গার্মেন্ট পণ্য এমন পণ্য যেটি একটি নির্দিষ্ট মৌসুমের পর তার মূল্য হারায়।
তবে ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্টের কাছে দাবি করেছেন, ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশ তৈরী পোশাক রফতানি বন্ধ করলেও তাদের খুব ক্ষতি হবে না। তার দাবি, ভারতীয় বন্দরগুলো এমনিতেই অনেক ব্যস্ত। এ কারণে তারা তাদের বন্দর হয়ে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বন্ধের জন্য আগেই ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ভারত হয়ে তৈরী পোশাক রফতানি বন্ধের সাথে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তাকে আশ্রয় দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন অপর এক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার কারণে বাংলাদেশ এটি করছে বলে ভারত সরকার মনে করে না। টেক্সটাইল হলো বাংলাদেশের মেরুদণ্ড। তাই এর রফতানি বাড়াতেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৈরী পোশাক রফতানি : ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। এই অর্থবছরে এই খাত থেকে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত তৈরী পোশাক রফতানি কমায় রফতানি আয়ও কমেছে। তবে ২০২৩ অর্থবছরে পোশাক রফতানি ১৭ শতাংশ বেড়ে ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল; যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ৩৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
গত বছর বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্ববৃহৎ তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশের মর্যাদা অর্জন করে। বাংলাদেশের আগে কেবল ছিল চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সব মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশ যত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছিল তার ৮০ শতাংশই এসেছিল তৈরী পোশাক খাত থেকে। অন্য দিকে ভারতের তৈরী পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম।
এ দিকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতের কাছে ই-মেইল পাঠিয়েছিল সংবাদমাধ্যমটি। তবে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মালদ্বীপ এয়ারপোর্টস কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড সমুদ্র-বিমান পরিবহন সেবাও দিয়ে থাকে। তারা পণ্য প্রথমে মালদ্বীপে নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে বিমানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পাঠায়। এটির যাত্রা শুরু এ বছরেরই মার্চে। প্রথম যেসব পণ্য তারা পরিবহন করেছিল সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক পণ্য ছিল বলে কোম্পানিটির প্রতিবেদনে জানা গেছে। তাদের সাথে যুক্ত আছে কাতার এয়ারওয়েজ, আমিরাত, টার্কিস এয়ারলাইন্স, এরোফ্লোট, গালফ এয়ার, নিউস এয়ারলাইন্স ও ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ। এসব বিমান সংস্থার মাধ্যমে কোম্পানিটি পণ্য পরিবহন করে।
লাইভমিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন হাব এবং ভারতের পণ্য রফতানির জায়গা। ২০২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যার মধ্যে শুধু তুলা রফতানি করেছে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি করে ভারত ২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বলে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যার ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য শুধু তুলা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা