রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইস্যু আরেক চক্রান্ত : ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১২
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ইস্যুকে আরেকটি চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় যোগ দিয়ে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর ও দলটি নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করবার আমরা কারা? জনগণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা তো আরেকটি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশে একটি অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য এসব কথা বলা হচ্ছে। যেটা কোনো ইস্যুই না, সেটিকে ইস্যু বানানো হচ্ছে।’ মির্জা ফখরুল এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। এর আগে সাবিহ উদ্দিন আহমেদের স্মরণসভায় যোগ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একজন দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের মানুষ হিসেবে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ দেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সবসময় স্মরণে থাকবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কূটনীতিক মরহুম সাবিহ উদ্দিন আহমেদকে ‘সত্যিকারের দেশপ্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার নিকট সহকর্মীসহ নানা পেশার নাগরিকরা।
সাবিহ উদ্দিন আহমেদের স্মরণসভায় তার বর্ণাঢ্য জীবন-কর্ম তুলে ধরে তাকে স্মরণ করা হয় এবং তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় ।
স্মরণসভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাবিহ উদ্দিন ছিলেন রিয়াল ন্যাশনালিস্ট। দেশ ও জনগণের প্রশ্নের কোনো কম্প্রমাইজ নেই। আন-কম্প্রমাইজিং ছিলেন। এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আমরা তার পরিবারের জন্য দোয়া করি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাবিহ উদ্দিনসহ আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল এই সমাজটাকে পরিবর্তন করব, আমরা বদলে দেবো। সেটি সেই সময় সম্ভব হয়নি, সাবিহ চলে গেছেন সরকারি চাকরিতে। সরকারি চাকরিতে গেলেও কখনো সেই লক্ষ্য থেকে তিনি সরে যাননি। তিনি বলেন, সাবিহ যেখানেই ছিলেন সেখানেই দেশের জন্য কাজ করেছেন, জনগণের জন্য কাজ করেছেন। সবচেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে যে, যখন তিনি আমাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছেন তখন দেখেছি যে, তিনি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন।
শেখ হাসিনার শাসনমালে সাবিহ উদ্দিন সরকারের রোষানলে পড়ে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওই সময়ে তার ওপরে প্রচণ্ড আক্রমণও হয়েছিল। রিয়াজ রহমান সাহেবের গুলি লেগেছিল, সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ওই সময়গুলো আমরা পার করেছি। তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা যারা একসাথে ছিলাম তাদের কাছে এটা বেদনার। সাবিহর ছবিটা এখানে দেখে আঁতকে উঠলাম।
একান্ত বন্ধু সাবিহ উদ্দিনকে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভাইয়ের মতোই ছিলাম। অফুরন্ত প্রাণশক্তি ছিল তার। মনে হয়েছে টগবগ করছে সবসময় সে জীবনী শক্তি নিয়ে। কোনো কিছুতে ভেঙে পড়ার লোক ছিলেন না। লড়াই করেছেন শেষ পর্যন্ত। আজকে তিনি থাকলে সবচেয়ে খুশি হতেন ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখে।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, সাবিহ উদ্দিন শেষ দিন পর্যন্ত দেশের কথাটি ভেবেছেন, দশের কথাটি ভেবেছেন। তার মধ্যে স্বার্থপরতা ছিল না। দেশপ্রেমের প্রশ্নের কোনো আপস তিনি করেননি। বাংলাদেশে খুব কম মানুষই পাবেন যে, আপন স্বার্থ ভুলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। তিনি সবসময় এটা লালন করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ জান্নাতবাসী হয়েছেন। জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্থান দিয়েছেন। মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়েন সাথে সম্পৃক্ত হন সাবিহ উদ্দিন। লেখাপড়া শেষে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। তিনি তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন সাবিহ উদ্দিন।
জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি জ্বালানিমন্ত্রী আকবর হোসেন, এইচ এম এরশাদের আমলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খানের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হন সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। সেই দায়িত্ব পালন শেষে আবার তথ্য ক্যাডারে ফিরে যান। ২০০১ সালে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
মরহুম সাবিহ উদ্দিনের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ওপরে স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ সম্পাদক শফিক রেহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা।
মরহুম সাবিহ উদ্দিনের সহধর্মিণী রওনক আহমেদ, ছেলে সাইয়াব আহমেদ, বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমসহ নিকট স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন স্মরণসভায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা