রাজধানীর আবাসিক হোটেল আ’লীগ নেতাদের আস্তানা
- আবু সালেহ আকন
- ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১০
রাত হলেই তারা বের হন। দিনভর থাকেন গোপন আস্তানায়। একেক জনের বিরুদ্ধে রয়েছে অগণিত মামলা। বিপ্লবের সময় তারা ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা তারা। এখন সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। নিজেকে আড়াল করতে বেছে নিয়েছেন রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলো। আওয়ামী লীগ নেতাদের মালিকানাধীন হোটেলগুলো এখন তাদের নিরাপদ আস্তানা।
রাজধানীর কাকরাইলে রাজমণি ঈশা খাঁ বারে রাতে দেখা মেলে অনেকের। যারা একটু অভিজাত ও টাকা-কড়ি আছে তারা ওই হোটেলে আস্তানা গেড়েছেন। এ হোটেলটির মালিক একজন আওয়ামী লীগ নেতা। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও রাজমণি ঈশা খাঁ রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে পলাতক নেতাকর্মীরা নিরাপদেই অবস্থান করছেন ওই হোটেলে।
গত কয়েক দিনে রাজধানী থেকে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন তাদের অনেকেই বাসাবাড়ি ছেড়ে হোটেলে অবস্থান করতেন বলে জানা গেছে। গত ১ নভেম্বর গুলিস্তানের পীরইয়ামেনি হোটেল থেকে গ্রেফতার হয়েছেন সাংবাদিক হাসান মাহমুদ হত্যার আসামি, পটুয়াখালী জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই রাতে হাসান মাহমুদ বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে বের হওয়ার পরে ৫০-৬০ জন আওয়ামী সন্ত্রাসী তাকে তুলে নিয়ে যায়। ভোর রাতে তার স্ত্রীকে খবর দেয়া হয় তার স্বামীর লাশ গোড়ান ছাপড়া মসজিদের সামনে রাস্তায় পড়ে আছে। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মহিলা লীগ নেত্রী জাকিয়াকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৩ অক্টোবর রাতে গুলিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতার হন যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম মিলন। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর মিলন ঢাকায় এসে অবস্থান করছিলেন। নিরাপদ ভেবে গুলিস্তান এলাকার কয়েকটি আবাসিক হোটেলে তিনি ঘুরে ফিরে থাকতেন। দিনের বেলায় হোটেল থেকে বের হতেন না। রাতে বের হয়ে বিভিন্ন কাজ সারতেন বলে জানা গেছে।
এ দিকে রাজমণি ঈশা খাঁয় অনেক ভিআইপি আওয়ামী লীগ নেতা নামে-বেনামে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। রাতে তারা হোটেলের বারে মিলিত হন বলেও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়। বাইরে থেকেও অনেক নেতা সেখানে যান বলে অভিযোগ আছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে হোটেলটি।
হোটেল ও বারটির মালিক আহসান উল্লাহ মনির বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি। তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক বড় ডোনার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, লিয়াকত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির, মহানগরের বায়েজিদসহ অনেক পলাতক আওয়ামী লীগের নেতা এখনো আত্মগোপনে আছেন হোটেল রাজমণিতে। তারা রাতে বারে বসে নিয়মিত সরকারবিরোধী বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। এক প্রভাবশালী ব্যক্তির মেয়ে নাকি আহসান উল্লাহ মনিরের ছেলের বউ; যে কারণে তিনি গর্ব করেই বলেন, তার কিছুই হবে না।
এই বারে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, কিংবা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ হাসিনা, মুজিব বন্দনার নানা গান চলে রাত ৮টার পরে। অ্যারেঞ্জার আজিজ নিজেই নিয়মিত এই গান চালান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন। চলে নাচের আয়োজন। যদিও তাদের লাইসেন্সে নাচ-গানের কোনো অনুমতি নেই। বারে সেনু নামের এক স্টাফ আছে, যিনি নানা অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ মিলেছে। কেরু অ্যান্ড কোং ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির মদ বিক্রি করার পারমিশন না থাকলেও এই বারে দেশী-বিদেশী সব ধরনের মদই বিক্রি হচ্ছে। এসব বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কাউকে পাওয়া যায়নি। হোটেলের কর্মচারীরা কেউ এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা