জয়ী হলে স্বাস্থ্যসেবা আইন বাতিল করবেন ট্রাম্প : সতর্কতা কমলার
মিশিগানের মুসলিমপ্রধান শহরে প্রচারণায় ট্রাম্প- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬
মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার মিত্ররা জয়ী হলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিকে পিছিয়ে দেবে বলে সতর্ক করেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। গত বৃহস্পতিবার একটি সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক করেন তিনি। ট্রাম্পের বুধবারের নির্বাচনী সমাবেশে নারীদের নিয়ে তার মন্তব্য আপত্তিকর বলেও মন্তব্য করেছেন কমলা। ওই সংবাদ সম্মেলনে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা ভোটারদের মনে করিয়ে দেন, ২০১৭-২০২১ মেয়াদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার শাসনামলে সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা আইন যেটি ওবামাকেয়ার নামেও পরিচিত, সেটি বাতিলের ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। রয়টার্স।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন ট্রাম্প ও হ্যারিস। অ্যারিজোনা ও নেভাদায় যাওয়ার আগে, ম্যাডিসন, উইসকনসিনে সাংবাদিকদের হ্যারিস বলেছিলেন, ‘এই নির্বাচনে সব আমেরিকানদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাও নির্ধারিত হবে।’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি কখনই এই কর্মসূচি থেকে সরে যেতে চাননি। ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে করা একটি পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমি কখনই এটি করার কথা উল্লেখ করিনি। এমনটি এটি সম্পর্কে কখনো ভাবিইনি।’
জনমত জরিপগুলোতে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের সাতটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজ্যে ভোটের ওপর নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অক্টোবরে রয়টার্স/ইপসোস পোলিংয়ে দেখা গেছে, এবারের প্রতিযোগিতায় জেন্ডারভিত্তিকভাগে ভোটারদের বিভক্ত করা হয়েছে। কমলা নারীদের মধ্যে ১২ শতাংশ পয়েন্টে এবং ট্রাম্প পুরুষদের মধ্যে সাত শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী ল্যাব অনুসারে, ৬৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইতোমধ্যে ব্যক্তিগতভাবে প্রাথমিক ভোটদান ও ই-মেইল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। আবারো নির্বাচনী প্রচারণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে ওঠেছে ২০১০ সালের সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক আইনটি। এই আইনের আওতায় দেশের স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রায় চার কোটি আমেরিকান স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন। ২০১০ সালে ডেমোক্র্যাটরা এই আইন পাস করে। এই আইন পাস করার সাথে সেটি রক্ষা করাটাও ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা হয়ে দাঁড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে এই আইনটি এখন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।
মিশিগানের মুসলিমপ্রধান শহরে প্রচারণায় ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেয়ারবর্ন শহরে নির্বাচনী প্রাচারণা চালালেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর আমন্ত্রণে শুক্রবার সেখানে যান তিনি। স্থানীয় নেতা ওসামা সিবলানি জানিয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনের প্রথম কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী ডেয়ারবর্ন সফরে আসছেন। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিমদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। তা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন কমলা হ্যারিস। এপি ।
কিন্তু সশরীরে ডেয়ারবর্নে উপস্থিত না হয়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর তার নিজের জন্য একটি ট্রাম্পকার্ড হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। রেস্তোরাঁ মালিক স্যাম আব্বাস বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অবসান চাই আমরা। এই বিষয়ে আমরা স্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি। আমরা এখানে ভোটের রাজনীতি করতে আসিনি। আমরা চাই, আমাদের পরিবারের মানুষদের হত্যা বন্ধ হোক। বোমা হামলা বন্ধ হোক।’ রিপাবলিকান শিবির থেকে এই সফর নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে মিশিগানে আয়োজিত সমাবেশের ধারাবাহিকতায় ডেয়ারবর্ন যাচ্ছেন ট্রাম্প। ওই সমাবেশে স্থানীয় মুসলমানদের মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহরের অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেননি। তবে তারা ট্রাম্প সম্পর্কেও যথেষ্ট ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন না। মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে যা ইচ্ছা তাই করার অনুমোদন দেয়ার মতো কথাগুলো এখনো ভুলে যাননি তারা।
কিন্তু তার পরও, এই অঞ্চলে প্রথাগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি অনুগত ভোটাররা ট্রাম্প বা অন্যকোনো পক্ষের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে কমলা শিবিরে। মিশিগান তাই দু’পক্ষের জন্যই নির্বাচনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ময়দান বলে প্রমাণিত হতে পারে। আব্বাস বলেছেন, ডেয়ারবর্নে ট্রাম্পকে আতিথেয়তা দেয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগে তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ট্রাম্পের মিত্ররা। কিন্তু তিনি শর্ত দিয়েছিলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অবসান, লেবানন পুনর্গঠনে পদক্ষেপ, বাস্তুচ্যুত ও আহতদের সহায়তা করার সুস্পষ্ট বিবৃতি দিলে প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে।
সে দাবি মেনেই যেন গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ট্রাম্প বলেছেন, তিনি লেবাননে দুর্ভোগ ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান চান। তিনি আরো বলেছেন, ‘সব লেবানিজের সমান অধিকার রক্ষায় আমি সচেষ্ট থাকব। লেবাননে বসবাসরত আপনাদের বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও আত্মীয়স্বজন শান্তি, সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির সাথে বেঁচে থাকার অধিকার রাখেন। কেবল স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।’ আব্বাস বলেছেন, ‘ট্রাম্প যেন আমাদের বলতে আসছেন- আপনাদের দাবি আমি মেনে নিয়েছি। আমার সত্যিকার উদ্দেশ্য যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা