কিলার বাদল ও কাইল্যা সুমনের ইশারায় চলে অপরাধ জগৎ
মোহাম্মদপুরে চাঁদাবাজ-দখলবাজ ও কিশোর গ্যাং সিন্ডিকেট- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদল ওরফে কিলার বাদল ও কাইল্যা সুমনের নেতৃত্বে এলাকায় বেশ কয়েকটি ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং চক্র গড়ে উঠছে। দু’জনের নির্দেশে এ চক্রের সদস্যরা মোহাম্মদপুরজুড়ে খুন, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির আধিপত্য বিস্তার করেছে।
সূত্র জানায়, কিলার বাদল ও কাইল্যা সুমনের বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ অন্তত শ’খানেক মামলা রয়েছে। তাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে লালু উদ্দিন লালু অন্যতম। বাদলের নির্দেশে লালু কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং চক্র আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরপর কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনায় নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে কয়েক দিনে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় এক শ’ সন্ত্রাসী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মধ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে মোহাম্মদপুরের অপরাধ জগতের মূল হোতা কিলার বাদল ও কাইল্যা সুমন।
স্থানীয়দের মতে, বর্তমানে কিলার বাদল ও কাইল্যা সুমনকে কেউ না দেখলেও তাদের ইশারায় পুরো মোহাম্মদপুরের অপরাধজগৎ চলে। তার হাতিয়ার হিসেবে কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যরা চাঁদাবাজি, দখলবাজি, ভূমি দখল ও হামলাসহ ভয়ঙ্কর কাজ করছে। সড়ক ও ফুটপাথ দখল করে দোকানপাট বসিয়ে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে অথবা জমি দখলে বাধা দিলে কুপিয়ে হত্যা আবার কখনো গুরুতর আহত করা হয়। বাদলের ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলতে সাহস পান না। তার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে সহযোগী লাল্লু, ইমন ওরফে জুট ইমন, ঘাট বাবু, গ্যারেজ সোহেল, বাত রাসেল, মাহিসহ অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ডিশ ব্যবসায়ী ইকবালকে হত্যার মধ্য দিয়ে কিশোর বয়সেই বাদলের কিলিং মিশন শুরু হয়। এরপর কাঁটাসুরের বাবুল হত্যার মধ্য দিয়ে বাদল থেকে কিলার বাদল হিসাবে স্থানীয়দের কাছে সে পরিচিতি লাভ করে। ২০০২ সালে কমিশনার রাজু হত্যা ও মোহাম্মদপুরে ডাবল মার্ডারের (বস্তাবন্দী জোড়া লাশ) ঘটনায় বাদল সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর বাদল পেশাদার কিলার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর কাঁটাসুর এলাকায় ব্রাশফায়ারে দু’টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর মিরপুর থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাদল কারাবন্দী ছিল। দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার সুবাদে বিভিন্ন শীর্ষ ও মধ্যম সারির সন্ত্রাসীদের সাথে তার পরিচয় হয়।
মোহাম্মদপুরের একসময়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে কাইল্যা সুমন। সুমন কিলার বাদলের ভাই ও অন্যতম সহযোগী। বাদলের অন্যতম সহযোগী তাজেল গাজীও সুমনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হত্যা, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলায় সুমন ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেছে। বাদলের মাদক ব্যবসায়ের অন্যতম নিয়ন্ত্রক রনি ওরফে ভাগিনা রনি। ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট অভিযানে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ রনি গ্রেফতার হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় কিলার বাদলের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কিলার বাদলের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাদলের দখলবাজ একাধিক গ্রুপ রয়েছে।
মোহাম্মদপুর এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে লেগুনা থেকে চাঁদা তোলার কাজ করত লেগুনার লাইনম্যান নবী হোসেন। চাঁদা ও এলাকার আধিপত্য নিয়ে রাসেল ও কিলার বাদল অনুসারী মাহি গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত বছরের ৪ এপ্রিল লাইনম্যান নবী হোসেন নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরদিন তুরাগ নদী থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নবীর স্বজনরা জানান, নবী ছিলেন রাসেল গ্রুপের সদস্য। যদিও পুলিশ বলছে, নারীঘটিত কারণে পরিকল্পিতভাবে নবীকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তা মোড় এলাকায় জসিম, তিন রাস্তা মোড় থেকে আল্লাহ করীম মসজিদ পর্যন্ত সালাম ফুটপাথ নিয়ন্ত্রণ করে বাদল ও কাইল্যা সুমনের মূল সহযোগী লালু উদ্দিন লালু। বাদলের ১৫-১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা লালু আধিপত্য বিস্তার করছে। কিশোর গ্যাং নেটওয়ার্কের মূল সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে কাইল্যা সুমন, সোহেল ওরফে গ্যারেজ সোহেল। গ্যাংগুলোর প্রধান হিসেবে কাজ করে ইমন ওরফে জুট ইমন। মোহাম্মদপুর এলাকার ১৩টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ কাইল্যা সুমন ও ইমন ওরফে ঝুট ইমনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাঁদ-উদ্যান এলাকায় গড়ে ওঠা ইমনের অফিস থেকে গ্রুপগুলো পরিচালনা করা হয়। র্যাব অফিসের কয়েক গজের মধ্যে চাঁদ-উদ্যান এলাকায় প্রতিদিনই চলে কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া। ঝুট ইমনের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর কাঁটাসুর এলাকায় সাজ্জাদ ও চাঁদ-উদ্যান এলাকায় মাহি কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে।
সূত্র জানায়, পুলিশ ও র্যাবের সাথে ইমন ওরফে ঝুট ইমনের বিশেষ সখ্য রয়েছে। এ বিশেষ সখ্যের কারণে কিশোর গ্যাং সদস্যদের মারামারিতে কেউ বাধা দিলে তার ওপর নেমে আসে মামলাসহ নানা রকম হয়রানি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা