রণক্ষেত্র মিরপুর
গার্মেন্ট বন্ধ করা নিয়ে তাণ্ডব : সেনা-পুলিশের গাড়িতে আগুন- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯
রাজধানীর মিরপুরে গার্মেন্ট বন্ধের জেরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন চলে দুপুর পর্যন্ত। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এসময় পুলিশ সাউন্ডগ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্রমিকদের তাণ্ডবে পুরো এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
শ্রমিকরা জানান, সকাল ৮টায় প্রতিদিনের মতো গতকালও মিরপুর ১৪ নম্বরের ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার গার্মেন্টে প্রবেশের জন্য শ্রমিকরা অপেক্ষায় থাকেন। শ্রমিকদের মধ্যে দন্দ্ব থাকায় আগেই গার্মেন্ট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন মালিকপক্ষ। গার্মেন্টের শিপমেন্টের তাড়া থাকায় মিরপুর থেকে আশুলিয়ায় মালামাল স্থানান্তর করেন কর্তৃপক্ষ।
এতে গার্মেন্ট বন্ধ রেখে মালামাল সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এমন তথ্য ছড়িয়ে আশপাশের পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করতে শুরু করেন তারা। আন্দোলনে বাধা দেয়ায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ ঘটে। সেনাবাহিনীকে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সকাল ৯টায় এমন অবস্থায় একটি সেনাবাহিনীর গাড়ি ও একটি পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারী শ্রমিকরা। এই ঘটনায় এক নারীসহ দুইজন পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ দুই পোশাকশ্রমিক হলেন আল আমিন (১৮) ও ঝুমা আক্তার (১৫)। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আল আমিনের দুই কাঁধে ও ঝুমার ডান পায়ের গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানিয়েছেন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো: ফারুক।
গার্মেন্টের বিপরীতে রয়েল ফার্নিচারের কর্মচারী মেজবাহ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তৈরী পোশাক কারখানার কয়েক শ’ শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেত সড়কে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করেন। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক এখানে আন্দোলন শুরু করেন। সংঘর্ষ মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিরপুর ১৪ নম্বর সড়কের সাথে সংযোগ সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ পোশাকশ্রমিকদের লাঠিপেটা করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি চালায়। এতে দুই পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় বলে শুনেছি।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের দু’টি পোড়া গাড়ি পড়ে রয়েছে। অর্ধশতাধিক পুলিশ পোশাক কারখানার সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে চার-পাঁচজন সেনাসদস্য দেখা গেছে। থমথমে অবস্থা থাকলেও পুড়ে যাওয়া গাড়ির সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। আন্দোলনের মুখে মিরপুর-১৪ থেকে কচুক্ষেত এলাকায় অবস্থিত আটটি গার্মেন্ট বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকদের অলিগলিতে দেখা যায়। দুপুর ১২টার পরে এই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলন ও সংঘর্ষের বিষয়ে ডিএমপির কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। পোশাকশ্রমিকরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। দুপুর ১২টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ওসি আরো বলেন, এই ঘটনায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। পুলিশের কোনো সদস্য এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে দুইজন পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধের খবর পেয়েছি। যদি অভিযোগ নাও করে, কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে কারা আগুন দিয়েছে সেই বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে বলে জানান কাফরুল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা।
ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার গার্মেন্টের নিরাপত্তাকর্মী শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, শ্রমিকদের ভিতরের দ্বন্দ্বে আজ এমন সংর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কবির নামে এক লাইনম্যান শ্রমিকদের চাপ দিয়ে, গালাগালি করে কাজ করান। শ্রমিকরা কবিরের পদত্যাগ চায়। পরবর্তীতে কবিরের শ্যালক গত ২৬ অক্টোবর এক নারী পোশাকশ্রমিককে মারধর করেন। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে একজন পুরুষ শ্রমিককেও মারধর করা হয়। কারখানার মালিক কবিরকে পদত্যাগ করতে বললে তার ঘনিষ্ঠরা কাজে বাধা দেয়। কারখানার ভিতরে এমন ঘটনায় প্রায় তিন দিন কাজ বন্ধ থাকে। এদিকে শিপমেন্টের তাড়ায় কারখানার মালামাল স্থানান্তর করেন মালিক। গতকাল মালামাল স্থানান্তর ও কারখানা বন্ধ রাখায় আশপাশের পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা