সদরঘাট টু গুলিস্তান মধ্যরাতেও যানজট
- আবু সালেহ আকন
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সদরঘাট থেকে গুলিস্তানে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট। কিন্তু অন্যদিনের অবস্থা পুরোই উল্টো। পায়ে হেঁটে যেতেও পড়তে হয় জ্যামে। আর বাসে গেলে সময় লাগে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। সময় চলে যায় কিন্তু রাস্তা ফুরোয় না; এই অবস্থা।
পুরান ঢাকার সদরঘাটে ঢাকা নদীবন্দর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও আদালত পাড়ার কারণে এই অঞ্চলে লোকজনের সমাগম অত্যধিক। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও কমানো যাচ্ছে না যানজট। ফলে এই এলাকার মানুষের দীর্ঘ সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। তারপরও সময়মতো হাজির হতে পারেন না গন্তব্যে। যানজটের নেপথ্যে রাস্তার দুই পাশে খেয়ালখুশি মতো ট্রান্সপোর্টে মালামাল লোড, যততত্র গাড়ি পার্কিং, ইচ্ছেমতো ইউটার্ন এবং রাস্তার ভেতরেই ভাসমান ব্যবসাকে দায়ী করেন পথচারীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। এই রোডে শুধু দিনের বেলাতেই নয় মধ্যরাতেও থাকে যানজট। এই রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার শতাধিক কাউন্টার। এসব ট্রান্সপোর্টে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল পাঠানো হয়। আর এসব মালামাল রাস্তার পাশেই রাখা হয়। রাত ৮টা পার না হতেই ট্রান্সপোর্টের গাড়িগুলো আসতে থাকে মালামাল ওঠানোর জন্য। বড় বড় ট্রাকগুলো সারি সারি করে দাঁড় করিয়ে মাল ওঠানো হয়। এসব গাড়ি রোডের অর্ধেকের বেশি দখল করে ফেলে। রাতভর চলতে থাকে তাদের এই কাজ। এতে করে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচলে চরমভাবে ব্যাঘাত ঘটে। ভিক্টোরিয়া পরিবহনের চালক মমতাজ উদ্দিন বলেন, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান আসতে আমাদের দুই ঘণ্টা লেগে যায়। শুধু শুধু গাড়ির তেল পুড়ে, গ্যাস পুড়ে। যাত্রীরা মাঝপথে নেমে যায়। ভাড়া চাইলে দিতে চায় না। কন্ডাক্টরের সাথে ঝগড়াঝাঁটি হয় যাত্রীদের।
ভুক্তভোগীদের দাবি, রাজধানীর অন্য কোনো জায়গায় রাতে যানজটের দেখা না মিললেও এই রোডে যানজট থাকবেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট পোহাতে হয় যাত্রীদেরকে। এই নিয়ে বাসযাত্রীদের ক্ষোভেরও শেষ নেই। অভিযোগ আছে, প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়েই বছরের পর বছর রাত ৮টা বাজতেই ট্রান্সপোর্টগুলো মালামাল তুলতে বেশির ভাগ রাস্তা দখল করে ফেলে। তবে এসব কিছু প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এজন্য প্রতিটা গাড়ি আলাদাভাবে চাঁদা দেয়। রাস্তার দুই পাশের ট্রান্সপোর্ট ও যত্রতত্র পরিবহন ঘুরানোর সুযোগ দেয়ার কারণে যানজট তীব্র হচ্ছে। এ এলাকায় রাস্তার দু’পাশে গড়ে উঠেছে- শিমুল ট্রান্সপোর্ট, নরসিংদী মধুরিমা ট্রান্সপোর্ট, ভৈরব ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, আফজাল পার্সেল অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিস, ভিআইপি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, দৈনিক ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিস, এজেআর পার্সেল অ্যান্ড কুরিয়ার সার্ভিস, এআর ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিস, নিউ হোমনা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, সাধনা ট্রান্সপোর্ট, দি যমুনা ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসসহ এ রকম আরো বহু ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড পার্সেল সার্ভিসের দোকান গড়ে উঠেছে। স্থানীয় পথচারীদের অভিযোগ, এরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করেই রাস্তা দখল করে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিকেল হলে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাল আসতে থাকে। মাল কম হলে দোকানে রাখা হয়। বেশি হলে রাস্তায় রাখা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, বিকেল হলে বিভিন্ন গাড়িতে করে মাল এনে রাস্তা ও দোকানের সামনে রাখে। এজন্য কোনো কাস্টমারও আসতে পারে না। এসব মাল রাস্তায় রাখার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়।
কেরানীগঞ্জের ওপারে চুনকুটিয়া চৌরাস্তা থেকে বাবুবাজার সেতু হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত যানজটে ঠাসা। সড়কজুড়ে মালবোঝাই ঠেলাগাড়ি, কাভার্ডভ্যান, লেগুনা, রিকশা, বাস ও ট্রাকের সারি। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও হাসপাতালগামী রোগীসহ দূরপাল্লার যাত্রীরা।
কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে বাবুবাজার লাইনে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, কাভার্ডভ্যান, অটোরিকশা ও দূরপাল্লার বাস বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দুই পাশ দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়েছে। এসব যানবাহন রাস্তায় চলতে গিয়েও নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না। সেতুর দুই পাশে দু’টি করে মোট চারটি সিঁড়ির পাশেই নিয়মিত বাস ও অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। যেখানে-সেখানে গাড়ি থামানোর কারণে যখন-তখন যানজট লেগে যায়। কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ থানা এলাকার চুনকুটিয়া থেকে শুরু করে কদমতলীর গোলচত্বর হয়ে বাবুবাজার, বংশাল, নিমতলা, আনন্দনগর, বঙ্গবাজার, ফুলবাড়িয়া, লক্ষ্মীবাজার, ওয়ারী, মতিঝিলসহ আরো কিছু স্থানে কয়েক হাজার অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যান, ইজিবাইক, রেন্ট এ কার এবং যাত্রীবাহী বাস অবৈধ স্ট্যান্ড বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলাচল করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক ট্রাফিক পুলিশ জানান, যেসব কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এই কারণগুলোর প্রতিকার তারা চাইলেই করতে পারবেন না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা