ইনিংস ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
- জসিম উদ্দিন রানা
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪
টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টিয়ান স্টাবস ও উইয়ান মুল্ডারের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে সাউথ আফ্রিকার পুঁজি ৬ উইকেটে ৫৭৫। একই উইকেটে বাংলাদেশ যখন খেলতে নামল তখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, সাদমান ইসলামদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং অর্ডার। একই পিচে সাউথ আফ্রিকা ব্যাটারদের বিচক্ষণতার পর আরো একবার কাগিসো রাবাদার পেস আগুনে পুড়ল বাংলাদেশ। সেই আগুনে তেজ বাড়িয়েছেন ড্যান প্যাটারসন, কেশভ মহারাজরা।
মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলামের লড়াইয়ে ১৫৯ রান তুলতে পারলেও ফলোঅন এড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং নামা বাংলাদেশের জন্য চিত্রটা ছিল একই। কার আগে কে বিদায় নেবেন এমন প্রতিযোগিতায় থামতে হলো ১৪৩ রানে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান এসেছে দশে নামা পেসার হাসান মাহমুদের ব্যাট থেকে। সাগরিকায় ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে এটাই সবচেয়ে বড় হার টাইগারদের।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফলোঅনে পড়ে আবারো খেলতে নেমে ষষ্ঠ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ড্যান প্যাটারসনের করা প্রথম বলেই ফিরেন সাদমান ইসলাম। অফ স্টাম্প তাক করা বলটি সাদমানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় কিপার কাইল ভেরাইনির গ্লাভসে। দুই রানে জীবন পাওয়া সাদমান করেন ৬ রান।
একটু পর জীবন পান জাকির হাসান। ১ রানে থাকা অবস্থায় স্লিপে তার ক্যাচটি মিস করেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ২৮ রানে দ্বিতীয় ও ২৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেনুরান মুথুসামির অফসাইড স্ট্যাম্পের করা বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয় (১১)। প্রথম ইনিংসে ৮২ রান করা মুমিনুল চারে নেমে ফিরলেন খালি হাতে। কেশভ মহারাজকে ডিপে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুথুসামির হাতে ধরা পড়েন। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬ বারের মতো শূন্য রানে আউট হয়েছেন মুমিনুল।
একটু পর জাকিরের উইকেটও হারায় বাংলাদেশ। চা বিরিততে যাওয়ার আগে আচমকা উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন জাকির। লেংথ পড়তে না পারায় ব্যাট ও প্যাডের মাঝে ফাঁকা থাকায় সেখান দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। উইকেটের পেছনে থাকা ভেরিয়েন্না এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
চা বিরতি থেকে ফিরে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহীম। প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হওয়া ডানহাতি ব্যাটার রানের দেখা পাননি চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও। মুথুসামির ফুল লেংথ ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস এলবিডব্লিউ হন দুই রান করে। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ মহারাজের একটু লাফিয়ে উঠা ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ৩০ গজের ভেতরে থাকা ট্রিস্টিয়ান স্টাবসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রানে। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। মুথুসামির বলে শর্ট লেগে থাকা ডি জর্জির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৩৬ রানে।
তাইজুল ইসলামও দ্রুতই সাজঘরে ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হওয়া অঙ্কন প্রথম ইনিংসে ডাক মেরেছিলেন। এবার অবশ্য ৬৪ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। শেষ দিকে অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংস খেলে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়েছে ১৪৩ রানে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে দিনের শুরুর ভাগেই বিদায় নেন শান্ত। অফ ফর্ম অব্যাহত থাকল তার। এই ইনিংসে করেন ১৭ বলে দু’টি চারে ৯ রান। ঠিক তিন বল পর বিদায় নেন মুশফিকুর রহীমও। পরের ওভারে প্রথম বলে জোড়া আঘাত হানেন রাবাদা। তার শিকার ইনফর্ম মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন প্রোটিয়া এই পেসার। অঙ্কন রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। জাতীয় দলে অভিষেক ইনিংসে মুশফিকের মতোই দুই বলে শূন্য রান করেন তিনি।
দলীয় ৪৮ রানে আট উইকেটের হারানোর পর দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে থাকেন মুমিনুল এবং তাইজুল। দু’জনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শতরান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। ৭৬ বলে হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন মুমিনুল। ৮২ রানে ব্যাটিং করার সময় সেনুরান মুথুসামির বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরেন। ১৫১ রানে নবম উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। আটটি চার ও দু’টি ছক্কায় সাজানো ছিল মুমিনুলের ইনিংস। তাইজুলের সাথে নবম উইকেট জুটিতে ১০৩ রান তোলেন মুমিনুল। একই সাথে বিরল এক রেকর্ডের সাক্ষী হন তিনি। পঞ্চাশ রানের নিচে আট উইকেট যাওয়ার পর এবারই প্রথম নবম উইকেট জুটিতে একশ রানের বেশি তুলতে পেরেছে কোনো দল। শেষ উইকেট হিসেবে ফিরে যাওয়ার আগে ৯৪ বলে ৩০ রান করেন তাইজুল। কেশভ মহারাজকে সামনে হাঁকাতে গিয়ে কট এন্ড বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সাউথ আফ্রিকা (১ম ইনিংস)- ৫৭৫/৬ ডিক্লে (ডি জর্জি ১৭৭, স্টাবস ১০৬, মুল্ডার ১০৫*, মুথুসামি ৭০*, বেডিংহাম ৫৯, তাইজুল ৫/১৯৮)।
বাংলাদেশ (১ম ইনিংস)- ১৫৯/১০ (৪৫.২ ওভার) (মুমিনুল ৮২, তাইজুল ৩০, রাবাদা ৫/৩৭)।
বাংলাদেশ (২য় ইনিংস)- ১৪৩/১০ (৪৩.৪ ওভার) (শান্ত ৩৬, অঙ্কন ২৯, হাসান ৩৮*, কেশব মহারাজ ৫/৫৯, মুথুসামি ৪/৪৫)।
ফল : ইনিংস ও ২৭৩ রানে জয়ী দক্ষিন আফ্রিকা।
ম্যাচ সেরা : টনি ডি জর্জি ১৭৭ রান।
সিরিজ : ২-০ তে সিরিজ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
সিরিজ সেরা : কাগিসো রাবাদা ১৪ উইকেট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা