৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশই

বাংলাদেশ ২ (মনিকা, রিতু) -১ নেপাল (আমিশা)
সাফ ট্রফি হাতে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের বাঁধভাঙা উল্লাসে : বাফুফে -

২৬ অক্টোবর তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে বাফুফের নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়। এই কমিটির জন্য মহিলা সাফের শিরোপাটি ছিল অতি জরুরি। সাবিনা খাতুনদের সেই বার্তা দিতেই নেপালে গেছেন বাফুফের এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়া চার সদস্য। তারা নতুন কমিটিকে এই ট্রফি উপহার হিসেবে দিতে অনুরোধ করেন মহিলা দলকে। সেই অনুরোধ রেখেছে বাংলাদেশ মহিলা দল। ফের নেপালকে ফাইনালে হারিয়ে সাফ শিরোপা ধরে রাখল টাইগ্রেসরা। ২০২২ সালের ফাইনালে এই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল। এবার স্কোর ২-১। এই জয়ের ফলে ফের ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন রুপনা, মাছুরা, রিতু, পর্না চাকমা, মারিয়া এবং তহুরারা।
গতকাল নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলতে নামে ভুটানের বিপক্ষে প্রথম একাদশে একটি পরিবর্তন এনে। সাগরিকার বদলে একাদশে ছোট শামসুন্নাহার। দুই বছর আগের ফাইনালে শামসুন্নাহার ১৩ মিনিটে প্রথম গোল করেছিলেন। গতকাল অবশ্য কোনো গোলই করতে পারেননি। এরপরও বাংলাদেশের ফের নেপাল জয়। তা দুই উপজাতীয় ফুটবলার মনিকা চাকমা এবং রিতু পর্না চাকমার গোলে। চ্যাম্পিয়ন দল আজ দুপুর সোয়া দুইটায় ট্রফি নিয়ে ঢাকায় আসছে।
২০২২ সাফের পর নেপালের বিপক্ষে কালকের ফাইনালের আগ পর্যন্ত তিন ম্যাচের কোনোটিতেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সব ক’টিই ড্র। তবে কাল আর জয় ছাড়া জেতার সুযোগ ছিল না। কারণ ম্যাচ যে ফাইনাল। নির্ধারিত সময়ের খেলা ড্র হলে আশ্রয় নিতে হতো টাইব্রেকারের। এই কৌশলেই সেমিতে ভারতকে হারিয়েছিল নেপাল। তবে পিটার জেমস বাটলার বাহিনী ৯০ মিনিটেই নেপালের সব আশা গুঁড়িয়ে দেয়। হিমালয়ের দেশটিকে ফের হতাশায় ডুবিয়ে ধরে রাখে সাফ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্ব। স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শকের গগন বিদারী আওয়াজেও ভড়কে যায়নি সাবিনারা। অবশ্য এই নেপালের মাঠে স্বাগতিকদের এই বাধা ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের ঘটনা আরো আছে। তাই সেই পুরনো অভ্যাসকে পুঁজি করেই কাল মাঠে নামেন সাফের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। শেষ পর্যন্ত জয়ে তারা এখন আগামী দুই বছরের জন্যই এই শিরোপার মালিক।
বাংলাদেশ শুরু থেকেই চেপে ধরে নেপালি মেয়েদের। বিপক্ষ রক্ষণকর্মীদের ভুলে দুই মিনিটেই গোলের খুব কাছে চলে যায় লাল-সবুজ মেয়েরা। বক্সের বাইরে বলের দখল নিয়েই পোস্টে শট নেন ভারতের বিপক্ষে দু’টি এবং ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা তহুরা খাতুন। কিন্তু তার শট ক্রসবারে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলে তিনি হেড নিলেও তা বিপক্ষ কিপারের হাতে চলে যায়। ফলে শুরুতেই লিড নিতে পারেনি ঢাকা থেকে যাওয়া দলটি। অবশ্য এরপরই ১০ মিনিটে নেপালি দর্শকদের উল্লাসে মাতার উপলক্ষ্য এসেছিল। গোলরক্ষক রুপনা চাকমার হাত ফসকে যাওয়া বল পেয়ে যান আমিশা। এরপর আমিশা গোলে শট নিলেও তা ক্রসবারে প্রতিহত হয়। দুই চান্স মিসের পর নেপাল খেলায় দখল নেয়ার চেষ্টা করে। তবে নিশ্চিত কোনো চান্সই পাচ্ছিল না। এর মধ্যে ৫ মিনিটে বাংলাদেশ লিড নিতে পারেনি মনিকা চাকমার ফাঁকা পোস্টে নেয়া শটবার উঁচিয়ে গেলে।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর ৫১ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বাড়ানো বল তহুরার কাছে যাওয়ার আগেই নেপালি ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে চলে যায় মনিকার কাছে। মনিকা সেই বল ধরে দুই পা এগিয়ে বিপক্ষ ডিফেন্ডারের বাধা টপকে শটে পরাস্ত করেন নেপালের শেষ প্রহরীকে। অবশ্য বাংলাদেশের এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৫৮ মিনিটে নেপালের সমতা সূচক গোল সেই আমিশার কল্যাণে। থ্রু পাস থেকে পাওয়া বল দখলে নিয়ে ডান পায়ের শটে ভেঙে দেন রুপনার প্রতিরোধ। দুই মিনিট পরেই সাবিত্রা ভান্ডারির শট মিস হলে নেপাল এগিয়ে যেতে পারেনি।
৬৭ মিনিটে বাংলাদেশকে হতাশ হতে হয় মারিয়া মান্ডার দূরপাল্লার শট নেপালের গোলরক্ষক অঞ্জিলা সুভা দুর্দান্ত সেভে কর্নার করলে। ৭৭ মিনিটে রিতু পর্নার ক্রসে খুব কাছ থেকেও হেডে গোল করতে পারেনি ছোট শামসুন্নাহার। বল তার ঠিকমতো মাথায় লাগেনি। সতীর্থরা যখন তার ক্রসে গোল করতে পারছিল না তখন ৮০ মিনিটে রিতু নিজেই পোস্টে শট নেন। আসলে সেটি ছিল ক্রস। কিন্তু তা কেটে পোস্টে গেলে নেপালের গোলরক্ষকের হাতে লেগে জালে জড়ায়। এরপর ৯১ মিনিটে সাবিত্রার শট বাংলাদেশ ডিফেন্ডারের গায়ে লাগলে নেপাল পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি তাতে কান দেননি।
৬ মিনিট ইনজুরি টাইমের ৫ম মিনিটে রিতুর ক্রাসে ছোট শামসুন্নাহারের হেড গোলরক্ষক সোজা গেলে তৃতীয় গোল পাওয়া হয়নি। এরপরই রেফারির খেলা শেষের বাঁশি। সে সাথে নেপালের মাঠে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে সাবিনা, রিতু, মনিকা, রুপনাদের উল্লাস।
দেশবাসীকে ট্রফি উৎসর্গ সাবিনার : আবার সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল। নেপালকে হারিয়ে এই ট্রফি ধরে রাখার পর তা দেশবাসীকে উৎসর্গ করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। জানান, এই ট্রফিটা ফুটবলারদের পাশাপাশি দেশের জনগণেরও প্রাপ্য। তারা দোয়া করেছেন বলেই আমাদের ফের ট্রফি নিয়ে উল্লাস। যোগ করেন, দেশের মানুষের সম্মান ধরে রাখতে পেরেছি এতে খুব ভালো লাগছে। সেই সাথে মেয়েরা প্রমাণ করেছে তারা ভালো ফুটবল খেলতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ফুটবল যে অনেক এগিয়েছে তা প্রমাণ করেছে মেয়েরা। বুঝিয়ে দিয়েছে ২০২২ সালের প্রথম শিরোপাটা বাইচান্সে হয়নি।
সাবিনার মতো মারিয়া মান্ডাও এই ট্রফি দেশের জনগণকে উৎসর্গ করলেন। তবে এবার নেপাল কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল বললেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement