৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
অর্থ পাচার ধরার সক্ষমতা বৃদ্ধি

আসছে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের প্রতিনিধিরা

প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ নেবেন ৬০ জন সদস্য
-

দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের পাকড়াও করার সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের একদল প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি প্রাথমিকভাবে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সচিব হিউ ম্যাককুলোকের মাথা থেকে বের হয় সিক্রেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। আব্রাহাম লিংকন মারা যান ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে। সে দিন দুপুরেই সিক্রেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা লিংকনের কাছে বর্ণনা করেন হগ। তার পরের দিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সিক্রেট সার্ভিস। সংক্ষেপে বলা হয় ইউএসএসএস। তবে সিক্রেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ জালিয়াতদের পাকড়াও করা। কিন্তু আব্রাহাম লিংকনের মৃত্যু বদলে দেয় সিক্রেট সার্ভিসের মূল উদ্দেশ্য। এখন তারা অর্থ পাচারকারীদের পাকড়াও ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। সাইবার নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে এই ইউএসএসএস। তাদেরকে কঠোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সিক্রেট সার্ভিসের একজন এজেন্টকে একাই ১০ জনের সমান হয়ে উঠতে হয়। তাই পৃথিবীর অন্য যেকোনো বাহিনী থেকে আলাদা ও কঠিন প্রশিক্ষণের মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেক সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টকে। তাদের ছুড়ে ফেলা হয় তীব্র স্রোতের পানিতে অথবা মুখোমুখি করা হয় ভয়াবহ কোনো বন্দুকযুদ্ধের, যেখানে বেঁচে থাকতে হলে অপরকে হত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তাদের করা গুলিতে মারা যায় না কেউই। বিশেষভাবে তৈরি বুলেট দিয়ে এই প্রশিক্ষণ পর্বটি সম্পন্ন করা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসাবিদ্যাও শেখানো হয় সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে আহত কাউকে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারার দক্ষতা রয়েছে সব সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টের। এমনকি তারা রাষ্ট্রপতির কোথাও যাওয়ার রাস্তা এমনভাবে নির্বাচন করেন, যাতে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতাল যেতে ১০ মিনিট সময় লাগে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বিদেশী এক সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, হাসিনার সহযোগীরা ১৭ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার করেছে। এর মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম একাই সরিয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে এটা প্রাথমিক তথ্য। এ সংখ্যা কয়েক গুণ হবে। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে।
অর্থ পাচারকারীদের পাকড়াও করতে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে এখন ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। বিএফআইইউসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী মাস থেকেই এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এ জন্য ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই ঘোষণা করেন, অর্থ পাচারকারীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়া হবে না। অর্থ পাচারকারীরা কোনোভাবেই যেন পার পেয়ে না যান সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এস আলম, নাসা গ্রুপ, বেক্সিমকোসহ বিভিন্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাদের ব্যক্তি আকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে ওই সব স্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে যাতে যে কোনো উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হবে। পাশাপাশি অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধেও নেয়া হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আর এ জন্যই চৌকস টিম গঠন করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement