হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী শতাধিক অপরাধের অভিযোগ
ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শনে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিদল- হাবিবুর রহমান
- ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০৯, আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৫
ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এ পর্যন্ত শতাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত সব গুমের অভিযোগ তদন্ত চেয়ে ট্রাইব্যুনালে অর্ধশতাধিক আবেদন করা হয়েছে। অপর দিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য ভিক্টিমের পরিবারের পক্ষে আড়াই শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলাও একটি পর্যায়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হবে বলে প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে।
অপর দিকে ট্রাইব্যুনালের পুরাতন ভবনের সংস্কার কাজও দ্রুত শেষ হচ্ছে। সংস্কার শেষে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনে বিচার কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে বলে প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি দলের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন : এদিকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেছেন জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি দল। দুই সদস্যের জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি দল গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। তারা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সাথে বৈঠক করেন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক শাখার প্রধান ররি মুনগোবেনের এবং সংস্থাটির এশিয়া প্যাসিফিক সেকশনের হিউম্যান রাইটস আফিসার লিভিয়া কোসেনজা। তারা বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তাদের ভাবনার বিষয় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সাথে আলোচনা করেছেন।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি দলের আগমনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই বিচার প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘ কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে তারা সে বিষয়ে আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, আমরা জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতা চেয়েছি। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে। আমরা টেকনিকাল সাপর্ট চেয়েছি। প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা চেয়েছি।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের পুরাতন ভবন বিচার কাজের জন্য উপযোগী হবে। আশা করি, দুই সপ্তাহের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৮৫টির বেশি গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার কাছেও কিছু অভিযোগ আলাদাভাবে দায়ের করা হয়েছে। সব মিলে অভিযোগের সংখ্যা একশত এর কাছাকাছি হবে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য ভিক্টিমের পরিবারের পক্ষে থেকে আদালতে এবং থানায় যেসব হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে সেসব মামলার ব্যাপারে তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব অভিযোগ সরাসরি আমাদের কাছে এসেছে। সেগুলোর তদন্ত নিয়ে আমরা প্রথমে কাজ করব। পরবর্তীতে থানায় যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে সেসব মামলার ব্যাপারে নজর দিবো পরে। কারণ অনেকেই আছে এ রকম থানায় মামলা করার পরও আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা বেশি কাজ করব আগে। একটা সময় পরে যখন মনে হবে ওই মামলাগুলো আমাদের দরকার তখন আমরা ওই মামলাগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবো। তবে যেগুলো হাতে আছে সেগুলোর তদন্ত আগে হবে।
এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রথমে ৪৬ জন এবং পরে ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে চিফ প্রসিকিউটর জানান। তিনি বলেন, আইজিপির নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ কাজটি করছেন। এ বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে তারাই বলতে পারবেন। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে আদালতের আদেশ তামিলের বিষয়টিও সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের বিষয় বলে তিনি জানান। রাষ্ট্র যে অর্গানকে ব্যবহার করা দরকার বলে মনে করবেন সেটা করে তারা এটা করবেন বলে তিনি জানান।
গণহত্যার অভিযোগে সাবেক ১২ মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ২০ জনকে হাজির করার নির্দেশ : এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, একজন বিচারপতি, একজন সচিব, পাঁচজন পুলিশ ও এক সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ২০ জনকে গ্রেফতার দেখাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, বিচারপতিসহ ১৪ জনকে আগামী ১৮ নভেম্বর এবং ছয়জন সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাকে ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। রোববার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে বিচার করার জন্য ১৮ নভেম্বর হাজির করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অন্য দিকে গ্রেফতার সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, সাবেক ঢাকা জেলা এসপি আব্দুল্লাহ হিল কাফী, সাভারের ওসি আবুল হাসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, আরাফাত হোসেনকে বিচার করার জন্য ২০ নভেম্বর আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা