হিজবুল্লাহর হামলায় ১০ ইসরাইলি সৈন্য নিহত
ইসরাইলি বিমান হামলায় ঘুমন্ত ৩ সাংবাদিকের প্রাণহানি- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৪
লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ১০ ইসরাইলি সেনাসদস্য নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আলজাজিরার এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবরে বলা হয়, দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এ হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন ইসরাইলি সেনাসদস্য নিহত এবং ২৪ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবরে আরো বলা হয়, এর আগেও ইসরাইলি সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর গুলিতে পাঁচ সেনাসদস্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে নতুন করে আরো পাঁচজন নিহত হলো।
এই পাঁচজন নিহতের বিষয়ে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সদস্যদের সাথে লড়াইয়ের সময় তারা নিহত হয়। এ সময় আরো ১৯ ইসরাইলি রিজার্ভ সেনাসদস্য আহত হয় বলেও জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা সবাই ৮নং আর্মড ব্রিগেডের ৮৯তম ব্যাটালিয়নের রিজার্ভ সেনা ছিলেন। এর মধ্যে মাওরি নামের এক সেনা ব্যাটালিয়নের উপকমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের প্রাথমিক তথ্যে জানিয়েছে, নিহত এসব সেনা দক্ষিণ লেবাননের একটি গ্রামে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় তাদের লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা রকেট ছোড়েন। হামলার মুখে পড়ার সময় ওই সেনাদের কাছে রসদ/অস্ত্র পৌঁছে দিচ্ছিল অন্য সেনারা। প্রতিরক্ষা বাহিনী আরো জানিয়েছে, রসদ গ্রহণের যে মিটিং পয়েন্ট ছিল সেখানে বেশ কয়েকটি রকেট ছোড়ে হিজবুল্লাহ। যার মধ্যে একটি রকেট আঘাত হানে একটি বাড়িতে। যেটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেনারা। যারা রসদ পৌঁছে দিতে গিয়েছিল তাদের মধ্যেও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আহতদের সবাইকে উদ্ধার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল সকালে দক্ষিণ লেবাননে আরেক সেনা আহত হয়েছেন। তাকেও উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, গতকাল যে পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন তার মধ্যে একজনের চাচাতো ভাই গাজায় আটকা আছেন।
এক দিন আগে হিজবুল্লাহ জাানিয়েছিল, তাদের সামরিক বিভাগর যোদ্ধারা দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। বুধবার রাতে প্রকাশিত অভিযানের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুযায়ী, এসব অভিযানে হিজবুল্লাহর মিসাইল, বিমান এবং আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করে এবং দখলদার বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে।
আল-মায়াদিন জানায়, হিজবুল্লাহর অভিযানের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ৭০ জনেরও বেশি সৈন্য নিহত এবং ৬০০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৮টি মেরকাভা ট্যাংক, চারটি সামরিক বুলডোজার, একটি সাঁজোয়া যান, একটি ট্রুপ ক্যারিয়ার এবং তিনটি হার্মেস ৪৫০ ড্রোন এবং একটি হার্মেস ৯০০ ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।
ইসরাইলি বিমান হামলায় ঘুমন্ত ৩ সাংবাদিক নিহত
এ দিকে দক্ষিণ লেবাননের হাসবায়ায় গণমাধ্যমের কর্মীদের ব্যবহৃত অতিথিশালায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ইসরাইলের হামলায় অন্তত তিন সাংবাদিক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার ভোরে এ হামলা হয়। নিহতরা হলেন- ক্যামেরা অপারেটর গাসান নাজ্জার, সংবাদমাধ্যম আল-মায়াদিনের মোহাম্মদ রেজা এবং হিজবুল্লাহর আল-মানারের হয়ে কাজ করা ক্যামেরা অপারেটর উইসাম কাসেম। গণমাধ্যমগুলো আলাদা আলাদা বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে। আলজাজিরা ও টাইমস অব ইসরাইল।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরের মধ্যে এই হামলা গণমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন। সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে ইসরাইল তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। ইসরাইল সাধারণত ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর কথা স্বীকার করে না। লেবাননে এর আগে ইসরাইলের হামলায় রয়টার্সের সাংবাদিক ইসাম আবদুল্লাহসহ পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হন।
হাসবায়া এমন একটি শহর যেখানে মুসলিম ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এর উপকণ্ঠে হামলা হয়েছে; কিন্তু শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে শহরটিতে প্রথম হামলা চালানো হয়। স্কাই নিউজ, আলজাজিরা ও লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যমসহ ছয়টি গণমাধ্যমের অন্তত ১৮ জন সাংবাদিক ওই অতিথিশালায় অবস্থান করছিলেন। “আমরা বিমানটির খুব নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছি। শব্দেই আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। এরপর আমরা ক্ষেপণাস্ত্র দু’টির শব্দ শুনতে পাই,” রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন লেবাননের সংবাদমাধ্যম আলজাদিদের সাংবাদিক মুহাম্মদ ফারহাত।
তিনি আরো বলেন, “বেশ কয়েকটি বাংলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ফুটেজে উল্টে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দেখা গেছে, যার মধ্যে কয়েকটিতে ‘প্রেস’ লেখা রয়েছে।” তিনি জানান, “আমরা প্রায় এক মাস ধরে ওখান থেকে রিপোর্ট করছিলাম, এত দিন কোনো সমস্যা হয়নি। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কিভাবে বেরিয়ে এলাম তা-ও জানি না।” আল-মায়াদিনের পরিচালক ঘাসান বিন জিদ্দো চ্যানেলটির এক্স অ্যাকাউন্টে বলেছেন, এই হামলা ছিল ‘ইচ্ছাকৃত’।
এর এক দিন আগে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে আল-মায়াদিনের একটি কার্যালয়ে হামলা চালায় ইসরাইল। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় একজন নিহত ও এক শিশুসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। বৈরুত কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরাইলি সামরিক অভিযানে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সীমান্তবর্তী ইয়াতার গ্রাম থেকে আহতদের সরিয়ে নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় তিন লেবানিজ সেনা নিহত হয়। তবে এ হামলার ব্যাপারে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গাজা ও লেবাননে হামলায় বেসামরিক হতাহত এড়াতে এবং জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বা লেবাননের সেনাদের বিপন্ন না করতে ইসরাইলের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। হাসপাতাল ও স্কুলে গোলাবর্ষণের জন্য সমালোচিত ইসরাইলের দাবি, তারা হামাস ও হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের প্রাথমিক তদন্তে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত ১২৮ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৩ জন ফিলিস্তিনি, দু’জন ইসরাইলি ও তিনজন লেবাননের নাগরিক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা