২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত ডানা

সকালের মধ্যে পার হতে পারে উপকূল
ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে উত্তাল সাগর -

ঘূর্ণিঝড় ডানা আজ শুক্রবার সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম শেষ করতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ৫৫৫ কিলোমিটার দূরে ছিল ডানা। এ ছাড়া কক্সবাজার বন্দর থেকে গতকাল একই সময়ে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা থেকে ৪০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস বলেছে, ডানা পরিণত হচ্ছে একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এর কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার এবং তা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছুঁতে পারছে না এটি কিন্তু তা সত্ত্বেও উপকূলের মানুষ বাতাসের প্রবল ঝাপটার সম্মুখীন হতে পারে। বাংলাদেশ ভূখণ্ড ছুঁতে পারছে না বলে এতো কাছে থাকার পরও বাংলাদেশের চার সমুদ্র বন্দরের জন্য আবহাওয়া দফতর ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত জারি করেছে। ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দ্বারা আবহাওয়া অফিস বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজ দুর্যোগকবলিত হতে পারে এবং বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে বুঝিয়ে থাকে। ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত জারি হলে বন্দরে বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ডানা শেষ পর্যন্ত দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশে ডানা আঘাত না হানলেও উপলকূলীয় এলাকায় এর কিছু প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে শক্তিশালী বাতাস প্রবাহিত হতে পারে এবং খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে হতে পারে অপেক্ষাকৃত ভারী বৃষ্টি।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজার ও এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ডানার প্রভাবে গতকাল থেকে দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়ে আসছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে। ঢাকা বিভাগের সর্বত্র ও সারাদিনই কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে খেপুপাড়ায় ৯৮ মিলিমিটার। রাজধানীতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬ মিলিমিটার।
পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় গতকাল ভোর রাত থেকেই শুরু হয় থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া।
উপকূলের নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উপজেলার দেলুটি, গড়ইখালী, লস্কর, রাড়ুলী, লতা, গদাইপুর, সোলাদানাসহ ৭ ইউনিয়নের বাসিন্দারা আতঙ্কিত রয়েছেন। তবে ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
ভোলা প্রতিনিধি জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উপকূলীয় জেলা ভোলায়। ডানার প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদী ও সাগর। গতকাল সকাল থেকে উপকূল জুড়ে বৈরীভাব। দুপুর ১২টা থেকে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত রয়েছে উপকূলের মানুষ।
তুলাতলী বাঁধের বাসিন্দা রেহানা ও রাশিদা বলেন, ঝড় আসবে শুনেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও বসতঘর আর গবাদিপশু তো রক্ষা হবে না। এসব নিয়ে চিন্তিত আমরা।
এ দিকে সতর্কতা সঙ্কেত বাড়ায় গত বুধবার বিকেল থেকে পাঁচ রুট এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সব রুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। এতে ভোলার সাথে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ইলিশা ঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রী সালাউদ্দিন ও মোশারেফ বলেন, নদী উত্তাল থাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ, আমরা গন্তব্যে যেতে পারিনি। তবে অপেক্ষায় আছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যেতে পারব।
ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবেলায় আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে। গঠন করা হয়েছে ৯৮টি মেডিক্যাল টিম। এ ছাড়াও নগদ টাকা, শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য এবং চাল মজুদ রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানা’র প্রভাবে বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকাসহ জেলার সর্বত্রই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝে বইছে দমকা হাওয়া। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকবেলায় ও দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য সাতক্ষীরার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: শাহিনুল আলম জানান, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবেলায় উপজেলার সরকারি ১০২টিসহ মোট ১৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুদ রাখা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য দুই হাজার ৯৮০ জন সিপিপি সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার অফিস ও উখিয়া সংবাদদাতা জানায়, কক্সবাজারের ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটিটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে জোয়ারের পানির তোড়ে একটি বার্জের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। জেটি ভেঙে যাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণেও দেখা দিয়েছে আরেক বিপত্তি।
গতকাল সকালে জেটি ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন। তিনি জানান, কী কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক খবরে জানা গেছে, সাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে কিছুটা উত্তাল রয়েছে সাগর। গতরাত ২/৩ টার সময় ছিল পূর্ণ জোয়ার। এ সময় প্রচন্ড ঢেউয়ে জেটির সাথে বাঁধা একটি ছোট বার্জের ধাক্কায় জেটিটি ভেঙে গেছে।
মোংলা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, মোংলা উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে পানি বাড়ায় বেড়িবাঁধ নিয়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বিশেষ করে চাঁদপাই ইউনিয়নের নদী পাড়ের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন।
বৈরী আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল ভ্যানচালকসহ নি¤œ আয়ের মানুষ। উপজেলা জুড়ে বৃষ্টির কারণে কর্মজীবী মানুষ কাজে বের হতে পারেনি। বিশেষ করে দিনমজুর, মিস্ত্রি ও নির্মাণ শ্রমিকরা ঘর থেকে বের হতে পারেনি। রাস্তাঘাটে যানবাহন ও লোক চলাচলও ছিল কম।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সকালে প্রস্তুতি সভা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া শারমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবেলায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কন্ট্রোল রুম খোলা এবং ১০১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন- নৌবাহিনীর রাঙ্গাবালীতে দায়িত্বরত কনটিনজেন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মহসিন কবির মৃধা, রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ এমারৎ হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সৌরভ ঘোষ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অজিত কুমার, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাথী বেগম, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম সোহেল, বেসরকারি সংস্থার ভার্ক সমন্বয়কারী মোহসীন তালুকদার, জাগোনারীর শাহিন আহম্মেদ, সিপিপির ৮ নম্বর ইউনিট টিম লিডার বশির আহম্মেদ ও ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় গতকাল সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। ঝড়ে চাম্বল ও মেহগিনি গাছ পড়ে উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছিটকি নেছারিয়া সিনিয়র মাদরাসার টিন শেড ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলার সদরের বড় কাঁঠালিয়া গ্রামের জেলে আলতাফ হোসেন জমাদ্দারের বসতঘর এবং গাছ পড়ে একই গ্রামের কৃষক আবু হানিফের একটি গরু মারা গেছে।
এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ পালা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে সাতটি ঘর বিধ্বস্ত ও শিশুসহ তিনজন আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘড়চাপা পরে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন- উপজেলার রানীপুর গ্রামের মোসা: রুমা বেগম(২৮), শিশু শামিয়া (৫) ও ইশামনি (২)। আহতদের উদ্ধার করে মির্জাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সকাল থেকেই থেমে থেমে চলে বৃষ্টি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার গাছপালাও উপড়ে পড়েছে।
কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে আয়োজনে গতকাল দুপুরে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবেলার প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত দেবনাথ, উপজেলা মহিলা অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিলা অধিদফতর পিরোজপুরের উপপরিচালক মো: আলতাফ হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সুজন সাহা, উপজেলা প্রকল্প ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, কাউখালী থানার ওসি তদন্ত সুমন সরকার, ফায়ার সার্ভিস ইনচার্জ মো: খলিলুর রহমান, কাউখালী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, আমরাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন, ব্যবসায়ী নেতা শোয়েব সিদ্দিকী, প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াদ মাহমুদ সিকদার প্রমুখ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল মোল্লা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবেলায় কাউখালীতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১০ হাজার লোক আশ্রয় নিতে পারবে। গবাদিপশু রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শুকনো খাবারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে গাছ চাপা পড়ে বরগুনার বেতাগীতে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা সদর ইউনিনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিসমত করুনা আশরাফ আলী হাওলাদার (৫৫) মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল সকাল ১০টার দিকে ছোট মোকামিয়া বাজারে যাওয়ার পথে ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে রাস্তার পাশের চাম্বল গাছ উপড়ে পড়ে চাপা পড়েন। স্বজনরা শুনতে পেয়ে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সায়্যেদ আমারুল বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মৃত ব্যক্তি আশ্রাফ আলী হাওলাদার বিকেল সাড়ে ৪টায় জানাজা পড়ানো হয়েছে এবং পারিবারিক কবরস্থানে আশ্রাফ আলী হাওলাদারের লাশ দাফন করা হয়েছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে গত বুধবার এবং গতকাল বিকেল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ও দাকোপে মৌসুমি সবজি চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। দাকোপে আর কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে কয়রায় মাছের ঘের, আমনেরক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ধসে গেছে। নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সব জায়গা দিয়ে পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হতে পারে।
আমাদের কয়রা সংবাদাতা জানান, সেখানকার আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো: হাসানুল বান্না জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাবে গত দুই দিন ধরে বৃষ্টিপাত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় কয়রায় ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট জোয়ারের পানি বাড়তে পারে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৬ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে এবার আমন আবাদ হয়েছে। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে আমন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া চলছে কুষ্টিয়ায়। তবে দিন বাড়ার সাথে বৃষ্টি বন্ধ হলেও দুপুর থেকে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে তবে কোনো বাতাস নেই। বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষজনকে ঘরের বাইরে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম শাকসবজির বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া মাঠে মাঠে আগাম আমন ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় চাষিরা। অনেক স্থানে ধান কাটার পর মাঠেই পড়ে রয়েছে। আবার অনেক মাঠে ধান কাটার মতো হলেও ঝড় ও বৃষ্টির কারণে না কেটে মাঠেই রেখে দিয়েছে চাষিরা। ভারী বৃষ্টি হলে ধানক্ষেতের পেকে যাওয়া ধানের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে চাষিরা।
ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন রয়েছে। এ দিকে উপজেলার কচা ও পোনানদীর পানি আগের থকে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে উপজেলার মানুষ আজ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইয়াসিন আরাফাত রানা জানান, দুর্যোগকবলিতদের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, চাল ও শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ মজুদ রয়েছে।
হাতিয়া সংবাদদাতা জানান, হাতিয়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি মিল্টন চাকমা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিনিধিরা।
সভায় ডানা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, সিপিপির ১৭৭টি ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকাসহ নৌচলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ৩নং সতর্ক সংকেত দেওয়ার পর থেকে হাতিয়ার সাথে সকল ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া চরাঞ্চলে অবস্থান করা লোকজনকে জরুরি অবস্থায় নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত করে রাখা সিদ্ধান্ত করা হয়।
পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় রাঙ্গাবালী ও পায়রা বন্দরের সর্বত্রই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে মাঝে মধ্যে বইছে দমকা হাওয়া। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।
এ দিকে ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবেলায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে এ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনীর রাঙ্গাবালীতে দায়িত্বরত কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মহসিন কবির মৃধা, রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ এমারৎ হোসেনসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা।
নবনিযুক্ত রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কন্ট্রোল রুম খোলা এবং ১০১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত হয়েছে। এ ছাড়াও দুর্যোগ চলাকালীন ও পরবর্তী সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য সিপিপিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাত ভর গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বাতাসের চাপ কিছুটা বেড়েছে। নদ-নদীর পানির উচ্চতাও কিছুটা বেড়েছে। এ দিকে কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড় দানা বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সঙ্গে করছে আবহাওয়া অফিস। তাই পটুয়াখালীর পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সব মাছ ধরা ট্রলারগুলোকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। নদী তীরের মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে আশ্রয়ের জন্য জেলায় ৮২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৬২টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৩৭টি মেডিক্যাল টিম, ফায়ার সার্ভিসের আটটি উদ্ধারকারী দল।


আরো সংবাদ



premium cement