২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ইরাক ও সিরিয়ায় পাল্টা হামলা

তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা বিশ্ব নেতাদের

-

তুরস্কের আকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্প (টিএআই) সদর দফতরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। বুধবার রাজধানী আঙ্কারায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পাঁচজন নিহত ও ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের নেতারা এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। টিআরটি ওয়ার্ল্ড, সিএনএন ও বিবিসি।
তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমি তুর্কি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের স্থাপনায় এই জঘন্য হামলার নিন্দা জানাই। তার পাশাপাশি রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ এবং আঞ্চলিক জোটের নেতারাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে আঙ্কারার এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। সম্মেলনে তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে পুতিন বলেছেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট এবং সহকর্মীরা কাজানে আপনাদের স্বাগত জানাতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। কিন্তু আমরা কাজ শুরু করার আগে আঙ্কারায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে চাই। কেননা মিডিয়াতে সেখানে সন্ত্রাসী হামলার খবর জানানো হয়েছে।
এই সন্ত্রাসী হামলায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধুপ্রতিম দেশ তুরস্কের পাশে রয়েছে এবং সেখানে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। হামলায় হতাহত এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রয়েছে। নিজের এক্সের এক পোস্টে এসব বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরিবিও ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের প্রার্থনা ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য। আমরা এই কঠিন সময়ে তুর্কিয়ে জনগণের সাথেই আছি।
ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আমরা সব সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানাই। ন্যাটো তার মিত্র দেশ তুর্কিয়ের সাথেই রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ন্যাটো প্রধান। সামরিক এই জোট আঙ্কারার ওই ঘটনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে এক্সের এক পোস্টে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, আঙ্কারায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ইইউ তুর্কিয়ে জনগণের পাশে আছে বলেও জানিয়েছেন জোসেফ।
তুরস্কে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, আঙ্কারায় সন্ত্রাসী হামলা একটি গুরুতর বিষয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বিশেষ করে যারা তাদের পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে আঙ্কারায় অবস্থিত ফরাসি নাগরিকদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এক্সের বার্তায় বলেছেন, আঙ্কারায় নিহত ও আহতদের খবরে আমি হতবাক। আমরা যেকোনো সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানাই এবং আমাদের অংশীদার তুর্কির পাশে দাঁড়াচ্ছি। ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফও প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি তার সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নেদারল্যান্ডস সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে। আমরা তুর্কিয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারও এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আমাদের সমাজে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তুরস্কে অবস্থিত কানাডার দূতাবাসও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে আমরা তুরস্কের সাথে আছি। এই কঠিন মুহূর্তে আমরা একে অপরের বন্ধু এবং মিত্র।
ইরাক ও সিরিয়ার কুর্দি এলাকায় পাল্টা হামলা : আঙ্কারার কাছে হামলার পর কুর্দিশ ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) দায়ী করে উত্তর ইরাক এবং সিরিয়ায় তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু হামলার কথা জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরাক ও সিরিয়ায় কুর্দিদের মোট ৩২টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। হামলার বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘বেআইনি সংগঠন কুর্দিশ ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) সম্ভবত এই কাজ করেছে আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই আমরা বলতে পারব, কোন সংগঠন এই কাজ করেছে। কিন্তু যেভাবে এই আক্রমণ হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, এটা পিকেকের কাজ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া বলেছেন, ‘দুই হামলাকারী, একজন নারী এবং একজন পুরুষকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এই হামলায় সম্ভবত পিকেকে জড়িত ছিল।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলেরও পিকেকে-কেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আগেও পিকেকে দুর্বৃত্তদের প্রাপ্য শাস্তি দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের হুঁশ হয়নি। শেষ সন্ত্রাসীকে নিকাশ করা পর্যন্ত আমরা তাদের পিছু ছাড়ব না।’
তুর্কি সীমান্তের কাছে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় শক্তিশালী কুর্দি উপস্থিতি নিয়েও তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে অসন্তুষ্ট ছিল। ২০১৯ সালে তুরস্কের সীমান্ত থেকে কুর্দি বাহিনীকে দূরে ঠেলে দেয়ার লক্ষ্যে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় একটি পরিকল্পিত সামরিক আক্রমণ শুরু করে।
তুর্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের সদর দফতরে (টিএআই) তুরস্কের মহাকাশ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। বাণিজ্যিক ও সামরিক ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন বিমানের নকশা, উন্নয়ন এবং তৈরি করে থাকে। এটি মার্কিন ডিজাইন করা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের লাইসেন্সপ্রাপ্ত নির্মাতা হিসেবে ন্যাটো সদস্য কর্তৃক মনোনীত কোম্পানি। টিএআই তুর্কিয়ে সামরিক বাহিনীর জন্য পুরনো বিমানের আধুনিকীকরণেও ভূমিকা পালন করে। ফার্মের দুই প্রধান মালিক তুর্কিয়ে সশস্ত্রবাহিনী এবং তুরস্কের সরকারের একটি বেসামরিক বাহিনী। তাদের কাজ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করা এবং সামরিক ক্রয় পরিচালনা করা।


আরো সংবাদ



premium cement