২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বিএনপি

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ শেষে ব্রিফিং করেন বিএনপির নেতারা : নয়া দিগন্ত -

হঠাৎ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের ইস্যুকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, যে প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতিকে সরানোর দাবি তোলা হয়েছে, তাতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হতে পারে। ফলে কোনোভাবেই দেশে যাতে নতুন করে কোনো সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর গতকাল বুধবার দলটি এ স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গতকাল সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা দলের অবস্থান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান। রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পর এখন এই প্রক্রিয়া কতদূর এগোয় তা পর্যবেক্ষণ করবে দলটি।
বিএনপির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রমের ওপর বিশ্লেষণ করেছে দলটি। দলের নেতারা মনে করেন, যেভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেটিই নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর পরপরই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি, বঙ্গভবন ঘেরাওসহ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় সেই সন্দেহ আরো বাড়িয়েছে। দলের নেতারা মনে করছেন, পুরো প্রক্রিয়া নিয়েই দুরভিসন্ধি আছে।
দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে সরানোর পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়া কি না তা নিয়ে ভাবছেন তারা। কারণ, সরকারের বক্তব্যে সংসদ নির্বাচনের কথা স্পষ্ট না হওয়াতে নানা ধরনের আলোচনা আছে। তা ছাড়া আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ আছে কি না, সেই প্রশ্নও আছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এখন সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকজন নেতার সাথে আলোচনা করে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে রাষ্ট্রপতি কোন প্রেক্ষাপটে কতটা সিরিয়ালি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তাও বোঝার চেষ্টা করছেন তারা। তবে দলের নেতাদের প্রায় সবাই একমত যে, এখন রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা ঠিক হবে না।
গতকাল দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হোক, সেটি তাদের কাছে কাম্য নয়। রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি করতে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতি একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমে শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সঙ্কটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সঙ্কট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রের উত্তরণের পথটা বিলম্বিত হয় বাধাগ্রস্ত হয় বা কণ্টকাকীর্ণ হয় তা জাতির কাম্য নয়। সুতরাং পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা যাতে কোনো রকমের ষড়যন্ত্র বা এখানে অন্য কিছুর পাঁয়তারা না করতে পারে সে জন্য আমরা সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই এই সব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করব।
আপনারা রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ বা অপসারণ চান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সঙ্কট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করবে যেটা জাতির কাম্য নয়।
রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে নানা আলোচনার মধ্যে গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনুসের সাথে বৈঠক করেন বিএনপির তিন নেতা। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয়। পরে সাংবাদিকদের নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দীর্ঘ দিন লড়াই করে বহু সাথীর রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি এই পরিবর্তন সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে আমাদের জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করা দরকার। এখানে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণিপেশাসহ ছাত্রদের সংগঠনের সবার একটা দৃঢ়তর ঐক্য গড়ে তোলা দরকার, যাতে কেউ কোনোভাবে দেশে কোনো নতুন করে সাংবিধানিক কিংবা রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে না পারে এই ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল আকাক্সক্ষা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।’ বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা এটাও আলোচনা করেছি যে, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনো সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টির অপপ্রয়াস করে তাহলে আমরা গণতন্ত্রকামী এবং আন্দোলরত যেসব রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবেই সেটি মোকাবেলা করব।’
রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশে যাতে কোনো রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সবার খেয়াল রাখার কথা হয়েছে এবং সেটি যদি কেউ করতে চায় তাহলে আমরা সবাই মিলে সেটি মোকাবেলা করব।’


আরো সংবাদ



premium cement
গোলাম আযমকে বাংলাদেশের মানুষ মুকুটহীন রাজা বানিয়েছে : আযমী ঢাবিতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, দুই ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ তুরস্কে প্রতিরক্ষা সংস্থায় হামলা : নিহত ৪ আইবিএ’র সাবেক পরিচালকসহ আটজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আবদুল্লাহ হত্যা মামলা থেকে শ্রমিক লীগ নেতার নাম বাদ দিতে আবেদন সমুদ্র গবেষণায় সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগে উদ্বেগ ইসরাইল ব্যর্থ হয়েছে : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে মধ্যরাতে নোবিপ্রবিতে আনন্দ মিছিল বিএনপির পর জামায়াতের রিভিউ আবেদন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করায় ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের আনন্দ মিছিল প্রধান উপদেষ্টার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাক্ষাৎ

সকল