রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার রোধে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:৫৬
রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বিশেষ তদারকি জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ থেকে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার ভিত্তিতে সোনালী ব্যাংককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জরিমানার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পরিশোধের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পরই জানিয়েছিলেন, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়া হবে না। এ ঘোষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। কারণ আগের গভর্নরের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। এস আলম, সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেয়া হতো না। এ কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাজের স্পৃহা কমে গিয়েছিল। বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেযার পর পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অর্থ পাচারকারী শনাক্ত করতে ব্যাংকগুলোতে তদারকি জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হতে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ থেকে তদন্ত পরিচালনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন হতে দেখা যায়, সোনালী ব্যাংকের খুলনার দৌলতপুর শাখা ও ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখা চারটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান (এমআই ট্রেডিং, মাস্টার ইন্টারন্যাশনাল, এয়ার বাংলা, জোবায়ের ট্রেডিং ও আল-ফাহাদ ট্রেড লাইন্স) প্রতিষ্ঠানের গার্মেন্ট পণ্য রফতানি কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া যায়। সোনালী ব্যাংকের ঢাকার অফিস শাখার গ্রাহক মাস্টার ইন্টারন্যাশনাল কৃষিপণ্য রফতানি করেছে এবং রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক মর্মে পরিলক্ষিত হয়। অবশিষ্ট চারটি (এমআই ট্রেডিং, এয়ার বাংলা, জোবায়ের ট্রেডিং ও আল-ফাহাদ ট্রেড লাইন্স) প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ১৪২টি, ১০টি, ২৬টি, ২০টি ইনভয়েসের মাধ্যমে চার লাখ ৯১ হাজার ২৮২ মার্কিন ডলার, ৩৮ হাজার ২৮৪ মার্কিন ডলার, ২ লাখ ৭৫ হাজার ১১৪ মার্কিন ডলার, ২ লাখ ৭৫ হাজার ১১৪ মার্কিন ডলার ও তিন লাখ ৪০ হাজার ৪১১ মার্কিন ডলারের রফতানি উল্লেখ করেছে।
আলোচ্য চারটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রতি পিস টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্রাউজার ধরনের বহুবিধ গার্মেন্ট পণ্য ০.১২ থেকে ১.১৫ মার্কিন ডলারে রফতানি করেছে, যা তৎকালীন ইউনিটপ্রতি ডলার মূল্য বিবেচনা করলে দাঁড়ায় ১০ থেকে ৯৮ টাকা এবং প্রতি পিস টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্রাউজার ইত্যাদির ওজন দেখানো হয় ১৪০ থেকে ১২৩৩ গ্রাম, যা স্পষ্টত আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার শিপমেন্ট। সোনালী ব্যাংকের দৌলতপুর শাখার গ্রাহক এমআই ট্রেডিং গত বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত একই ঠিকানায় একাধিক ইনভয়েস ইস্যু করে। অর্থাৎ মাল্টিপল ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রফতানি করেছে। সোনালী ব্যাংকের দৌলতপুর শাখার গ্রাহক এমআই ট্রেডিং, ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক জোবায়ের ট্রেডিং, এয়ার বাংলা ও আল-ফাহাদ ট্রেড লাইন্স ব্যবসায়ী ভিত্তিক মানি লন্ডারিংয়ের কৌশলগুলো প্রয়োগ করে রফতানি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এমআই ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েজিং, ওভার শিপমেন্ট ও মাল্টি ইনভয়েজিংয়ের মাধ্যমে রফতানি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আলোচ্য কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের আলোচ্য শাখাগুলো কোনো প্রকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাখিল করেনি। এর দায়ে সোনালী ব্যাংককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৬ অক্টোবর এ সংক্রান্ত চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনালী ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বলে সোনালী ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা