২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
হাসিনার পদত্যাগপত্র প্রাপ্তি প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা

এটি মিথ্যাচার, রাষ্ট্রপতির শপথ লঙ্ঘনের শামিল

-

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে বললেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি, এটি মিথ্যাচার, উনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ উনি নিজেই গত ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে মতামত বা রেফারেন্স জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের অন্য সব বিচারপতি মিলে একটা মতামত প্রদান করেন, যার প্রথম লাইনটি হচ্ছে, ‘দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন...।’ তিনি বলেন, এই রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দফতরে পাঠাই। রাষ্ট্রপতি এ অভিমত দেখেন এবং নেন। এর পর তিনি নিজে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের ভাষণ, এর পরের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত তিনি (রাষ্ট্রপতি) পুরো জাতির কাছে বিভিন্নভাবে বার বার নিশ্চিত করেছেন এবং সুনিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েছেন। আজ যদি প্রায় আড়াই মাস পর তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, তাহলে এটি এক ধরনের স্ব-বিরোধিতা হয়, শপথ লঙ্ঘন হয় এবং তার এ পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা জানি, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, আপনার যদি শারীরিক, মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকতে পারেন কি না, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আমাদের সংবিধানে রয়েছে। স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনো সুযোগ নেই। যদি তিনি এ বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তার রাষ্ট্রপতির পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, তা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে।
পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রের কাছে দেখাতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছেই পদত্যাগ করেন। সেটি রাষ্ট্রপতির দফতরেই থাকার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন পদত্যাগপত্র নিয়েছেন, এখন বলছেন নেননি। তিনি পদত্যাগপত্র কী করেছেন, সেটি তাকেই জিজ্ঞেস করুন।
রাষ্ট্রপতির এ ধরনের কথা বলার পেছনে কোনো কারণ আছে বলে আপনি মনে করেন কি নাÑ জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি এখানে অনুমান করতে আসিনি এবং অনুমানের জায়গায় নেই। তবে এ নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে। আজ যখন দেখি পতিত ফ্যাসিস্ট মাথা চাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর বিভিন্ন আয়োজন করছে তখন হঠাৎ করে তিনি আড়াই মাস পর এ কথা বললেন কেনÑ এ নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। আসা খুব স্বাভাবিক। এত দিন পর এ ধরনের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি পদত্যাগপত্র কী করেছেন, সে প্রশ্ন রাখতে পারেন।
এ দিকে গতকাল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন তাকে বলেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে তার কাছে এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। কথোপকথনটি গত শনিবার পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়। এরপর নতুন করে আলোচনায় আসে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়টি।
পদত্যাগপত্র ইস্যুতে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি মীমাংসিত এবং এ বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন।
গতকাল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক প্রেস রিলিজে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কার্যালয়ের উপপ্রেস সচিব শিপলু জামানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এই মতামত দেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মীমাংসিত এ বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাষ্ট্রপতি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আপিল বিভাগের ওই স্পেশাল রেফারেন্সে বলা হয়েছিল, ‘দেশের বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি গত ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করা সম্ভবপর নয়।’ এতে আরো বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ৮ আগস্টের একটি চিঠিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত যাচনা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করা উচিত-জয়নুল আবেদীন : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছেন যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এ ভাষণ সারা দেশের মানুষ শুনেছে। রাষ্ট্রপতি নিজে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ পড়িয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই। আমি বলব, রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের দুই মাস পর বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি অসত্য বলেছেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, এই সরকার গঠনের আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বৈধতা নেয়া হয়েছে। তাই পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ নাও করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার কোনো সঙ্কট নেই।
জয়নুল আবেদীন বলেন, যেহেতু রাষ্ট্রপতির পদে থেকে তিনি অসত্য কথা বলেছেন, তাই দেশের মানুষ মনে করেন তার পদত্যাগ করা উচিত।
সাক্ষাৎকারে যে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি : মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন মন্তব্য করেন, তিনি শুনেছেন যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এসংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। সাক্ষাৎকারটি গত শনিবার পত্রিকাটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়।
মতিউর রহমান চৌধুরীর মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র যদি সত্যিই জমা দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে সেটির অনুলিপি কারো না কারো কাছে থাকার কথা। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান চালালেও এর খোঁজ কেউ দিতে পারেনি তাকে। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও যোগাযোগ করা হয়েছে, যেখানে সাধারণত প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি। তাই শেষমেশ রাষ্ট্রপতির কাছেই সরাসরি এর উত্তর জানার সুযোগ মেলে।
৫ আগস্ট ছাত্র-আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সংবিধানের ৫৭(ক) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, তার কাছে শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র বা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রমাণ পৌঁছায়নি।
রাষ্ট্রপতির ভাষ্যে, ‘আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়তো তার সময় হয়নি।’ কথোপকথনের সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বঙ্গভবনে ফোন আসে, তখন বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের জন্য আসবেন। এরপরই বঙ্গভবনে প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে আরেকটি ফোন আসে যে তিনি (শেখ হাসিনা) আসছেন না।
তখনকার অস্থির সময়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চার দিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। একপর্যায়ে শুনলাম তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন, তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর।’ তিনি বলেন, ‘সবকিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো, তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি।’
মতিউর রহমান চৌধুরীর সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এবং এটাই সত্য। তবু এই প্রশ্নটি যাতে আর কখনো না ওঠে, তা নিশ্চিত করতে আমি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছি।’
রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট এ সম্পর্কে তাদের মতামত দেন। তাতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন।
‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, ‘পালিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন শেখ হাসিনা। বলেছিলেন, দীর্ঘ নয়, অল্প সময় কথা বলবেন তিনি। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সেনাপ্রধানের অনাগ্রহে সে সুযোগ পাননি শেখ হাসিনা। তখন তাকে বলা হয়, চার দিকে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। সবাই মারমুখী। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা গণভবনে পৌঁছে যেতে পারে। তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাকে সে সুযোগ দেয়া যাবে না। হাসিনা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। বক্তৃতার একটি খসড়া তৈরি করেছিলেন তিনি।’
‘নানা সূত্রে জানা যায়, এতে তিনি বলতে চেয়েছিলেন, তার ইচ্ছায় নয়, বলপূর্বক তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। কারা এবং কোন বিদেশী শক্তি তার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে, এটাও তিনি দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। তার শাসনকালে দেশের কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তারও বয়ান ছিল। সকাল থেকে দুপুর, এ সময় নানাভাবে দরকষাকষিও চলছিল। বারবার ফোন আসছিল নয়াদিল্লি থেকে। বলা হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকার তরফে দিল্লিকে বলা হয়েছিল তারা যেন বিমান পাঠিয়ে হাসিনাকে নিয়ে যান। সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি। এরপর বাংলাদেশের উদ্যোগে বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০ বিমানে তাকে দিল্লি পাঠানো হয়। হাসিনাকে বহনকারী বিমানে আরো দু’জন ছিলেন। তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী।’
উৎখাত করা হয়েছে, পদত্যাগপত্রের ভূমিকা নেই-হাসনাত আব্দুল্লাহ : এ দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে; একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।’ গতকাল সোমবার দুপুরে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই- রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের পর এই স্ট্যাটাস দেন তিনি।
ঢাবিতে বিক্ষোভ
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংবিধান মানি না। হাসিনাকে এ দেশে আসতে হবে, বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুনর্বাসন নয়, তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে। (রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন) চুপ্পু সাহেব, এখনও সময় আছে বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ দেখুন।
সোমবার রাত ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জড়িতদের বিচার ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুললো ধীর গতিতে যমুনার নদী ভাঙন প্রকল্প, নদীগর্ভে ২ শতাধিক বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কিভাবে কাজ করে ব্যারিস্টার সুমনের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ ডুয়েটের নতুন ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বকেয়া মজুরির দাবিতে চাশ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি আওয়ামী লীগ কি সত্যিই আগরতলায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে? সিলেটে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল ফতুল্লায় কারখানায় আগুন, পুড়ল ২ লাখ টি-শার্ট মিরপুরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো বাংলাদেশ! অস্টিওপোরোসিস : যেভাবে ক্ষতি করে 'নীরব' ঘাতক!

সকল