২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হত্যা ও উচ্ছেদের মাধ্যমে গাজাকে ধ্বংস করছে ইসরাইল : জাতিসঙ্ঘ

-

- শীর্ষ ইসরাইলি কমান্ডার নিহত
- গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে ইসরাইল
- যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় আবারো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

অস্তিত্ব সঙ্কটে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। একই সাথে গাজার উত্তরাঞ্চলে হত্যা ও উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ইসরাইল নির্মূল করছে বলেও উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। এ খবর জানিয়েছে আলজাজিরা।
গাজার জাবালিয়া, বেইত হানুন ও বেইত লাহিয়া এলাকায় থাকা জনসাধারণকে নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত জাতিসঙ্ঘ। গাজা সরকার পরিচালিত গণমাধ্যমের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ হামলায় সেখানকার সম্পূর্ণ একটি আবাসিক ব্লক মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৭ জন। এ হামলার কয়েক দিন আগে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য আংশিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল তিনটি হাসপাতাল। কিন্তু ইসরাইলি হামলায় সেগুলো একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজায় পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে শীর্ষ ইসরাইলি কমান্ডার নিহত : ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ৪০১তম আর্মার্ড ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল এহসান দাকসা উত্তর গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন। রোববার উত্তর গাজায় লড়াইয়ের সময় তিনি নিহত হন। দেশটির সামরিক বাহিনী তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের দ্রুজ অধ্যুষিত শহর দালিয়াত আল-কারমেলের বাসিন্দা দাকসা (৪১) গাজার যুদ্ধে নিহত ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে ছয়জন আইডিএফ কর্নেল ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন ৭ অক্টোবরের আক্রমণের সময় নিহত হন। দাকসার মৃত্যুর বিষয়ে আইডিএফের একটি তদন্তে দেখা গেছে, হামাসের বিরুদ্ধে চলমান আক্রমণের অংশ হিসেবে জাবালিয়াতে তারা অভিযানে ছিল। প্রাণ হারানোর আগে তিনি ও আরো কয়েকজন কর্মকর্তা একটি ট্যাংকের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তখন একটি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটে। তদন্ত অনুসারে, দকসা ব্রিগেডের ৫২তম ব্যাটালিয়নের কমান্ডার এবং অন্য দুই অফিসার জাবালিয়াতে তাদের ট্যাংক থেকে বেরিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে কয়েক মিটার হেঁটে যান। সাইটটিতে বিস্ফোরক পুঁতে রাখা হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই দাকসার মৃত্যু হয় এবং অন্য দুই অফিসার আহত হন। দাকসা গত জুনে ৪০১তম ব্রিগেডের দায়িত্ব নেন দাকসা। দাকসার মৃত্যুর পর গতকাল রোববার আইডিএফ ১৬২তম ডিভিশনের ডেপুটি হেড কর্নেল মেয়ার বিডারম্যানকে ৪০১তম ব্রিগেডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। দাকসার নিজ শহর দালিয়াত আল-কারমেলের মেয়র রফিক হালাবি তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। হালাবি এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, একজন সাহসী কমান্ডার, বীর যোদ্ধা ও দেশের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এখন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি, যিনি যুদ্ধের শুরু থেকে যুদ্ধ করে গেছেন। গাজা উপত্যকায় এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৪৭ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ৪ হাজার ৯৬৯ জন। গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪২ হাজার ৬০৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরো ৯৯ হাজার ৭৯৫ জন।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসলীলা : চলমান উত্তেজনার মধ্যে এবার ফিলিস্তিনের গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইল। রোববার গাজার সিভিল ডিফেন্স এ তথ্য জানিয়েছে। হামলায় উত্তর গাজার বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস করেছে ইসরাইল। মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে বলেছেন, ইসরাইলি হামলার লক্ষ্য উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করা এবং ভবনগুলো ধ্বংস করে এলাকা খালি করা। বাসাল আরো বলেন, উত্তর অঞ্চলে তীব্র ইসরাইলি বোমাবর্ষণের কারণে কয়েক ডজন শহীদের মৃতদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে, যা এই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয়কে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। তারা জাতিগত নির্মূল এবং জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের ধ্বংস করতে চাইছে।
যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় আবারো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী : এ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গতকাল সোমবার মধ্যপ্রাচ্যে সফরে গেছেন। সেখানে তিনি গাজা যুদ্ধের অবসান এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে আঞ্চলিক নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনাওয়ারের হত্যাকাণ্ডের পর আবারো যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে জোর দিচ্ছে ওয়াশিংটন। ব্লিঙ্কেনের সফর শুরু হচ্ছে ইসরাইল থেকে। সেখানে তিনি আঞ্চলিক নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। আলোচনার বিষয়বস্তু গাজা যুদ্ধের অবসান এবং ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য ও ওষুধসহ জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা। গাজার পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথও খোঁজা হবে এই বৈঠকগুলোর মাধ্যমে। তবে ব্লিকেন আর কোন দেশে যাবেন, তা নিশ্চিত করা হয়নি।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ পশ্চিমা নেতারা চান দ্রুত এই সঙ্ঘাতের অবসান হোক। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহু হয়তো বাইডেন প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। কারণ তার সাথে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।
গাজায় বর্তমানে মারাত্মক মানবিক সঙ্কট চলছে। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাবে মানুষ বিপর্যস্ত। কয়েকটি হাসপাতাল এখনো আংশিকভাবে কাজ করছে, তবে সেগুলোয় রোগীর সংখ্যা সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। রয়টার্স জানায়, গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ বার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার এবারের সফরও কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এই সফর যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে এবং সঙ্ঘাত-পরবর্তী সময়ে গাজার পুনর্গঠনের কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে সহায়ক হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুললো ধীর গতিতে যমুনার নদী ভাঙন প্রকল্প, নদীগর্ভে ২ শতাধিক বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কিভাবে কাজ করে ব্যারিস্টার সুমনের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ ডুয়েটের নতুন ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বকেয়া মজুরির দাবিতে চাশ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি আওয়ামী লীগ কি সত্যিই আগরতলায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে? সিলেটে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল ফতুল্লায় কারখানায় আগুন, পুড়ল ২ লাখ টি-শার্ট মিরপুরে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তো বাংলাদেশ! অস্টিওপোরোসিস : যেভাবে ক্ষতি করে 'নীরব' ঘাতক!

সকল