২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
আলোচনায় সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন

তিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক জামায়াতের

-

বাংলাদেশে নিযুক্ত তিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর গুলশানস্থ নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের বাসায় গতকাল সকালে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন ছাড়াও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রেক্স মোলার ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাক্স উইক্স অংশ নেন। এ সময় নরওয়ের ডেপুটি হেড অব মিশন মারিয়ান রাবে ন্যাভেলসরুডও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আমির ডা: শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো: সেলিম উদ্দিন।
জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ডেনমার্ক ও সুইডেনের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন পদ্ধতি এই আলোচনায় স্থান পায়। বর্তমানে নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি বিদ্যমান থাকায় এ ব্যাপারে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষের প্রতিবাদ : গতকাল প্রথম আলো পত্রিকার শেষ পাতায় ‘অস্ত্র উঁচিয়ে চাঁদা দাবি, ছোড়েন গুলি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির অংশ বিশেষের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী শাখা। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রতিবেদনটির একটি কলামে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ‘জামায়াত-শিবির ক্যাডার’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। অথচ জামায়াত সংগঠন হিসেবে এই ধরণের সন্ত্রাসী এবং তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সবসময় অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। উপরন্তু সংবাদে উল্লেখিত সন্ত্রাসী কোনোকালেই কোনো পর্যায়েই জামায়াত-শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল না। আমরা মনে করি ওই প্রতিবেদনটিতে শব্দের ভুল চয়ন ও ব্যবহারের কারণে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো ধরনের সন্ত্রাসীর সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোন প্রকারের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং সবধরনের সন্ত্রাসের নির্মূলের পক্ষে আমাদের অবস্থান। এমন ভিত্তিহীন অবান্তর সংবাদের জন্য আমরা চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শবাদী ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী সংগঠন। জামায়াতের সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। উপরন্তু সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতাকে জামায়াতে ইসলামী মনে প্রাণে ঘৃণা করে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সামিট : গতকাল সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ‘ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সামিট ২০২৪ ইস্তাম্বুল’ শিরোনামে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইফসু) কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এ কনফারেন্সে ব্রিটেন, আমেরিকা, মিসর, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪৮টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ এ কনফারেন্সে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পক্ষে বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাংলাদেশের ছাত্র-যুবকরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ যুবসমাজের গভীর দেশপ্রেম ও চরম সাহসিকতা ফুটে উঠেছে। তারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, জালিম শাসক ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কিভাবে বিজয়ী হতে হয়, কিভাবে মুক্তি সংগ্রাম করতে হয়। মূলত বাংলাদেশের ছাত্র-যুবকরাই ছিল এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। তাদের ত্যাগ-কোরবানি ও রক্তের বিনিময়েই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, আজকের এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা আশা প্রকাশ করছি যে, বিশ্বের মুসলিম তরুণ, যুবক ও ছাত্রসমাজ ইসলামের দাওয়াত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহসী ভূমিকা পালন করবে। তারা বিশ্বের বুকে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিবে এবং সব ধরনের ফ্যাসিবাদী ও অত্যাচারী জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করবে। তারা সব অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ছাত্র-যুবকরা বিশ্বের বুকে এই উদাহরণ পেশ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণবিপ্লবে রাজনৈতিক দলের একটা ভূমিকা থাকলেও ছাত্র-যুবকদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই এই আন্দোলন সফল হতে পেরেছে। বাংলাদেশের এই পরিবর্তন দুনিয়ার জন্য একটি শিক্ষা। মুসলিম যুবকদেরকে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা বাড়াতে হবে। এই লক্ষ্যে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, মিডিয়া, আইটিসহ সব ক্ষেত্রে মুসলিম তরুণ যুবকদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, ইফসু যুদ্ধ-বিগ্রহে নিমজ্জিত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি মনে করি, এই লক্ষ্যে ইফসু বিশ্বে মুসলিম যুবকদের সংগঠিত করে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে ইফসোর মাধ্যমে একদল বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তৈরি হবে এবং তারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
ইফসু সেক্রেটারি জেনারেল ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন, ক্ষমতাসীন একে পার্টির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইয়াসিন আকতার, ইফসুর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সুদানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ড. মুস্তাফা উসমান ইসমাইল, তিউনিসিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রফিক আব্দুস সালাম, পাকিস্তানের রেফাহ ইউনিভার্সিটির রেক্টর প্রফেসর ড. আনিস আহমাদ, আমেরিকান ইকসা প্রেসিডেন্ট ড. মোহসিন আনসারি, তুরস্কের রেফাহ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান দোয়ান বেকিন এমপি, মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন ইউকের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ, মালয়েশিয়ার সিনেটর ও আমানা পার্টির নেতা হাসবি মুদা, তুরস্কের আনাতালিয়া ইউথ প্রেসিডেন্ট সালিহ তুরান, পাকিস্তান জামায়াতের আন্তর্জাতিক সম্পাদক আসিফ লুকমান কাজি, মুসলিম ব্রাদারহুড কেন্দ্রীয় নেতা ডা: মোস্তফা তুলবা, জামায়াতে ইসলামী ইন্ডিয়ার ন্যাশনাল সেক্রেটারি সোহেল কেকে, লেবানন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রফেসর আজ্জাম আল আইয়ুবি, আবিম প্রেসিডেন্ট আহমেদ ফাহমি প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement