২১ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩০, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
মিরপুরে ১ম টেস্ট শুরু আজ

জয়েই ফোকাস বাংলাদেশের

-

৯ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের সফরে ৩ সংস্করণের সিরিজ খেলেছিল প্রোটিয়ারা। টি-২০ সিরিজ হারলেও সেবার ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। আর বৃষ্টিতে টেস্ট সিরিজের দু’টি ম্যাচই ড্র হয়। এবার নিজেদের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের সুবর্ণ সুযোগ দেখছেন স্বাগতিক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকাও বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে উপমহাদেশের স্পিন অস্ত্র মোকাবেলায়। সাকিব ইস্যুতে উৎকণ্ঠা আর রোমাঞ্চকর-চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ শুরু হচ্ছে প্রথম টেস্ট। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি মাঠে গড়াবে সকাল ১০টায়।
মিরপুর টেস্ট দিয়েই সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারের ইতি টানার কথা ছিল সাকিব আল হাসানের। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই তার সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তে সাকিবই যে শুধু বঞ্চিত হলেন তা না, বিপাকে পড়ল বাংলাদেশ দলও। আচমকাই সাকিবকে ছাড়া পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তদের, সেটা খুব সহজ হওয়ার কথা না। সাকিব থাকলে একাদশ সাজানো যেকোনো অধিনায়কের জন্য সহজ।
আদর্শ সমন্বয় খুঁজে নিতে একজন বাড়তি ব্যাটার বা একজন বাড়তি বোলারের দিকে যাওয়া যায়। না হলে পড়তে হয় উভয় সঙ্কটে। সাকিবকে ছাড়া অবশ্য অনেক টেস্টই এমন অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। সাকিবের বদলে বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদকে দলে নিয়েছেন নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু তার বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই বলেছেন, সাকিবের বিকল্প পাওয়া কঠিন। সাকিবের মতো ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকে সব্যসাচী কেউ তাদের হাতে নেই।
যে দু’টি দলকে এখনো বাংলাদেশ টেস্টে হারাতে পারেনি তার একটি দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ইতিহাস গড়ার সুযোগ। সেটা করতে স্পিনবান্ধব উইকেট বানিয়েই প্রতিপক্ষের দুর্বলতায় আঘাত করার চিন্তা থাকবে। সাকিব থাকলে তিন স্পিনার হিসেবে খেলতেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও সাকিব। সাকিব না থাকায় তার জায়গা কে আসবেন তা মূল একাদশ দেয়ার পরই বুঝা যাবে। মিরাজ ও তাইজুলের সাথে হাসান মুরাদ নাকি অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে খেলানো হবে এটা সবচেয়ে বড় কৌতূহলের জায়গা।
বোলিংয়ের দিক থেকে আবার ভিন্ন সমস্যা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান স্কোয়াডে বাঁহাতি ব্যাটার কেবল দু’জন। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে দুই বাঁহাতি ব্যাটারের জন্য দুই অফ স্পিনার খেলানোর বাস্তবতা নেই। প্রতিপক্ষের স্কোয়াডে ডানহাতি ব্যাটার বেশি হলে বাঁহাতি স্পিনারের দিকেই ঝোঁকে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই জায়গায় আবার মুরাদের অভিষেকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দেশের বাইরে তিন পেসার খেলালেও মিরপুরে দুই পেসার নিয়ে নামার সম্ভাবনাই বেশি।
সাকিবের মতো নাটকীয়ভাবে এই টেস্টের আগে ইতি হয়ে গেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। তাকে অসদাচরণের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করেছে বিসিবি। নতুন কোচ হিসেবে নেয়া হয়েছে ফিল সিমন্সকে। মাত্রই যোগ দেয়া সিমন্সের এই সিরিজে খুব বেশি ইনপুট দেয়ার কথা না। তিনি হয়তো থাকবেন পর্যবেক্ষণে। অধিনায়ক শান্তর সাথে সহকারী কোচ নিক পোথাস ও বাকি কোচিং স্টাফরা মিলেই ঠিক করবেন দলের কৌশল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজে ব্যাটিং বিভাগে ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণেই ভারতের কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে ব্যাটিংবান্ধব উইকেট তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর আগে ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১২টি ম্যাচেই জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। বাকি দু’টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে চলতি মাসেই দুই ম্যাচের টেস্ট ক্রিকেট সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে শান্ত, মুশফিকরা। এমন পরিস্থিতিতে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আরো একটি সিরিজ খেলবে। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা নেই বাংলাদেশ দলের দীর্ঘ দিন ধরে। অধিনায়ক নাজমুল শান্ত থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম, মুমিনুলদের ধারাবাহিকতা নেই। যদিও মুমিনুল ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তাদের অবস্থার পরিবর্তন না হলে তা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের বেশির ভাগেরই ব্যস্ততা ছিল ইনডোরের নেটে। এ সময় নাঈম হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন মূল মাঠে। একটি উইকেটে তারা বল করছিলেন স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদের তত্ত্বাবধানে। তাদের বলে কিপিংয়ের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছিলেন লিটন দাস। তার পেছনে দাঁড়িয়ে পুরো চিত্রটা দেখছিলেন নতুন হেড কোচ ফিল সিমন্স। প্রতিপক্ষের জন্য যে ‘স্পিনফাঁদ’ থাকবে বাংলাদেশের, তার একটা আগাম বার্তাও পাওয়া গেল। পরে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও জানিয়েছেন, মিরপুরে যেমন উইকেট থাকে, এবারো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে থাকবে তেমনই। সাকিব আল হাসান না থাকলেও বাংলাদেশের স্পিনাররা তাই তৈরি হচ্ছেন তেমন লড়াইয়ের জন্য। তারা যে আলাদা গুরুত্ব পাবেন তাও জানিয়েছেন অধিনায়ক।
শান্ত বলেন, ‘স্পিনারদের বাড়তি ভূমিকা তো থাকবেই, সবসময় যেটা থাকে, অতীতেও দেখেছি। অতিরিক্ত কিছু আশা করছি না। অতীতে যেভাবে বল করেছেন স্পিনাররা সেভাবেই বল করবেন। প্রক্রিয়া যেন ঠিক থাকে। প্রতিটি বল যেন দলের জন্য করি। বাড়তি কোনো কিছু চাই না স্পিনারদের কাছ থেকে। ২০ উইকেট নেয়া প্রক্রিয়ার ব্যাপার। প্রক্রিয়া ঠিক রাখলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। জয়ের জন্যই খেলব, উইকেট দেখেছি। সবার মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে ধারণা আছে।’
প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করামও জানিয়ে গেলেন, ‘তাদের ঘরের মাঠ। চ্যালেঞ্জটা তো থাকছেই। তাদের যে প্রধান অস্ত্র স্পিন। সেটি মোকাবেলায় দল পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা তাদের আশায় বাধা হতে চাই। সে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। বিপরীত চিত্র আমরাও দেখাতে পারি। সবকিছুই নির্ভর করছে নির্দিষ্ট দিনটির ওপর। শুরুর দিনটা পক্ষে নিতেই নামবে সবাই।’


আরো সংবাদ



premium cement