২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩০, ১৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

যুদ্ধ বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহার ছাড়া কোনো বন্দিমুক্তি নয় : হামাস

-


যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত কোনো ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে না। গত শুক্রবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ডেপুটি খলিল আল-হায়া হুঁশিয়ারিমূলক এক বার্তায় এ কথা বলেছেন। হামাসের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ও অন্যতম সদস্য আল-হায়াকে সিনওয়ারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সম্ভাব্য অন্য ব্যক্তিরা হলেন- খালেদ মিশাল ও মোহাম্মদ দারউইশ। হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, নেতা নির্বাচনের আগেই কাতার ও অন্যান্য আঞ্চলিক পৃষ্ঠপোষককে এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।
গাজায় এখনো হামাসের হাতে ১০১ জন ইসরাইলি বন্দী রয়েছে। তবে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই আশা করছে সিনওয়ারের মৃত্যুর পর এখন বন্দীদের মুক্তি ত্বরান্বিত হবে। হোয়াইট হাউজ বলেছে, দীর্ঘ দিন ধরে আটকে থাকা যুদ্ধবিরতি-বন্দিমুক্তির আলোচনা এখন পুনরায় চালু করা যেতে পারে। যদিও যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু শুক্রবার বলেছেন, তিনি সিনওয়ারের মৃত্যুর পরও গাজায় আগ্রসন চালিয়ে যাবেন।

এর আগে হামাসের হাত থেকে বন্দীদের মুক্ত করতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের লাশ ‘দরকষাকষির’ একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে ইসরাইলের সূত্র নিশ্চিত করেছে মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএনকে। সিনওয়ারের লাশ বর্তমানে ইসরাইলের একটি গোপন স্থানে রাখা হয়েছে। অন্তত দু’টি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, সিনওয়ারের লাশের বিনিময়ে কিভাবে বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়, সেটিই সম্ভবত এখন ইসরাইল অগ্রাধিকার দেবে। একটি ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছে, দেশটির কর্তৃপক্ষ বন্দীদেরকে মুক্ত করতে হামাসের ওপর কিভাবে ‘দ্রুত চাপ তৈরি’ করা যায় তা বিবেচনা করছে।
‘যদি হামাস তার (সিনওয়ার) লাশের বিনিময়ে তাদেরকে (বন্দী) মৃত বা জীবিত ফেরত দিতে চায়, তাহলে ভালো,’ ভাষ্য একটি ইসরাইলি কূটনৈতিক সূত্রের। হামাস নেতা সিনওয়ারের লাশ বন্দীদের মুক্তির ক্ষেত্রে দরকষাকষির ভালো একটি উপায় হতে পারে বলে মনে করে দু’টি সূত্রই। বন্দীদের মুক্তির বিনিময়েই শুধু সিনওয়ারের লাশ গাজায় ফেরত দেয়া হবে, অন্যথ্যায় নয়, এমনটাই দাবি করেছে একটি সূত্র। মূলত ইসরাইলি সূত্রগুলোর এসব মন্তব্যের পর হামাসের পক্ষ থেকে বন্দিবিনিময় ইস্যুতে ওই বক্তব্য দেন আল-হায়া

ইন্দোনেশীয় হাসপাতালে হামলা : উত্তর গাজায় ইন্দোনেশিয়ার পরিচালিত একটি হাসপাতালে ইসরাইলি সেনারা হামলা করলে অন্তত ছয়জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার ইসরাইলি সেনারা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের সামনে এসে উপরতলা লক্ষ্য করে ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া ইসরাইলি বিমান হামলা এবং আর্টিলারি থেকে গোলাবর্ষণে শনিবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত হয়েছে বলে মেডিক্যাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাত দিয়ে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়, শনিবার উত্তর গাজায় ইন্দোনেশিয়ান একটি হাসপাতালের উপরতলা লক্ষ্য করে ইসরাইলি সেনারা হামলা করলে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং এ হামলায় আরো অনেকেই আহত হয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তর গাজায় ইন্দোনেশিয়ার একটি হাসপাতালের উপরতলা লক্ষ করে ইসরাইলি সেনারা ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর সময় ৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
হামলার কারণে হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে যাদের জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন ছিল, তা দেয়া সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান সুলতান জানিয়েছেন, ইসরাইলি হামলার কারণে ছয়জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০ জন রোগীকে জরুরি অক্সিজেন সেবা দেয়া সম্ভব হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে।

অন্য দিকে মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে, গাজার তুবার অঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে আকাশপথে ইসরাইল হামলা করলে চারজন নিহত এবং আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন। অন্য আরেকটি ঘটনায় জাবালিয়ার সাঈদী পরিবারের বাসভবন লক্ষ্য করে ইসরাইল হামলা করলে দুইজন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিন সিভিল ডিফেন্স নিশ্চিত করেছে।
সিনওয়ারের মৃত্যু মাথায় গুলিতে : ইসমাইল হানিয়ার পর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাল ধরা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বন্দুকের গুলিতে। আর গুলিটি লেগেছিল তার মাথায়। সিনওয়ারের লাশের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে সিএনএন। গত বুধবার দক্ষিণ গাজার একটি ভবনে ইসরাইলি সেনাদের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন সিনওয়ার। প্রথম নিশ্চিত না করলেও লাশেরর ডিএনএ পরীক্ষার পর ইসরাইল এই হামাস নেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিনওয়ারের হাতের একটি আঙুলও কাটতে হয়েছিল। তেল আবিবে অবস্থিত ইসরাইলের ন্যাশনাল সেন্টার অব ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসক শেন কুগেল বলেছেন, সিনওয়ারের শরীরে ট্যাংকের গোলা কিংবা অন্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের মারাত্মক আঘাতও ছিল; কিন্তু মাথায় লাগা গুলিতেই হামাস নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এই চিকিৎসক। এর আগে অবশ্য ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, ঘটনার সময় সিনওয়ার যে ভবনটিতে অবস্থান করছিলেন, সেটি লক্ষ্য করে দাগানো ট্যাংকের গোলার আঘাতে আহত হয়েছিলেন তিনি। শেন কুগেলের দাবি, ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়ার মাধ্যমে সেখানে বন্দুকযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ডা: কুগেল বলেছেন, সিনওয়ারের লাশ পরীক্ষায় যেসব তথ্য পেয়ছেন, সে ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। ময়নাতদন্তের পরই তিনি সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন।
‘আমি লাশে কী কী পেয়েছি তার ওপর ভিত্তি করেই এটি (ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন) তৈরি করা হয়েছে। তার শরীরে আরো অনেক ধরনের আঘাত ছিল, যেমন ডান বাহুতে গোলার আঘাত, বাম পা কিংবা ঊরুর উপর ইট-পাথরের আঘাত, পুরো শরীরে অনেক শার্পনেলের ক্ষত ছিল; কিন্তু বুকে শুধু একটি শার্পনেল ছিল। এসব আঘাতে তার পুরো শরীর বিধ্বস্ত হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু মৃত্যুর কারণ মাথায় লাগা ওই গুলিটিই।’ সিনওয়ারের মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লাশ যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, তার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে বুধবার শেষ বিকেলের দিকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

কুগেল বলেছেন, তারা প্রথমে সেনাদের তোলা ছবিগুলোর সাথে তার দাঁতের মিল খেঁাঁজার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু তা পরিচয় শনাক্তে যথেষ্ট ছিল না। পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিনওয়ারের লাশ ফরেনসিক সেন্টারে নেয়া হয়, যেখানে সম্পূর্ণ ডিএনএ পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তারা শতভাগ নিশ্চিত ছিল যে, লাশটি হামাস নেতার, বলেন কুগেল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনওয়ারের লাশের যেসব ছবি ও ভিডিও আগে-পরে এসেছে সিএনএন সেসব যাচাই করে দেখেছে, প্রথমে তার বাম হাতে পাঁচটি আঙুল দেখা গেলেও পরে একটি অনুপস্থিত দেখা গেছে।
গাজার বাইরে থেকে নেতা নির্বাচন : গাজার বাইরে থেকে নতুন কোনো রাজনৈতিক নেতা বাছাই করতে পারে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এ দিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারকে বৃহত্তর কোনো দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। তবে নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হামাসকে তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানের পছন্দকে বিবেচনায় রাখতে হবে। পাশাপাশি কাতারের স্বার্থও দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, দলটির রাজনৈতিক শাখার দায়িত্ব নেয়ার সম্ভাব্য ব্যক্তিরা বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন। জুলাই মাসে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর মাস তিনেকের মধ্যেই সিনওয়ার নিহত হলেন। তেহরানে হানিয়ার ওপর হওয়া হামলার পেছনে ইসরাইলের হাত ছিল বলেই সংশ্লিষ্ট সবার বিশ্বাস। হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর সিনওয়ার হামাসের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখাকে একত্রিত করেছিলেন। তবে এবার হামাসের এই গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে।
প্রায় বছরখানেক ধরে ইসরাইলের সাথে মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে হামলার মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। দলটির কয়েক হাজার সদস্য ও শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতাকে হারানো গোষ্ঠীটি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, দ্রুত নেতা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা হামাসের রয়েছে। নতুন নেতা ঘোষণার দায়িত্ব নিয়েছে গোষ্ঠীটির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী শীর্ষ সংস্থা, শূরা কাউন্সিল।
গাজা উপত্যকা, পশ্চিমতীর, ইসরাইলি কারাগার, এমনকি প্রবাসী ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বসবাসরত সব হামাস যোদ্ধার প্রতিনিধিত্ব করে শূরা কাউন্সিল। ফলে নতুন নেতা গাজায় অবস্থান না করলেও, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনায় অংশ নিতে দলীয় নীতিমালা অনুযায়ী তার কোনো বাধা থাকবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আ’লীগ ১৪ দল জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি পুলিশের মূর্তিমান আতঙ্ক ধনঞ্জয়ের খোঁজ মিলছে না বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার বাইরে এখনো ৪৫০ কোটি মানুষ ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট জাতীয় দিবস বাতিলের মিছিলে পিটুনি যুদ্ধ বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহার ছাড়া কোনো বন্দিমুক্তি নয় : হামাস ২৯৭ কোটি টাকার কাজ পাচ্ছে গত সরকারের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান! তহবিল ব্যবস্থাপনায় কাহিল পুনর্গঠিত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিএসএমএমইউতে কম টাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন বন্ধ শিগগিরই শুরুর আশ্বাস হত্যা মামলায় কামাল আহমেদ মজুমদার ৩ দিনের রিমান্ডে জান্তা পতনে মিয়ানমারে মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এক সাথে লড়ছে ইলেকশন কমিশন গঠনে দ্রুতই সার্চ কমিটি হবে : মাহফুজ

সকল