২৯৭ কোটি টাকার কাজ পাচ্ছে গত সরকারের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান!
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯
দেশের ৪৮ জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ শিক্ষিত যুবদের (যুবক-যুবতী) ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ জন্য ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গত সরকারের ‘আস্থাভাজন’ একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ২৭ মাসব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কাজে মাথাপিছু ব্যয় হবে এক লাখ ৩ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া প্রশিক্ষণ ফার্মের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (স্টাফ) বেতন দেয়ার জন্যই খরচ দেখানো হয়েছে ৯৬ কোটি টাকার বেশি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ‘ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠানটি এত বিশাল অঙ্কের কাজটি পেতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এটির অবস্থান দেখানো হয়েছে ঢাকার মিরপুরের কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ‘খাজা আইটি পার্ক’এর দ্বিতীয় ও সপ্তম তলায়।
আজ অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির এক বৈঠকে এই প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হতে পারে জানা গেছে। এই প্রকল্পটি ছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া এবং চলতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদনও করা হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা রয়েছে ২৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরোটাই সরকারি অর্থ থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- দেশের কর্মপ্রত্যাশী শিক্ষিত যুবদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনই মূল লক্ষ্য।
জানা গেছে, গত সরকারের আমলে প্রশিক্ষণ ফার্ম নিয়োগের জন্য সংবাদমাধ্যম ও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়। এতে ২০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে। এদের মধ্য থেকে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ৪ প্রতিষ্ঠানকে রেসপন্সিভ হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে র্যাংকিংয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি উল্লেখ করেছে। র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নিউ হরিজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ, তৃতীয় বাংলাদেশ আইটি ইন্সটিটিউট এবং চতুর্থ হয় এসসিও এক্সপেট বাংলাদেশ লিমেটেড। ই-লার্নার অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড ২৯৭ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। অন্য তিন প্রতিষ্ঠান, নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ ২৯৮ কোটি ৮৮ লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা, বাংলাদেশ আইটি ইন্সটিটিউট ২৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং এসসিও এক্সপেট বাংলাদেশ লিমিটেড ৩০৯ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা উল্লেখ করে।
সূত্র জানায়, কন্ট্রাক্ট নেগোশিয়েশন এবং রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল অনুসরণ করে ক্রয় প্রস্তাবটির চুক্তি কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ২৭ মাস পর্যন্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময় ভিত্তিক খসড়ার চুক্তি প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত ক্রয়ের চুক্তিমূল্য ৩০ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় অর্থবিভাগ কর্তৃক জারিকৃত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রদত্ত ক্ষমতা অনুসারে বর্ণিত ক্রয় প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, টাকার অঙ্কে প্রকল্পটি বিশালই বলা যেতে পারে। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোনো ফার্ম নিয়োগ দেয়ার আগে আরো যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন। কারণ আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেখা গেছে অনেক অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পরে ওই প্রতিষ্ঠান সেই কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি অথবা কাজের গুণগত মান ঠিক হয়নি। আর যেহেতু এটি ফ্রিল্যান্সিং বিষয় তাই দরপত্র মূল্যায়ন আরো নিরপেক্ষভাবে করা প্রয়োজন। এর আগে সংশ্লিষ্ট ফার্মের কাজের অভিজ্ঞতাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা