১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩০, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে ডা: শফিক

ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছে

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যাশায় জীবন ও রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছে। আমরাও একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই। সমাজের সকল স্তর থেকে বৈষম্য দূর করতে চাই। আর এজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন দল ও মত থাকতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর দ্বীন কায়েমে সকল ইসলামী দলকেও সকল ভেদাভেদ ভুলে এক হতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম বিদ্বেষীরা যদি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এক বাক্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যারা করে তারা কেন এক হতে পারবে না। এর একটি মাত্র কারণ। সেটি হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষীরা আমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করতে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধা সৃষ্টি করছে।

গতকাল রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, কারো ওপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেয়া ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ নয়। এটি ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচার। ইসলামী রাষ্ট্র একটি আধুনিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র। যেখানে মানুষ হিসেবে সকলই দেশের নাগরিক এবং সকলের অধিকার সমান। কোনো বৈষম্যের সুযোগ ইসলামী রাষ্ট্রে নেই। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের তৈরি করা সিন্ডিকেট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো ভাঙ্গতে পারেনি। ফলে জনমনে ভয় ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজারে বিশৃঙ্খলার সিন্ডিকেটই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানে এবং প্রশাসনের স্তরে স্তরে চলছে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের সিন্ডিকেট। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লব মেনে নিতে পারছে না। তারা চাচ্ছে আবার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দোসররা কতটা বোকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানে দলের সভানেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, দল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, দলের অস্তিত্বই নেই সেখানে কেন তারা দিবাস্বপ্ন দেখে তারা নিজেরাও বলতে পারবে না। জনগণ চেয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আর তিনি করেছেন দেশ ত্যাগ।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষিত বেকার শব্দটি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে মূল স্রোতে আনতে হবে। জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনা দায়িত্ব পেলে শিক্ষাজীবন শেষে শুধু সনদ নয় শিক্ষিত যুবকদের কাজ দেয়া হবে। কোন শিক্ষিত যুবক চাকরির জন্য আন্দোলন করতে হবে না। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল কাজই হচ্ছে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো: সেলিম উদ্দিন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের একক শক্তি দাবি করে তারাই মানুষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান কখনো স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। তিনি চেয়েছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। ৭ মার্চের ভাষণে তার চারটি প্রধান দাবির প্রথম দাবিই ছিল তার নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। পরে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন চার্জ লাইট চালিয়ে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর গুলি চালানোর ফলে বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। আর শেখ হাসিনা কথায় কথায় বলতেন, এ দেশে আমার দেশ, আমার বাবার দেশ, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছে। তাহলে নিজের দেশ, বাবার দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা কেন পালিয়েছে প্রশ্ন রেখে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, কারণ পিতার মতোই কন্যাও বাংলাদেশের জনগণের ওপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন করেছে। হাসিনা এত বেশি অপকর্ম করেছে ক্ষমতা ছেড়ে এক মিনিটও দেশে থাকার সাহস রাখেনি।

ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ফ্যাসিবাদের আর কোনো জায়গা বাংলাদেশে হবে না। এ দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার অধিকার রাখে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফ্যাসিবাদ কী গণতান্ত্রিক শক্তি? স্বৈরাচার ও খুনির সরকার কী গণতান্ত্রিক শক্তি? ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যারা মানুষ হত্যা করে লাশের ওপরে নৃত্য করেছে তা কী গণতান্ত্রিক আচরণ? সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো যারা মানুষ হত্যা করেছে দ্রুততার সাথে তাদের বিচারের আওতায় আনা।
সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিল আলেমদের হত্যা করে বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে চিরতরে নির্মূল করা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর আলেমদের হত্যা, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করাসহ অসংখ্য আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে।

আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার ১৫ বছরে ১৪টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব ব্যাংক জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা না করে, এসব ব্যাংকের মাধ্যমে জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সেই ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ থাবা দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থনৈতিকভাবে কোমর ভেঙে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সুযোগ পেলে পুনরায় ইসলামী ব্যাংককে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ করে গণমানুষের ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলবে। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, আব্দুর রব, মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

ঢাকা মহানগরী উত্তর : মানবরচিত মতবাদ মানুষকে কিছু দিতে পারেনি; তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি লাভ করতে হলে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। গতকাল রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের হাতিরঝিল অঞ্চল আয়োজিত অগ্রসরকর্মীদের এক শিক্ষাশিবিরে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও অঞ্চল পরিচালক হেমায়েত হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকারের সঞ্চালনায় দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা।

গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যাকারী খুনিদের গ্রেফতার, চাঁদাবাজি বন্ধ ও দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটদের গ্রেফতারের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তরের পল্লবী অঞ্চল। ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল পরিচালক মো: নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন পল্লবী থানা দক্ষিণের আমির মো: আশরাফুল আলম, সেক্রেটারি অধ্যাপক রুহুল আমিন, রূপনগর থানা সেক্রেটারি মো: মোশাররফ হোসেন, পল্লবী মধ্য থানা সেক্রেটারি জোবায়ের হোসেন প্রমুখ। মিছিলটি মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক প্রদর্শন করে মিরপুর ১০ নং গোলচত্বর এক সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

অসুস্থ অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামকে হাসপাতালে মাওলানা আবদুল হালিম : জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাবেক সদস্য এবং সাবেক কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারি অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে যান এবং তার শরীরের খোঁজখবর নেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন কেন্দ্রীয় অফিস বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা মো: মোতালেব মিয়া। মাওলানা আবদুল হালিম উপস্থিত সবাইকে সাথে নিয়ে অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের আশু আরোগ্যের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement