১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩০, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

নূর আলীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দখলের চেষ্টা!

-


নূর আলীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দখলের চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) একাধিক নেতা ও কয়েক ব্যবসায়ী। সেখানকার কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দিয়ে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছেন। কিন্তু তারা তাতে সফল হননি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) একটি অভিযোগ জমা হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অপচেষ্টাকারী এরা কারা?

তাদের সম্পর্কে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছে রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল। ওই দলে ছিলেন, মাস বাংলা ওভারসিজের (আরএল নং-১৫৫৩) জামিল হোসেন, এইচআর ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ফখরুল ইসলাম (আলএল-৪৫২), ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের (আরএল-২১) নূর আলী, দামাসী করপোরেশনের (আরএল-৭২৭) নোমান চৌধুরী, জয়নাব জাফরিন ইন্টারন্যাশনালের (আরএল) মাহবুবুল করিম সিদ্দিক জাফর ও সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-৪৯২) শামীম আহমেদ নোমান।
এছাড়াও এদের সাথে আরো আছেন খন্দকার ওভারসিজের (৮১২), মাইক্রো এক্সপোর্ট হাউজের (আরএল-৪৪৮) মো: মোস্তফা মাহমুদ, বায়রার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করা রিয়াজ ওভারসিজের (আরএল-৩০) রিয়াজ ও আফিয়া ওভারসিজের (আরএল-১০১০) আলতাফ খান।

অভিযোগে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে নূর আলীর নেতৃত্বে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেটে করা হয়। ওই সময় মেডিক্যাল চেকআপ চক্রটিও ছিল তার নেতৃত্বে। পরে যে ১০১ জনের সিন্ডকেট হয়েছে সেখানেও নেতৃত্বে দেয় নূর আলী। এর বাইরে সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে এবং তারই সহযোগীরা। গত ছয় বছর ধরে বায়রার নেতৃত্ব নূর আলীর হাতে। তিনি আবার সিন্ডিকেট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু তিনি সে প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন। নূর আলীর নেতৃত্বাধীন এরা আবার কথিত সিন্ডিকেট বিরোধী প্রচারণা, সাংবাদিক সম্মেলন, মানববন্ধনসহ সবকিছুই করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিন্ডিকেট বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগবাণিজ্যে ১০ সিন্ডিকেটের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ছিলেন ফখরুল ইসলাম। মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাণিজ্যের জন্য বাগিয়ে নিয়েছেন নিজের মেডিক্যাল সেন্টার ওয়েলকাম মেডিক্যাল। প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর নামমাত্র স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এখন পরিচয় লুকিয়ে কমপক্ষে দু’টি লাইসেন্স রয়েছে ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায়। সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাতেও রয়েছে তার এজেন্সি ও ওয়েলকাম মেডিক্যাল সেন্টার।
চলতি বছরের ৩১ মে শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর তিনিসহ আরো কয়েকজন মিলে আবার চেষ্টা করছেন মালয়েশিয়ায় ভিন্ন ফর্মুলায় লোক পাঠানোর শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠনে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ক্ষমতাশীল একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর কিছু নেতার সাথে তাদের কয়েক জনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। জানা যায়, একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে মোটা অঙ্কের অর্থ স্পন্সর করার সূত্রে দাওয়াত পান ফখরুল ও তার অনুসারীরা। শুধু তাই নয়, দেখা করেছিলেন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টদের সাথে। সেখানকার কর্মকর্তারা তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় দেশে ফিরে নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে শুরু করেছেন নানা অপতৎপরতা।

জনশক্তি রফতানি সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী জানান, ফখরুল এখন বায়রার সভাপতি হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের অনুকম্পা পেতে সিন্ডিকেটবিরোধী কথা বলছেন। অথচ তিনি সব সময়ই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন এবং নিজেও সিন্ডিকেট করেছেন।
ফখরুলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন টকশো, সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তার বক্তব্যগুলো তার অনুসারীরা মালয়েশিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ায় সম্ভাব্য নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশী শ্রমিকবিমুখ হচ্ছেন।
বায়রা সদস্যরা বলেন, ১০১ সিন্ডিকেট ভুক্ত তার বেনামী প্রতিষ্ঠান ত্রিবেনি ইন্টারন্যাশনাল ও সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল। যার নেপথ্য মালিক ফখরুল ইসলামের। তিনি নিজের লাইসেন্স সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যের নামে ব্যবসা করছেন। অন্য যারা ব্যবসা করেন তাদের লাইসেন্স একটা অথচ তার লাইসেন্স ২টা। তাছাড়া অন্য ব্যবসায়ীরা হয়তো মূল ১০১ এজেন্সির মধ্যে অথবা সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ছিলেন। কেউ কেউ শুধু মেডিক্যাল সেন্টারে ছিলেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি সব জায়গায় আছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনি ও তার সহযোগী সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ওই সব নেতাদের আগে জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগের বিষয়ে বায়রার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমি প্রকাশ্যে কথা বলি। এই কথাগুলো বলায় যারা মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে লোক পাঠাচ্ছে তারা এখন অপপ্রচার চালাচ্ছে। যে ছবিটা দিয়ে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে সেটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের ছবি। ওটি ছিল একটি মসজিদ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। যেখানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইবরাহিম এসেছিলেন। সেখানেই ওই ছবি তোলা হয়। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট যারা আগে করেছে তারাই এখনো সিন্ডিকেট করছে। আর নূর আলী তো কোনো সিনেই নেই।


আরো সংবাদ



premium cement