১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হামাস নেতা সিনওয়ার নিহত

হামাস নেতা সিনাওয়ার নিহত -

ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) হামলায় গাজার হামাস প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। গতকাল দেশটির সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা গাজায় সামরিক অভিযানের সময় তিনজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হামাস প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার কি না তা নিরীক্ষণ করছে। বিবৃতিতে সুনির্দিষ্ট অপারেশন বা কখন এটি পরিচালিত হয়েছিল তার বিশদ বিবরণ দেযা হয়নি। জুলাইয়ে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাসের নতুন নেতা হন।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি অনুযায়ী, রাফাহ অঞ্চলে সংঘর্ষের পর বোমা হামলা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে সিনওয়ারকে দেখা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে ইসরাইলের কারাগারে বন্দী থাকা সিনওয়ারের জৈবিক তথ্যের সাথে নিহত সিনওয়ারের দেহের ডিএনএ মিলেছে বলে জানা গেছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইয়াহিয়া সিনওয়ারের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দাবি করা হয় যে, একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে যে ব্যক্তিটি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল তিনি হলেন সিনওয়ার।
তাদের দাবি, যে ব্যক্তির মাথার খুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং তার ওপর ধ্বংসাবশেষ পড়ার কারণে শরীরে গভীর ক্ষত ছিল তিনি ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ছবিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, গাজার হামাস নেতা ইয়াহইয়া নিহত হয়েছেন। তেল আবিব প্রেসের সাথে কথা বলার সময় ইসরাইলি নিরাপত্তা সূত্র উল্লেখ করেছে যে, গাজার রাফাহ জেলায় ইয়াহইয়ার ডিএনএ লাশের সাথে মিলেছে। ইসরাইল মনে করে গত বছর ৭ অক্টোবর তাদের ওপর হামাস যে হামলা চালায় তার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই সিনওয়ার। কিংবদন্তি হামাস কমান্ডার ইয়াহইয়া গাজার রাফাহ জেলায় ইসরাইলি সৈন্যদের সাথে লড়াই করার সময় ট্যাংকের গোলাগুলির ফলে শহীদ হন। তিনি একটি একে-৪৭ কালাশনিকভ রাইফেল ধরা ছিলেন এবং একটি অ্যাসল্ট ভেস্ট পরেছিলেন।
ইসরাইলি সম্প্রচারক কেএএনের সাথে কথা বলার সময় একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, হামাস নেতা সিনওয়ার শহীদ হয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, গাজার রাফাহ অঞ্চলে তেল সুলতান পাড়ায় অভিযান চালানোর সময় হামাস সদস্যদের সাথে ইসরাইলি সেনাদের সংঘর্ষ হয়। ইহুদিবাদীরা জানত না যে, সিনওয়ার ওই সময় ভবনে ছিল। দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেখানে তিনজন মুজাহিদিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং হামাস সদস্যরা যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানে ট্যাংক ফায়ার দিয়ে আঘাত করে। সংঘর্ষ ও বোমা হামলার পর বোঝা যায় নিহতদের মধ্যে সিনওয়ারও রয়েছেন।
ওই অঞ্চলে শহীদ হামাস সদস্যদের কাছে কোনো জিম্মি পাওয়া যায়নি। দাবি করা হয়েছে, কিছু লাশের গায়ে নোট ও পরিচয়পত্র ছিল। সংঘর্ষের সময় সিনওয়ারের পাশে আরো দুইজন মুজাহিদিন ছিলেন। তবে সিনওয়ারের শহীদ হওয়ার বিষয়ে হামাসের সূত্র থেকে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর আগে একটি সাক্ষাৎকারে, হামাস নেতা সিনওয়ার বলেছিলেন যে, ইহুদিবাদীরা চেয়েছিল যে ফিলিস্তিনিরা যখন তারা গণহত্যা করছে তখন তারা প্রতিরোধ না করুক। তবে তারা এটি প্রতিহত করার জন্য তাদের নিষ্পত্তির সব উপায় ব্যবহার করবে।
‘অনেক বছর ধরে, আমরা ভেবেছিলাম যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মুক্ত মানুষ এবং বৈশ্বিক সংস্থাগুলো হানাদারদের থামিয়ে দেবে এবং তাদের আমাদের জনগণকে হত্যা করা থেকে বিরত রাখবে; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্ব শুধু হানাদার যুদ্ধযন্ত্রকে আমাদের তরুণদের হত্যা করতে দেখেছে,’ ইঙ্গিত করে সিনওয়ার বলেন। ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে শিশু ও মহিলাদের হত্যা করেছে। উচ্চ-স্তরের প্রযুক্তি রয়েছে এমন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাথে হামাস প্রতিরোধের তুলনা করা উচিত নয় উল্লেখ করে সিনওয়ার বলেন, ‘আমাদের কাছে যদি এমন অস্ত্র থাকত যা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে, তাহলে আমরা সেগুলো ব্যবহার করতাম; কিন্তু আমাদের কাছে এই অস্ত্রগুলোই আছে। তারা চায় যে, আমরা নিহত হওয়ার সময় নম্র থাকি। কিন্তু আমরা আমাদের সব অস্ত্র দিয়ে আমাদের লোকদের রক্ষা করব।’
ইয়াহইয়া সিনওয়ার কে?
গাজা প্রতিরোধের কিংবদন্তি হামাস কমান্ডার ইয়াহইয়া সিনওয়ার গাজার দক্ষিণে খান ইউনুস শরণার্থীশিবিরে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর তার পরিবারকে অ্যাশকেলন থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে দুই ইসরাইলি সেনাকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে সিনওয়ার তার জীবনের ২২ বছর ইসরাইলি কারাগারে কাটিয়েছেন।
২০১১ সালে বন্দিবিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি মুক্তি পান। তিনি কারাগারে সাবলীলভাবে হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো শিখেছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement