১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই : ডা: শফিক

ঝিনাইদহে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে দেশকে শশ্মানের বাংলায় পরিণত করেছিল। ঘরে ঘরে অশ্রু আর রক্ত ঝরিয়েছিল। বিগত সাড়ে ১৫ বছর জুলুুুমের তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই। কুরআন সুন্নাহভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। আমরা সরকারে এলে একটা যুবকের হাতকেও বেকার থাকতে দেবো না। সব যুবকের হাতে কাজ তুলে দেবো। এ দেশের সব যুবক গর্বিত যুবক হবে। কেউ সমাজে অবহেলিত থাকবে না। আমরা নৈতিকতা সম্পন্ন দক্ষ নারী-পুরুষ গড়ে তুলব। তিনি গতকাল বিকেলে ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত এক বিশাল কর্মিসভায় এসব কথা বলেন।
তিনি যুবসমাজকে অভিনন্দন জানিয়ে আরো বলেন, জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তারা তা সফল করেছে। তিনি যুবসমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন তোমরা দায়িত্ব নিয়ে দেশকে গড়ে তোল। কল্যাণের বার্তা নিয়ে রাসূল সা:-এর আদর্শের বার্তা নিয়ে ত্যাগ নিয়ে এগিয়ে এসো। তিনি আরো বলেন, ওবাইদুল কাদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে দেশে পাঁচ লাখ মানুষ হত্যার শিকার হবে। কিন্তু তা হয়নি। অথচ তারা তা চেয়েছিল এবং ষড়যন্ত্র করেছিল দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর জন্য, যাতে সে সুযোগে বিদেশীরা দেশে ঢুকে পড়ে। তারা সমাজকে অস্থির করতে চেয়েছিল এবং এখনো সেই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তন আল্লার রহমত। কোথাও আমার জামায়াত কর্মীরা চাঁদাবাজি করেনি। তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহর সাহায্য আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে বলব কাউকে একগুয়েমি করতে দেয়া হবে না। সঠিক পথে চললে সার্বিক সহযোগিতা করব। দায়িত্বশীল আচরণ করব। অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যারা বলত এই দেশ আমার বাবা-দাদার, পালাবো না, কিন্তু তারা তাদের কথা রাখতে পারেনি। দেশ ও নেতাকর্মী ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আমাদের দাবি তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে সঠিক বিচার করতে হবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আলেমদের ওপর অত্যাচার হয়েছে অনুভব করেছি কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। চোখের পানিতে ও রক্তে সাগর তৈরি হয়েছে। তিনি আভিযোগ করেন, আদালতে ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আমাদের ১১ জন নেতাকে ক্যাঙ্গারু কোট বসিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ২০১৭ সালের কথা উল্লেখ করে বলেন, দু’জন শহীদের বাসায় এসেছিলাম। একজনের বাসায় ১৫ মিনিট ও শহীদ ইবনুল পারভেজের বাসায় ঢোকামাত্র জেলা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। অথচ আমি চোর ডাকাত ছিলাম না। তিনি এক শহীদ শিশুসন্তানকে আবেগে জড়িয়ে ধরেন। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল এ অবস্থা ছিল। আমাদের সব কার্যালয় তালা দিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়। নেতাদের নামে মামলা দেয়া হয়, সাতক্ষীরা জেলায় বুলডোজার দিয়ে বাসাবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়। আবার মাত্র চার দিনের মাথায় তারা বিতাড়িত হয়েছে। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না
আমরা মামলা করব, আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চাইব। বিচার পাবো কি না জানি না। তিনি আরো বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হবে না। কিন্তু রাসূল সা: আদর্শ অনুযায়ী সমাজ উন্নয়নে ইজ্জতের সাথে নারীরা ভূমিকা পালন করতে পারবে। আমরা দায়িত্ব পেলে নারীদের মর্যাদা দেবো, নিজ নিজ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করব।
বিগত সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা দুর্নীতির মাধ্যমে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশ ধ্বংস করেছে। আমরা দায়িত্ব পেলে দুর্বৃত্তরা ঘুষ ও দুর্বৃত্তায়নের দুঃসাহস দেখাবেন, ছলচাতুরি করতে দেয়া হবে না। ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা হবে। তিনি কল্যাণের বার্তা নিয়ে রাসূলের বার্তা নিয়ে জামায়াতের সাথে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।
জেলা জামায়াতের আমির অধ্যপক আলী আযম মো: আবু বকরের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হুসাইন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি অধ্যপক আব্দুল আওয়াল, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মনিরুজ্জামানসহ জেলা ও উপজেলা জমায়াত নেতৃবৃন্দ।
আমান উল্লাহ পাটওয়ারী সাভার (ঢাকা) থেকে জানান, আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা একটি সংগঠন, আমরা চাই একটি মানবিক বাংলাদেশ। যেখানে মানবতার বিপর্যয় সেখানে আমরা হাজির হওয়ার চেষ্টা করি। আজকের আশা এ কারণে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য একটু উপহার এখানে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দিয়েছি। গতকাল রাতে সাভারের পক্ষাঘাত গ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভর্তি আহত রোগীদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য পরিদর্শন শেষে সিআরপির রেডওয়ে হলে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন- আগামীতে এমন সরকার এমন শাসন আমাদের দেশে আসুক যাতে প্রত্যেকটি নাগরিক শান্তি নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা জেলার (উত্তর) আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আফজাল হোসাইন, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রউফ প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement