১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩০, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ঢাকা-থিম্পু বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভূটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল সাক্ষাৎ করেন : পিআইডি -

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্ক জোরদার হতে দেখতে চাই।’
বৈঠকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উপায়, বাংলাদেশে ভুটানের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য ক্ষেত্র এবং নেপালের বৌদ্ধ ধর্মে বাংলার প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়।
ভুটানের রাষ্ট্রদূত ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যার সাথে ভুটানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। তিনি বাণিজ্য বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে পিটিএ’তে আরো পণ্য অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) প্রশংসা করে বলেন, ভুটান ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে।
বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পণ্ডিতরা কিভাবে তিব্বত, নেপাল ও ভুটানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেছিলেন রাষ্ট্রদূত কুয়েনসিল তা স্মরণ করেন।
তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মকে পুনরুজ্জনকারী দশম শতাব্দীর সন্ন্যাসী অতীশ দীপঙ্কর এবং তার পূর্বপুরুষ অষ্টম শতাব্দীর সন্ন্যাসী শান্তিরক্ষিত সম্পর্কে কথা বলেন। দু’জনেরই জন্ম বাংলাদেশের আধুনিক মুন্সীগঞ্জ জেলায়। তিনি বলেন, ১৫ শতকের প্রথম দিকে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বানরতœ ভুটান সফর করেছিলেন এবং সেখানে একটি বুদ্ধমূর্তি ও একটি মঠ স্থাপন করেছিলেন। দূত আরো বলেন, বানরতœকে এখনো তার দেশের মানুষ শ্রদ্ধা করে।

বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাবিতে তরুণ বিপ্লবীদের আঁকা গ্রাফিতি পরিদর্শন : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে তিনি জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের সময় তরুণ বিপ্লবীদের আঁকা বর্ণিল ও বিচিত্র গ্রাফিতি ঘুরে দেখেন। এ সময় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর ও নগরের দেয়ালে তরুণ শিক্ষার্থীদের আঁকা সেরা গ্রাফিতি নিয়ে একটি আর্টবুক প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ‘দি আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি আর্টবুক প্রকাশ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তরুণ চিত্রশিল্পীদের আঁকা- লেখায় ঢাকা সারা বিশ্বের গ্রাফিতি রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পায়। দেয়ালগুলো পরিণত হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিশাল ক্যানভাসে। সরকারকে নানা শক্তিশালী বার্তা দিতে তারা বিভিন্ন সৃজনশীল ও হৃদয়গ্রাহী স্লোগান ও কবিতা লিখেছেন। এসব বার্তা যেন বিপ্লবের চেতনা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাক্সক্ষার শিল্পীত প্রতিফলন। ছাত্ররা দেশবাসীর সমর্থন আদায়ে শিল্পকর্মের মাধ্যমে মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলকে এই আর্টবুক উপহার দিয়েছেন। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাদের হাতে এ উপহার তুলে দেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement