২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে ঋণের সাথে পাচারকৃত অর্থ ফেরত প্রাধান্য পাবে

সাইড লাইনে বৈঠক হবে ১২ দেশের সাথে
-

আসন্ন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে ৩০০ কোটি ডলারের বাড়তি ঋণের পাশাপাশি গত দেড় দশকে দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে এমন ১২টি দেশের কর্মকর্তাদের বাইরেও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কর্মকর্তাদের সাথে সাইড লাইনে একাধিক বৈঠক হবে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও ১৫ বছরের লুটপাটের চিত্র তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সম্মেলন অনুুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বাংলােেশর পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাশে ব্যাংকের গভর্নর-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে পরিবর্তিত পরস্থিতিতে বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য আলোচনার বিষয়ও পরিবর্তন হয়েছে। আগের বৈঠকগুলোতে শুধু বাড়তি সহায়তা আদায় ও দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হতো। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট যুক্ত হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থের বেশির ভাগই আমদানি-রফতানির আড়ালে সংঘটিত হয়েছে। কখনো আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে, আবার ঘোষণাকৃত পণ্যের বিপরীতে অন্য পণ্য আনা হয়েছে। কখনো কনটেইনারে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি না এনে ইট-বালু আনা হয়েছে। এর মাধ্যমেও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে। আবার ঘোষণাকৃত পণ্যই আনা হয়নি, বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা। আবার রফতানির মাধ্যমেও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে বিদেশে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। ঘোষণার চেয়ে বেশি পণ্য পাঠানো হয়েছে। বাড়তি অর্থ বিদেশেই রেখে দেয়া হয়েছে। আবার পণ্য রফতানি করা হয়েছে; কিন্তু বিদেশ থেকে রফতানির বিপরীতে অর্থ আনা হয়নি। এভাবে দেশ থেকে গত দেড় দশকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের মধ্যে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে গত ছয়/সাত বছরে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে মে মাসে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক প্রথমে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর একে একে আরো ছয়টি ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে যাওয়া হয়। একই পরিবারের হাতে আটটি ব্যাংকের মালিকানা তুলে দেয়ার পর কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পানির মতো ব্যাংকগুলো থেকে টাকা বের করে নেয় আলোচিত গ্রুপটি। তারা আটটি ব্যাংক থেকেই ঋণের নামে বের করে নিয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা, যার বেশির ভাগ অর্থই সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। গত দুই মাস ধরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এস আলমের সাথে নাসা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সামিট গ্রুপসহ আরো অনেক সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান একইভাবে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে বিদেশে পাচার করেছে। এসব ব্যাংক এখন গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। আমানতকারীরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার জন্য। যেহেতু বাংলাদেশ অর্থ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন এগমন্ড গ্রুপের সদস্য; এ কারণে দেশ থেকে সর্বাধিক অর্থ পাচার হয়েছে এমন দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে আইএফএমের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের পাশাপাশি বাড়তি আরো ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনা করবে। একই সাথে বিশ্বব্যাংকের সম্মেলনে অংশ নিতে আসা বিশ্বের ১২টি দেশের সাথে সাইড লাইনে আলোচনা করা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সম্ভাব্য সবধরনের পদক্ষেপই নেয়া হবে। একই সাথে দেশে থাকা পাচারকারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করে ব্যাংকের অর্থ সমন্বয় করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement