বঞ্চিত কর্মকর্তাদের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে বৈষম্য
- শামছুল ইসলাম
- ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৮, আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৫
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেয়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দানে নজিরবিহীন বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়োগে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মধ্যে ৭ জনকে সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিন্তু এক সময় সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর পিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় অত্যন্ত সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত হলেও একজন কর্মকর্তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ৭ সিনিয়র সচিব হলেন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো: সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হক, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: মোখলেস উর রহমান। বাদ দেয়া হয়েছে একই সময়ে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা মো: শফিউল্লাহকে। একই সময়ে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন বিসিএস ৮৩ ব্যাচের এ এস এম সালেহ আহমেদ। তাকেই চুক্তিভিত্তিক সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সদ্য নিয়োগ পাওয়া চুক্তিভিত্তিক ৮ সিনিয়র সচিবের মধ্যে ৭ জনই বিসিএস ৮২ ব্যাচের হলেও ৮২ স্পেশাল ব্যাচের একজন ছাড়া আর কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদিও বিসিএস ৮২ স্পেশাল ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৩ জন সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সিনিয়র সচিব নিয়োগ পেয়েছিলেন ৫ জন কর্মকর্তা। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং প্রধান তথ্য কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এই ৮২ স্পেশাল ব্যাচের কর্মকর্তারা। বিসিএস ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিপুল সংখ্যক পদোন্নতি বঞ্চিত হলেও তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কাউকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে ১৯৮৫ ব্যাচের ৬০ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব এবং ১৮৪ জন কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদ থেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে চাকরি থেকে অবসরে যেতে হয়। এই ব্যাচে ৪৮ জনের অধিক কর্মকর্তা সচিব এবং ১০ জনের অধিক কর্মকর্তা সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। একইভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছিলেন ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারাও। এর পরের ১৯৮৬, ৯ম, ১০ম, ১১তম, ১৩তম ও ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও সচিব হয়েছেন। কিন্তু এসব ব্যাচের যারা আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়ে পদোন্নতি ছাড়াই চাকরিজীবন শেষ করেছেন পদোন্নতি বঞ্চিত সেসব কর্মকর্তাদের কাউকে সচিব করা হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া তিনজন কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও বেশ কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এর মধ্যে তথাকথিত উত্তরা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘদিন ওএসডি থেকে অবসরে যাওয়া, গ্রেফতার হওয়া, ওএসডি থাকাকালীন সচিবালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়া, উচ্চতর গবেষণা কাজে নিযুক্ত থাকাকালে অনুমতি বাতিল করে ফিরিয়ে আনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। এসব নির্যাতিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ৮২ বিশেষ ব্যাচের যুগ্মসচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া ড. আব্দুস সবুর, আব্দুল বারি, উপসচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া ৮৪ ব্যাচের ড. নেয়ামতুল্লাহ ভূঁইয়া, ৮৬ ব্যাচের আব্দুল মতিন, জাকির কামালসহ আরো অনেকে রয়েছেন।
২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ের বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ এবং সহকারী একান্ত সচিব ড. সুরাতুজ্জামান প্রায় এক দশক ওএসডি থেকে অবসরে যান। ইতোমধ্যে একান্ত সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ দিলেও সহকারী একান্ত সচিব ড. সুরাতুজ্জামান এখনো কোনো পদোন্নতি পাননি। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর একান্ত সচিব ড. এম মাহফুজুল হককে পর্তুগালে রাষ্ট্রদূত পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার একান্ত সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে বিএনপিপন্থী বঞ্চিত কর্মকর্তা এবং তথাকথিত উত্তরা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘদিন ওএসডি থেকে অবসরে যাওয়া সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদের একান্ত সচিব ড. আব্দুস সবুরকে পদোন্নতি বা পদায়ন করা হয়নি।
বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর গঠন হওয়া সরকারে এখনো বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। পদোন্নতি বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটছে। সরকারে থাকা একজন উপদেষ্টার সাথে যারা কাজ করেছেন অথবা তার সাথে আঞ্চলিক যোগাযোগ রয়েছে তাদেরকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যার প্রমাণ নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পিডিএস পর্যালোচনা করলেই পাওয়া যাবে। ১/১১ এ এই উপদেষ্টার সহযোগী এবং ওই সময়ের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদেরকেই তিনি মূল্যায়ন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা