১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

হিংসা ও বিভক্তির কবর রচনা করে জাতীয় ঐক্য চাই : ডা: শফিক

সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সুধী সম্মেলনে (ইনসেটে) প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আর কোনো বিভক্তি নয় আর কোনো হিংসা নয়। সব রকমের বিভক্তি ও হিংসার কবর রচনা করে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে নতুন পথে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগে একধরনের আচরণ আর ক্ষমতায় গিয়ে ভিন্ন আচরণ রাজনৈতিক দলগুলোর এমন চরিত্র বদলাতে হবে।
ডা: শফিক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ আমরা চাই আল্লাহর আইন কায়েমের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জাস্টিস নিশ্চিত করতে। কুরআন শুধু জামায়াতের নয়, মুসলমানদের নয় কুরআন গোটা মানবজাতির ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য এসেছে। আমাদের জাতিকে এখন এমন একটি পথ বেছে নেয়া উচিত আর যেন আমরা লাঞ্ছিত না হই আবার যেন সম্মান ইজ্জত অধিকারের জন্য আন্দোলনে নামতে না হয়। পথহারা বাংলাদেশ আগামী দিনের জন্য সঠিক পথ খুঁজে পায়।
আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান গত শুক্রবার রাতে সিলেট নগরের অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার কুশিয়ারা কনভেনশন হলে এক ঐতিহাসিক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

সুধী সমাবেশ সিলেটের রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আলেম ওলামা, সাহিত্য সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দসহ হাজারো নগরবাসীর সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। এর আগে আমিরে জামায়াত সন্ধ্যায় কর্মী সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
সুধী সমাবেশে নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ চাই মানবিক সমাজ চাই। জাতিকে হিংসা-বিদ্বেষের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে চাই এ জন্য জামায়াতে ইসলামী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, আগামী দিনের ইনসাফপূর্ণ একটি বাংলাদেশের জন্য ৪১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা মনে করছি এসব প্রস্তাব কাজে লাগালে দেশের সম্পদ কেউ লুটপাট করতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে সবার জন্য গর্বের একটি দেশ। মসজিদ মন্দিরে কোথাও পাহারা দেয়ার প্রয়োজন হবে না। সব মানুষ অধিকার ফিরে পেলে কোথাও পাহারার কোনো প্রয়োজন লাগবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের সবার সংবিধানে সবার অধিকার সমান দিয়েছে। এখানে মাইনোরোটি মেজোরোটি বলতে কোনো আইন আমরা মানি না।

ডা: শফিক ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার পৈশাচিক তাণ্ডবের উল্লেখ করে বলেন, সেদিন ঢাকায় ছয়জন বনি আদমকে হত্যা করে লাশের ওপর নিত্য করা হয়েছে। সে দিন জাতি পথ হারিয়েছিল, পথহারা এ জাতি ৫ আগস্ট আপাতত পথ খুঁজে পেয়েছে। তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে বলেন ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়। সেই থেকে হেফাজতের হত্যাকাণ্ডসহ নানাভাবে এই জাতিকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
ডা: শফিক দলের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে বিনা বিচারের হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তারা দেশ থেকে পালানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি। শীর্ষ ব্যবসায়ী মীর কাসেম আলী মামলা হওয়ার পরও দেশে ফিরে এসেছেন আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যা মামলার কথা বলেছেন, ষড়যন্ত্র চক্রান্তের কথা বলেছেন। তিনি ফ্যাসিবাদ সরকারের আয়নাঘরের উল্লেখ করে বলেন আপনাদের ভালোবাসার আয়নাঘরে আপনারাও কিছু দিন থাকুন। তিনি আয়নাঘরকে জমের ঘর বলে উল্লেখ করেন।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের নাম না নিয়ে তাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়েত করুক। ’৯৬-এর মতো নয়, সত্যিকারের তওবা করে তারা হেদায়েত লাভ করুক। তাহলে তাদেরও লাভ হবে আমাদেরও লাভ হবে। আমরা চাই এ দেশে হিংসা হানাহানির কবর রচিত হোক চিরস্থায়ীভাবে। তিনি বলেন, জাতি এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। সিলেটের সুধী সমাজের প্রতি জামায়াতের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, দুঃসময়ে আপনারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন অর্থ দিয়েছেন সাহায্য দিয়েছেন এর পরিণতিতে কাউকে কাউকে কারাবরণও করতে হয়েছে। আমরা এই ঋণ কোনো দিনও শোধ করতে পারব না।
সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী আন্দলোনকে ১৮ কোটি মানুষের সমর্থন পোস্ট ও সফল আন্দোলন উল্লেখ করে বলেন, সাধারণ মানুষ ফ্যাসিবাদ হটাতে বুক পেতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। এই আন্দোলনে শিশু বৃদ্ধ ভাইবোন, বাবা-মা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, পুরনো আদর্শ ও দলের রাজনীতি দিয়ে জাতির পরিবর্তন হবে না।

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সুধী সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। সুধী সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ছাড়াও খেলাফত মজলিস ও জমিয়তের কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের মহিলা বিভাগ : জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি নুরুন্নিসা সিদ্দিকা বলেছেন, রাসূল সা:-কে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক পর্যায়ে পরিপূর্ণ অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য। সমাজ বিনির্মাণে যুগে যুগে নারী সাহাবিরা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। মুসলিম নারীদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ঘুনে ধরা এ সমাজকে মেরামত করার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের মহিলা বিভাগ আয়োজিত সিরাতুন্নবী সা: আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা মহানগরী উত্তরের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি সুফিয়া জামালের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল তাহমিনা ইয়াসমিন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক উম্মে নওরিন ও সমাজসেবক খন্দকার আয়েশা সিদ্দিকা। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি আমেনা বেগম ও জলি ইয়াসমিনসহ মহানগরীর কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা, ডাক্তার এবং অন্যান্য পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ আলোচনা সভায় অংশ নেন। রিদওয়ান শিল্পী গোষ্ঠীর শিশুশিল্পী, আবৃতিকার ও শিল্পীদের সুরের মূর্ছনায় অডিটোরিয়ামে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। অনুষ্ঠানে সিরাত সা: উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার বিজয়ী ১০১ জনকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

দেশ ও সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা রাখতে হবে- গোলাম পরওয়ার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জাপানে এক মহিলা সমাবেশে বলেন, আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্কের মাধ্যমে আদর্শ পরিবার গঠনের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ গঠনে নারীদের ভূমিকা রাখতে হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামিক মিশন জাপানের মহিলা বিভাগের সভানেত্রী রাজিয়া বিলকিস মিমির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, ইসলামিক মিশন জাপানের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ সাবের আহমদ।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, নৈতিক চরিত্র ও মূল্যবোধসম্পন্ন, মা-বাবার চক্ষু শীতলকারী আদর্শ সন্তান গঠনের পাশাপাশি জাপানে দাওয়াতে দ্বীনের কাজে জাপান প্রবাসী নারী বোনদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান আধুনিক যুগে এই কাজ নারী সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জিং। আল্লাহর রেজামন্দী হাসিল ও পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে ইহকালীন ভারসাম্যপূর্ণ জীবন পরিচালনা করতে হবে এবং শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদেরকে প্রতিটি কাজ আঞ্জাম দিয়ে যেতে হবে। উম্মুল মু’মিনিন খাদিজাতুল কুবরা ও মা আয়েশার রা: পদাঙ্ক অনুসরণে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ কার্যক্রম সবার জন্য সমান অধিকারের বাংলাদেশ গড়তে চাই : ড. ইউনূস বঞ্চিত কর্মকর্তাদের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে বৈষম্য এস আলমের দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিপাকে ব্যাংকগুলো ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হিংসা ও বিভক্তির কবর রচনা করে জাতীয় ঐক্য চাই : ডা: শফিক আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ দুবাইয়ে প্রোটিয়াদের কাছেও হারল টাইগ্রেসরা নিহন হিদানকিওর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ে ইউনূসের অভিনন্দন ভারতের রেকর্ড : হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে পররাষ্ট্র সচিবের সিরিজ বৈঠক

সকল