২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

লুটপাটই সাধনের সাধনা

-

- সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি
- কথিত ক্যাশিয়াররা বহাল তবিয়তে

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধনের দুর্নীতির খবর এখন মানুষের মুখে মুখে। এক সময়ের ধান ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশের খাদ্যমন্ত্রী হওয়ার পর অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে অসাধ্য সাধন করেছেন। সাড়ে পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে তিনি ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দুর্নীতির এই বরপুত্র সাধন চন্দ্র হাসিনা পতনের পর লাপাত্তা ছিলেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর রাতে তাকে রাজধানীর ভাটারা থেকে আটক করে পুলিশ। এ দিকে সাধন চন্দ্র মজুমদারের কথিত কাশিয়াররা এখনো বগুড়া জেলা খাদ্য অফিসে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উত্তরের জেলা নওগাঁর নিয়ামতপুর হাজীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি বনে যান খাদ্যমন্ত্রী। টানা চারবার এমপি হয়েছেন। গত সাড়ে ১৫ বছর সাধন চন্দ্রের জনপ্রতিনিধির আমল ছিল নৈরাজ্য ও অরাজকতায় ভরা। ক্ষমতাকে তিনি মনে করতেন ‘জাদুর কাঠি’। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে নিজের ভাতিজা রাজেশ মজুমদার, ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা, ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার এবং দুই জামাতাকে নিয়ে গড়ে তোলেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য। টাকার বিনিময়ে সব ‘অসাধ্য সাধন’ হতো সাধন চন্দ্রের আস্তানায়।

জানা গেছে, খাদ্য বিভাগের প্রতিটি পদই লোভনীয়। তাই প্রতিটি পদায়নে ৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত নিলাম উঠত তার আস্তানায়। লোভনীয় পদের মধ্যে ছিল আরসি ফুড (রিজিওনাল কন্ট্রোলার অব ফুড), ডিসি ফুড (ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার অব ফুড) এবং ওসি এলএসডি (ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা)। এ ছাড়া ধান-চাল বেশি উৎপাদন হয় এমন তালিকাভুক্ত জেলার বাইরেও যেকোনো স্থান ও পদে পদায়নের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাধন সিন্ডিকেটকে। খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব তথ্য। ঘুষ, দুর্নীতির সব অপকর্ম সমন্বয় করতেন মন্ত্রীর ভাতিজা রাজেশ মজুমদার। তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর সহকারী। বসতেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ে। সাথে ছিলেন মন্ত্রীর একান্ত সচিব সাধন চন্দ্রের বড় জামাতা আবু নাসের বেগ (মাগুরার সাবেক ডিসি) ও মন্ত্রীর এপিএসের দায়িত্বে থাকা ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। টাকার বিনিময়ে দফতরের যেকোনো পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ মন্ত্রণালয়ে বসে সামলাতেন। টাকার লেনদেন হতো মন্ত্রীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায়। সেই বাসভবন সন্ধ্যা থেকেই খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার পদভারে সরগরম থাকত। প্রায় প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে দরদাম ঠিক করে পছন্দমাফিক বদলি কিংবা পদায়ন নিতেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁয় গড়েছিলেন ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগ। এদের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। এর সাথে সরকারি সব দফতরের নির্মাণ কাজের ২০ শতাংশ কমিশন চালু করেছিলেন ভাইলীগের সদস্যরা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও খাদ্য নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী হলেও নওগাঁ জেলায় সড়ক, এলজিইডি, কৃষি, খাসপুকুর, সরকারি জমি ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য ছিল তার দখলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নওগাঁয় গড়ে তোলেন মজুমদার সাম্রাজ্য। যার প্রতিটি ধাপে ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি ও দখল বাণিজ্য। সরকারি সব দফতরের নির্মাণ কাজের ২০ শতাংশ কমিশন সিন্ডিকেট চালু করেছিলেন। সিন্ডিকেট গড়েই নওগাঁ-১ আসনের সাবেক এমপি সাধন চন্দ্র মজুমদার মাফিয়া হয়ে ওঠেন। এলাকায় পুকুর লিজ, জমি দখল, সরকারি কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি প্রকল্প, সরকারি কেনাকাটা, বরাদ্দ সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের সাথে ছিল বিশাল গুণ্ডাবাহিনী। এমপি নির্বাচিত হয়েই ধীরে ধীরে সবকিছু দখলে নিয়ে ২০১৯ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সাধন চন্দ্রের নওগাঁয় ছিল অঘোষিত রাজতন্ত্র। উদ্বোধন, উদযাপন, পালিত, গঠিত সব অনুষ্ঠানেই তার নাম রাখা চাই। না থাকলেই বরং বিপত্তি হতো সংশ্লিষ্টদের। সরকারি নির্মাণকাজ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, নিয়োগসংক্রান্ত, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, ধর্মীয় উপাসনালয়, খাসজমি ও জমি দখল, বিচার সালিস, বাজারব্যবস্থা, বিশেষ দিবস, নিজ দলের নেতৃত্ব গঠনসহ সবখানেই অনুমোদন লাগত সাধনের। জেলা সদরের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তিনি মন্ত্রী হয়ে বড় বড় সরকারি কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেসব কাজের লাভের বেশির ভাগই যেত মন্ত্রীর পকেটে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দলের ভেতরেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পদ হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি।
এ দিকে সাধন চন্দ্র মজুমদারের জামাতা ডা: রাজন কর্মকারের রহস্যজনক মৃত্যু ধামাচাপা পড়ে গেছে। খাদ্যমন্ত্রীর খুঁটির জোরে জামাতা হত্যার মূল রহস্য আর উদ্ঘাটন হয়নি। ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ ভোরে সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর বড় মেয়ে কৃষ্ণা রানী মজুমদার তার স্বামী ডা: রাজনকে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাত ১২টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শেষে বাসায় ফিরেছিলেন ডা: রাজন। স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক জানান, তিনি আগেই মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন ডা: রাজন কর্মকার। কৃষ্ণা রানী বিএসএমএমইউর জেনারেল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। রাজনের মৃত্যুর পরপরই পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় অপমৃত্যু মামলাসহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। তবে দাবি করা হয় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছিল।

প্রভাব খাটিয়ে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা রেখেছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। জেলার সব হাটবাজারের ডাক নিতেন তিনি। এলাকার ছোট খাটো সন্ত্রাসীরাও সাধনের কথামতো ওঠবস করতেন। কোনো এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা তার কথামতো না চললে দেয়া হতো মামলা। দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত প্রায় ২০ কোটি টাকার সরকারি খাসজমিতে মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন ট্রাক টার্মিনাল। নওগাঁয় হাজার কোটি টাকার সিএসডি নির্মাণের তথ্য জনগণ জানে না। সাপাহারে যে স্থানে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার কথা রয়েছে সেখানে অধিকাংশ জমি রয়েছে মন্ত্রী ও তার লোকজনের। কম দামে জমি কিনে বেশি দামে সরকারের কাছে বিক্রির নীলনকশা তৈরি করেছিলেন তিনি। নওগাঁ-১ আসনের সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুরে তিন উপজেলায় ব্যাপক মাছের চাষ হয়। লাভজনক এ চাষে আয় আসে কোটি কোটি টাকা। এতে নজর পড়ে সাধন চক্রের। যে কারও নামেই পুকুর লিজ থাকুক না কেন, তা সিন্ডিকেটের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হতো। সরকারি এমন অনেক জলাশয় আছে, যেগুলো গত পাঁচ বছরের মধ্যে লিজ দেয়া হয়নি।
এ দিকে তাকে গ্রেফতারের পর নওগাঁর নিয়ামতপুরের মানুষ খুশি। মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম মণ্ডল বলেন, অনেক বছর নিজের সম্পত্তি ভোগ করতে পারিনি। পুকুর ভরা মাছ তুলে নিয়ে বিক্রি করেছেন সাবেক মন্ত্রীর লোকজন। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমার নিজের পুকুরসহ আরো অনেক পুকুর তারা বেদখল করেঠিল। নিজের জলার ধারে কাছে যেতে পারিনি। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম। আল্লাহ কথা শুনেছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর সাধন গ্রেফতার হয়েছেন। নিজের পুকুরটা ফেরত পেয়েছি।

সামান্য চাল ব্যবসায়ী থেকে অঢেল সম্পদের মালিক এ সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কথা বলছেন। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন বুঝে নিয়ে সাধন কাগজে স্বাক্ষর করতেন। প্রধান সেনাপতি ছিলেন তার ভাতিজা রাজেশ মজুমদার। রাজেশ ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অলিখিত জুনিয়র মন্ত্রী। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্য, চাল-গম কেনায় নয়ছয়ের মূল মাস্টারপ্ল্যানার ছিলেন তিনি। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হওয়ার সুবাদে তিনিও সুযোগ পেয়ে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম রাজেশ করলেও নওগাঁ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা ও মেয়েজামাই নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহম্মেদ। নওগাঁ জেলা থেকে মন্ত্রণালয়ের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন (একান্ত সচিব) আবু নাসের বেগ। একজন এপিএসের দায়িত্ব পালন করতেন ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। এ পাঁচজনই ছিলেন মূলত সাবেক মন্ত্রী সাধন মজুমদারের সেনাপতি। এ ক’জন মিলে পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন।

দেশের চালের অন্যতম মোকাম হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। এখানে সামান্য হেরফের হলেই নড়েচড়ে বসে চালের বাজার। অথচ এ জেলায়ই বিভিন্ন গুদামে হতো অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদ। মিলারের বেশির ভাগই সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর আত্মীয়। বাজার সিন্ডিকেট তৈরি করতে নওগাঁর গুদামগুলোয় অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদ করতেন তারা। হঠাৎ ধান-চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন তার আত্মীয়রা। নওগাঁ জেলার চাল ব্যবসায়ী মানিক প্রামাণিক জানান, সাধন চন্দ্র মজুমদার ক্ষমতায় থাকাকালে বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরনো চাল ও ধান মজুদ করে রাখতেন। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের বাজারে কখনই অস্থিরতা কাটেনি। এসব করে তারা সে সময় শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। গম ও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানিতে পছন্দের লোক দিয়ে গোপনে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাপানোসহ নিজস্ব লোককে সেই টেন্ডার পাইয়ে দিতেন। সরকারিভাবে সংগ্রহের চেয়ে বিদেশ থেকে আমদানিতেই বেশি আগ্রহ ছিল তার। এসব কর্মকাণ্ডে তাকে সহযোগিতা করত সোহেল নামে এক ঠিকাদার। গম সোহেল নামেই যার পরিচিতি গোটা খাদ্য বিভাগে।

জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত অর্থবছরে সরকার ১০ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে রাশিয়া সরকার ও বাংলাদেশ সরকার এর মাধ্যমে সরাসরি ছয় লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়। আর চার লাখ মেট্রিক টন গম ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। সিরাজগঞ্জের ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেল ওরফে গম সোহেল রাশিয়া থেকে গম এনে সরকারি গোদামে সরবরাহ করতেন। এই গম সোহেল মূলত মন্ত্রী মজুমদারের লোক ছিলেন। ওপেন টেন্ডারের কথা বলা হলেও এসব গম আমদানি করতেন শুধু গম সোহেলই। অন্য কোন ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিলেও কাজ যেত ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেখান থেকে মুনাফা নিতেন গম সিন্ডিকেটের হোতা মন্ত্রীর জামাতা পাইলট শুভন দেব। এই শুভন দেব দিনাজপুর খাদ্য গুদামের এক ম্যানেজারকে কোটি টাকার বিনিময়ে ঢাকার তেজগাঁ সিএসডিতে পদায়ন করান। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ না করে বিদেশ থেকে আমদানি করতে বেশি পছন্দ করতেন। কৃষক পর্যায়ে গম কিনলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে তার ভাগে টাকা কম যেত বলে তিনি সরাসরি বিদেশ থেকে গম আমদানি করতেন। এ বিষযে খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংগ্রহ) মো: মনিরুজ্জামান জানান, স্বচ্ছ টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে বিদেশ থেকে গম আমদানি করা হয়। সে ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। ন্যাশনাল ইলেকট্রিক নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেল তিনি রাশিয়ার সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে গম আমদানিতে সহযোগিতা করেন।

এ দিকে টাকা দিয়ে পদায়ন নেয়া কর্মকর্তারা সরকারি গুদামে মজুদ করা চাল জালিয়াতি করে বিনিয়োগের টাকা উসুল করত অভিনব উপায়ে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ছাড় করা পুরনো চাল আবারো গুদামে ঢুকিয়ে বেশি দামে ক্রয় দেখানো হতো। নওগাঁর বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, তাদের দফতরের সব কাজেই অনুমোদন লাগত সাধন চন্দ্র মজুমদারের। এটা না করলে তার ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার নানাভাবে হেনস্তা করতেন।
এ দিকে বগুড়ায় কর্মরত সাবেক এক জেলা খাদ্য কর্মকর্তা জানান, যেসব সংবাদ এত দিন আড়ালে ছিল তা খুঁজে বের করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রীর কথিত একাধিক ক্যাশিয়ার বগুড়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তাদেরকে এখনো দেখা যাচ্ছে। এসব ক্যাশিয়ারের মুখোশ উন্মোচন করলে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে। ওই কর্মকর্তা জানান, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় কৃষকদের নিকট থেকে যেসব ধান সংগ্রহ করা হতো তা কৃষকের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল সরকার দলীয় লোকজনের। আওয়ামী লীগের ওইসব ব্যবসায়ীরা ধান সরবরাহর নামে কৃষক সেজে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব দেখভাল করতেন মন্ত্রীর ভাই মনা মজুমদারের শ্যালক ও জামাতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement