১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

এসেনশিয়াল ড্রাগের সাবেক এমডি’র বিরুদ্ধে ৪৭৭ কোটি টাকার দুর্নীতি

-

সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা: এহসানুল কবীর জগলুলের বিরুদ্ধে ৪৭৭ কোটি টাকার দুর্নীতি রয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের নেতা ডা: এহসানুল কবীর জগলুল দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে একনাগাড়ে ১০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এই কোম্পানিতে। এই ১০ বছরে তার বিরুদ্ধে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অডিটেই তার বিরুদ্ধে এত টাকার দুর্নীতি পেয়েছে। কিন্তু ওই অভিযোগ দুদকে যাওয়ার পর তাকে দুর্নীতি থেকে খালাস দেয়া হয়। জনশ্রুতি আছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আওয়ামী সমর্থক কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি পেলে দুদকের কাজই ছিল তাদের নির্দোষ প্রমাণ করা। এমডি এহসানুল কবীর জগলুল একইভাবে দুর্নীতি থেকে খালাস পেয়েছেন কি না তা আবারো তদন্ত করে দেখার জন্য ইডিসিএলে কর্মরতরা দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৭ আগস্ট রিপোর্ট করা হয়। এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ অক্টোবর ডা: এহসানুল কবীর জগলুল পদত্যাগ করেন ইডিসিএল থেকে।
এমনো অভিযোগ রয়েছে, দুদক থেকে যে তদন্তকারী এসেছে তাদের আপনজনদের ইডিসিএলে চাকরি দিয়ে এবং দুদকের তদন্তকারীদের অর্থ দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলতেন ডা: জগলুল। ডা: জগলুলের ইডিসিএলে নিয়োগ পাওয়ার পর তার হাত দিয়েই নিয়োগ হয়েছে প্রায় তিন হাজার জনবল। এই জনবলের একটি অংশ এই ‘ম্যানেজ’ করার কারণে বেড়েছে, যাদের বেশির ভাগেরই ইডিসিএলে কোনো প্রয়োজন নেই। এভাবে ম্যানেজ করা ছাড়াও ইডিসিএলে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগই নগদ ৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় চাকরি দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সদ্য সাবেক এমডি ডা: এহসানুল কবীর জগলুল। নিজে লাভবান হলেও ইডিসিএলকে ফোকলা করে দিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ডা: জগলুল ছাড়াও ইডিসিএলে পদোন্নতি, বদলি, টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত সিন্ডিকেটের মধ্যে অন্যতম হলেন এমডির এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রিপন পণ্ডিত, হিসাব শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, কোম্পানি সচিব ও অর্থ পরিচালক মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, উপমহাব্যবস্থাপক (ভাণ্ডার বিভাগ) আব্দুল কাইয়ুম খান পাঠান, সৈয়দ জহির উদ্দিন জামাল (মহাব্যবস্থাপক প্রকিউরমেন্ট), মোহাম্মদ শওকত আলী (উপমহাব্যবস্থাপক প্রকিউরমেন্ট), এমডির এপিএস মো: শামীম, হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন, প্রশাসন বিভাগের উপব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান, প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস, প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আহসান রেজা, প্রকিউরমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তা মিজান ও জুয়েল, মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ইসমাইল ও মোহাম্মদ জহিরসহ আরো অনেকে। উপরোক্ত কর্মকর্তারা সদ্য সাবেক এমডি’র আনুকূল্যেই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন এবং ওই দুর্নীতির ভাগ গেছে তার পকেটে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ইডিসিএলে কর্মরতরা জানিয়েছেন, সরকারি এই ওষুধ কোম্পানিতে দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত। দীর্ঘদিন থেকে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি প্রধান অভিযোগ ছিল যে, সরকারি এই কোম্পানির কোনো কোনো ওষুধ ভালো কাজ করে না। ইডিসিএলের এখনকার অনেক ওষুধের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে যে ওষুধগুলো কাজ করে না। এই কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ এমলোডিপিন দিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয় না। সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ এনে খাওয়ার পর উচ্চ রক্তচাপ আরো বেড়েছে এমন অভিযোগ অনেকের। ইডিসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনেক দিন থেকে এই অভিযোগই করে আসছিলেন যে, ওষুধে যে পরিমাণ সক্রিয় উপাদান (অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট) থাকার কথা সে পরিমাণ থাকে কি না তা নিরপেক্ষ ল্যাবরেটরিতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
ইডিসিএলের সব সক্ষমতা কাজে না লাগিয়ে টোল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মাধ্যমে বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি থেকে ওষুধ উৎপাদন করিয়ে এনে দুর্নীতি করেছেন সাবেক এই এমডি ডা: এহসানুল হক জগলুল। এতে প্রতিষ্ঠানের লাভের চেয়ে ব্যক্তির লাভই বেশি হয়। এর ভাগ এমডি নিজে নিয়ে তার সাথে জড়িত দুর্নীতির সিন্ডিকেটে বণ্টন করে ম্যানেজ করে চলেছেন বলে অভিযোগ। তার এই কাজের সাথে মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত, নিরপেক্ষ তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে।


আরো সংবাদ



premium cement