১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

১১ কোটি নাগরিকের তথ্য বিক্রি

২০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন
১১ কোটি নাগরিকের তথ্য বিক্রি -


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভার থেকে ১১ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনায় ২০ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের প্রাথমিক তথ্যও পেয়েছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডিসি মিডিয়া মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ইসির এনআইডি সার্ভারে সংরক্ষিত ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর ইমেজ বা কপি তৈরি করে, বেআইনিভাবে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস নামক প্রতিষ্ঠানের কাছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করা হয় বা তাদেরকে বিক্রির একসেস দেয়া হয়।
পুলিশ বলছে, ১৮২টি দেশী- বিদেশী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছিল এসব তথ্য।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা তালেবুর রহমান জানান, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের এনআইডি বিভাগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ইসির এনআইডি তথ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারবে না।
পুলিশের দাবি, এই চুক্তি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে এনআইডির তথ্য অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি এক মামলার পর ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ১৫ থেকে ২০ জন আসামি আছে। তারা পরস্পরের যোগসাজশে এ কাজের সাথে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- ডেটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতুল্লাহ, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেসের পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরীফ, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী আশরাফ হোসেন, জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব:) রাকিবুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক উপসচিব মো: রেজাউল ইসলাম।

উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান বলেন, নাগরিকদের ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বাণিজ্যিকভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। এতে অনেকগুলো সংস্থা জড়িত আছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের যারা জড়িত ছিল তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। কম্পিউটার কাউন্সিল ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে যে তথ্যগুলো বিক্রি বা হস্তান্তর করেছে সেটা কোন আইনে, কিসের মাধ্যমে, কী স্বার্থে করেছে সেটা উদঘাটন করা হবে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর এনআইডি যাচাই সভা গ্রহণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়। ওই চুক্তির দুই অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নির্বাচন কমিশনের তথ্য-উপাত্ত কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিনিময় বা বিক্রি করতে পারবে না। সেটি লঙ্ঘন করে কম্পিউটার কাউন্সিল ডিজিকনের সহায়তায় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছে। কারা কিভাবে লাভবান হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখছি।


আরো সংবাদ



premium cement