১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ঢাকেশ্বরীতে মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা সত্য নয়

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বন্যার্তদের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া দুই লাখ টাকা গ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


বিএনপি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা সত্য নয়। গতকাল বুধবার দুর্গাপূজার ষষ্ঠীতে ঢাকার ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে গিয়ে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবিগুলোর প্রতি সর্বাত্মক সহানুভূতি রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, এই দেশটা কারো একার নয়। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি অসম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
হিন্দু সম্প্রদায়কে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এই পূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, বাংলাদেশ হোক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত। এই প্রত্যাশা করছি।

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। গতকাল বুধবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপে যান বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা সেখানে পৌঁছলে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ কমিটির অন্য সদস্যরা বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান।

এ সময় মির্জা ফখরুল পূজামণ্ডপে আগত পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন, যাকে আপনারা মা দুর্গা বলেন, সেই দেবীর আবির্ভাব হয়েছিল অসুরকে বদ করার জন্য, অন্যায়কে দূর করার জন্য এবং মানুষে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার জন্য। আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সাথে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি। দাবিগুলোর প্রতি আমাদের সর্বাত্মক সহানুভূতি রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই বলে থাকে তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। কিন্তু অতীতে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে তাদের লোকেরাই ছিল। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের যত জমি-জমা, সম্পত্তি দখল করে নেয়া হয়েছে তার মূলেও তারা ছিল।

তিনি বলেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে। আমাদের সরকার আসলে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবই।
৮ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘আমাদের ওপর যেসব অন্যায় হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে আমরা তার ন্যায়বিচার ও দোষীদের থদৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আশা করি আপনি আমাদের সাথে থাকবেন, আপনার দল আমাদের সাথে থাকবে। কেনো আশা করি? ৫ আগস্টের পরেও আপনার দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের মন্দির পাহারায় ছিলেন, আমাদের বাড়িঘর পাহারায় ছিলেন। সে জন্য আজকের দিনে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আপনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে পূজা কমিটির টিমের সাথে আপনাদের নেতৃবৃন্দ সাংগঠনিকভাবে আলাপ-আলোচনা করেছেন। পূজায় আমাদের নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত থকুমার দেব দুর্গাপূজার প্রথম দিনে ষষ্ঠীতে ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে আসার জন্য বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।

‘বিদেশী কিছু গণমাধ্যমের অপপ্রচার’ : মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজকে এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের মানুষ যখন আনন্দিত, যখন পরিবর্তনের একটা আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, সেই সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশী কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যা একেবারেই সত্য নয়। তিনি বলেন, কিছু ঘটনা যে ঘটেনি সে কথা আমি বলব না। কিছু ঘটনা ঘটেছে, তবে তা কোনো সম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না, তা ছিল রাজনৈতিক।

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম-লড়াই করেছি এবং এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন, অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার বেড়াজালে আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত আটক আছি। কিছু দিন আগে যে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান হলো সেখানে ১৫০০র উপরে ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাব, যাতে শহীদদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের যদি কোনো ব্যক্তি বা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে তাদেরও আমি ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের ইসহাক সরকার, হামিদুর রহমান হামিদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্যসচিব তপন দেসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিএনপি মহাসচিব দলীয় নেতাদের নিয়ে বনানী পূজামণ্ডপও পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement