২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উসকানির ফাঁদে তৃণমূল আ’লীগ

-

শীর্ষ নেতৃত্বের উসকানির ফাঁদে পড়ে বেপরোয়া আচরণ করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হামলা, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের আশ্বাস দেয়া হচ্ছে- দুই মাস পেরিয়ে গেলেও দেশে এখনো স্থিতিশীলতা আসেনি, তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না- এ সরকার বেশিদিন টিকবে না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য ইস্যুভিত্তিক এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার-প্রচারণার জন্য তৃণমূলকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও সংঘর্ষ বাধিয়ে দেয়া ও সঙ্ঘাত জিইয়ে রাখার জন্যও ছক কষছে আওয়ামী লীগ। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেন খোদ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির সব পর্যায়ের নেতামন্ত্রী ও এমপিসহ আত্মগোপনে চলে যান। এরপর দলটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য- বিবৃতি পাওয়া না গেলেও আওয়ামী লীগ প্রধানের একাধিক অডিওবার্তা প্রকাশ পেয়েছে, যা নিয়ে দেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি গোপালগঞ্জ সদরের এক ছাত্রলীগ নেতার সাথে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার একটি অডিও বার্তা প্রকাশ পায়। ওই অডিওতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুদখোর ইউনূসের কথা শুনে লাফাচ্ছে জামাতে, ওরা কয়েক দিন আছে? সামনে আর একমাস টেকে কিনা দেখ। যারা বাড়াবাড়ি করছে তারা কোথায় যাবে বুঝে নিয়েন। আর এসব তালিকা করে রাখো, হিসাবটা যেন ভুল না হয়,... এবার গুণে গুণে কিন্তু হিসাব নেয়া হবে। ২০০৯ সালেও সরকারে এসে কাউকে কিছু বলি নাই।’ এর আগে এক অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি পাশেই আছি যাতে যেকোনো সময় চট করে দেশে ঢুকে যেতে পারি।’

সম্প্রতি এক অডিও বার্তার পরই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সামিউল বাসীর সামি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘কাউন্টডাউন শুরু।’ কৃষক লীগের ওই নেতা তার পোস্টে হ্যাস ট্যাগ দিয়ে স্টেপ ডাউন ইউনূস লিখেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ দফতর সম্পাদক আরিফুর রহমান রাসেল তার পোস্টে লিখেন, ‘অধৈর্য হচ্ছেন কেন? দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ওদেরকে কাঁধে তুলেছেন তো আছাড় দেবার জন্যই। সামিউল বাসীর সামি ও রাসেলের মতো অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এরকম সমালোচনা করছেন।’

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্টের ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতৃত্বের আচরণে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়েছে। কেউ কেউ নিজেদের গা বাঁচাতে অন্য রাজনৈতিক দলে ভিড়ছেন। ওই সব নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে দলীয় প্রধান মাঝে মাঝে দুই-একটি অডিওবার্তা দিচ্ছেন। শীর্ষ নেতৃত্বে এসব অডিও বার্তায় তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সূত্র আরো বলছে, এসব বার্তার মাধ্যমে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির সুবিধাভোগী সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উৎসাহিত হচ্ছেন এবং তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে। দলটির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা আশায় বুক বাঁধছেন- দল আবারো ক্ষমতা ফিরে পাবে। এজন্য শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি গ্রামের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে এবং বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য কৌশলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের নির্দেশনা মানতে গিয়ে বিপদেও পড়ছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। হামলা, মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন কেউ কেউ আবার এসব ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘদিন শাসন করা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগই এখনো বিশ্বাস করছে- তারা আবার যেকোনো সময় ক্ষমতায় চলে আসবে। এজন্য তারা নানা উসকানিতে পা রাখছে। কিন্তু আসলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার দুঃশাসন এ দেশের মানুষ কখনোই ভুলবে না। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা যে অডিও-ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন তা পরিকল্পিত। নির্বাচন সামনে রেখে এর মাধ্যমে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার একটি উপায় বের করছে।

রাজনীতি বিশ্লেষক ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা মো: ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিদেশে বসে শেখ হাসিনার সাথে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে মাঝে কিছু কথপোকথন প্রকাশ পাচ্ছে। এভাবে আসলে রাজনীতি হয় না। এই যে গোপালগঞ্জের ছাত্রলীগের এক নেতার সাথে যে অডিও বার্তা বের হয়েছে- এটা বৃহত্তর অর্থে কোনো প্রভাব পড়ে না, কারো কোনো কিছু যায় আসে না। তবে কিছু নেতাকর্মী হয়তো প্রভাবিত হতে পারে। প্রভাবিত হয়ে নেতাকর্মীরা যদি অন্তর্বর্তী সরকারের বিপক্ষে কিছু বলার বা লেখার চেষ্টা করেন কাজের কাজ কিছুই হবে না বরং তাদের বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান তাহলে কোনো স্টেটমেন্ট দিয়ে বলতে পারেন। এটা সবার জন্য ভালো।

 


আরো সংবাদ



premium cement