০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

প্রশাসনে স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ থাকা বিপজ্জনক : রিজভী

গুলশানে ডেঙ্গু সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করছেন রুহুল কবির রিজভী : নয়া দিগন্ত -

পতিত স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ প্রশাসনের মধ্যে থাকলে দেশকে তারা বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আপনারা মহানুভবতা, মানবতা অবশ্যই রাখবেন। কিন্তু যারা নিজেরা মানবতা দেখায়নি, যারা মহানুভবতা দেখায়নি, যারা শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করতে, সেই স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ যদি প্রশাসনের মধ্যে থাকে তারা আপনাদের প্রতি পদে পদে বাধা দিবে। তাদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ করুন। তাদের স্থলাভিষিক্ত করুন তাদের যারা গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে যারা ছিল অথবা যারা নিরপেক্ষ ছিল তাদের। তারা যে দলের সমর্থকই হোক না কেন এ সব মেধাবী লোকদের আপনারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসান। সেটা না হলে দেশকে তারা বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। কারণ তাদের পিছে একটি বিশেষ পরাশক্তির প্রভু আছে, যাদের আশ্রয়ে তারা আছে।’
রিজভী বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের পুনরুত্থান যাতে না ঘটে, আর যেন কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়, আর যেন কোনো মায়ের সন্তানকে হত্যা না করা হয়। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন, শেখ হাসিনার পুনরুত্থান মানে দেশ হবে এক ভয়ঙ্কর বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমি যাতে তৈরি না হয় তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে, তাদেরও অন্তরে সততার আলো নিয়ে খুব দ্রুত গতিতে কাজ করতে হবে। সেই পথ, সেই মত তৈরি করতে হবে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে মাঠ দরকার, সেটি তাদের তৈরি করতে হবে। তবে সেটি যেন প্রলম্বিত না হয়, দীর্ঘায়িত না হয়।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লালমনিরহাটের উর্মি, তিনি আবু সাঈদের মতো একজন মহিমান্বিত আত্মদানকারী, সাহসী বীর তরুণ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র যে অকাতরে নিজের জীবন দিয়েছেন, বুক চিতিয়ে হাসিনার পুলিশের গুলি বরণ করেছে, তাকে বলছে সন্ত্রাসী, তাকে বলছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। এদের মতো লোকজনই তো প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তো প্রশাসনের একটি অংশ, তা হলে সচিবালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিভাবে এই স্বৈরাচারের দোসররা থাকে। একটা বিপ্লবের সরকারকে একটা গণ আন্দোলনের সরকারকে এরাতো ব্যর্থ করতে চাইবেই, সেটা তো আমরা প্রত্যেকেই জানি।’
প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে তাদের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন এবং যাদের পদায়ন হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে আওয়ামী প্রশাসন লুট করেছে জনগণের টাকা, অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে, আপনারা বঞ্চিত ছিলেন আপনাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল বিরোধী দলের লোক হিসেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে কায়দায় দুর্নীতি করেছে, তা আমরা খবরের কাগজে দেখছি, তাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কাহিনী পড়েছি। একজন ডিসি বা অ্যাডিশনাল কমিশনার কিংবা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা শেখ হাসিনার আমলে যে কাজ করেছে, আপনারাও যদি সেই পথ অনুসরণ করেন, তাহলে আপনাদেরও ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে মাফিয়া অর্থনীতি তৈরি করেছিল, যার মধ্য দিয়ে মাফিয়া ব্যবসায়ীরা একের পর এক ব্যাংক তারা একত্রীকরণ করেছে। তারা এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের অর্থনীতির মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়েছে। এক এস আলম ৮ থেকে ৯টি ব্যাংক আত্মসাৎ করেছে। এখানে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে নিজের বিভিন্ন কাজে লাগিয়েছে এবং বিদেশে পাচার করেছে। এক এস আলম সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ বিলিয়ন টাকা লোপাট করেছে। এটা তো আজকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে। সুতরাং এই সব বড় বড় রুই, কাতলা, জনগণের সঞ্চিত টাকা আত্মসাৎ করে মাফিয়া অর্থনীতি তৈরি করেছে এবং শেখ হাসিনার লুণ্ঠনের নীতি, হরি লুটের নীতি বাস্তবায়ন করেছে। তারা কিন্তু বসে নেই, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে তারা পাচার করেছে। সেই টাকা দিয়ে তারা নানাভাবে নানা কায়দায় দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাচ্ছে।’
রিজভী আরো বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সিঙ্গাপুরে একটি লবিস্ট ফান্ড ভাড়া করেছে তাদের পক্ষে ওকালতি করার জন্য। এগুলো কিন্তু খুব সাধারণ কথা নয়, এগুলো অত্যন্ত ইঙ্গিতবাহী কারণ ওদের অনেক টাকা আছে।’
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডা: জাহিদুল কবির, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, আরিফুর রহমান তুষার, ছাত্রদলের নেতা ডা: আব্দুল আউয়াল, মাসুদুর রহমান মাসুদ, রাজু আহমেদ প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল