০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

নির্বাচন সামনে রেখে ভারতের নেতারা উদ্ভট কথা বলছেন : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

-


বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের নেতারা উদ্ভট কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করব ভারতের পক্ষ থেকে এ ধরনের কথাবার্তা (বাংলাদেশবিরোধী) যত কম বলা হয় বা না বলা হয়। আমরা যে প্রতিবাদ জানিয়েছি, আপাতত সেটি যথেষ্ট। দেখা যাক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। তাদের ওখানে নির্বাচন আছে। এ জন্য তারা উদ্ভট কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলানো হবে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর এমন মন্তব্যে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বক্তৃতায় বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের কারণে ঝাড়খন্ডের ভোটের সংখ্যা পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন বলে ছড়িয়ে পড়া খবর সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতে খোঁজ করেছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও খোঁজ করেছি। কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি হাসিনা কোথায়। তবে আপনারা যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি যে, তিনি সম্ভবত আজমানে (আরব আমিরাতের দ্বীপ) গেছেন। এটি অফিসিয়ালি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেও আমরা সফল হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত সরকার হাসিনাকে দিল্লি থেকে আমিরাতে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এটি আমি বলতে পারব না। যুক্তরাষ্ট্রকে জিজ্ঞেস করেন ওরা চাপ দিয়েছে কি না।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে বিগত সরকারের অনেকে ভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে- এমন খবরের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধু নিজ দেশে ফেরার জন্য, অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য না। অন্য দেশে যেতে হলে পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে চাওয়া হবে কি না- জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, প্রয়োজন হলে তালিকা চাওয়া যেতে পারে। মামলা রয়েছে এমন কয়েকজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকে ভারতে ঘুরতে দেখা গেছে। তাদের ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা ভারতে ঘোরাঘুরি করছে এমন খবর আপনারা যেমন পত্রপত্রিকায় দেখেছেন, আমিও তেমনি দেখেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। আর যেহেতু মামলা হচ্ছে বা হয়েছে, আদালত যদি তাদের হাজির করতে বলেন, আমরা অবশ্যই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, লেবানন থেকে যেসব বাংলাদেশী ফিরে আসতে চান, তাদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। যুদ্ধাঞ্চল থেকে প্রবাসীদের কিছুটা উত্তরে সরে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে (আইওএম) অনুরোধ করেছি, তারা যেন ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে দেয়, যাতে আগ্রহী বাংলাদেশীরা দেশে ফিরতে পারেন।

ডিসেম্বরের মধ্যে ২০ হাজার ভিসা আবেদন নিষ্পত্তির আশ্বাস ইতালির : দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষারত ইতালির ওয়ার্ক ভিসাপ্রত্যাশীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নানা ভোগান্তির কথা তুলে ধরে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়। বর্তমানে ইতালি দূতাবাসে প্রায় ৪০ হাজার ওয়ার্ক ভিসার আবেদন জমা রয়েছে। এ ব্যাপারে তৌহিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অনেক ভিসা আবেদন আটকে আছে। ২০ হাজার ভিসা কেস রোম থেকে ক্লিয়ার্ড হয়েছে। কিন্তু ভিসাগুলো দেয়ার গতি খুব কম। ইতালির রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার কথা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ ভিসাগুলো দিয়ে দেয়া হবে বলে রাষ্ট্রদূত আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। এ ছাড়া দূতাবাসের জনবল বাড়াতে অতিরিক্ত দুই-তিনজন কর্মকর্তা ইতালি থেকে ঢাকা আনা হচ্ছে। এসব কর্মকর্তা কাজে যোগ দিলে ভিসা প্রক্রিয়ায় গতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, ভিসা দেয়া বা না দেয়া একটি দেশের সার্বভৌম অধিকার। কোনো নাগরিককে ভিসা কেন দেয়া হয়েছে বা দেয়া হয়নি, সেটি আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি না। ভিসার জন্য মিছিল-সমাবেশ বা দূতাবাস ঘেরাও করলে উল্টো ফল হতে পারে। এ কারণে ভয় পেয়ে দূতাবাস থেকে কর্মকর্তারা চলে গেলে ভিসা দেয়াই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল