০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ময়মনসিংহে আরো ৫০ গ্রাম প্লাবিত

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট সড়ক গতকালও হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে থাকতে দেখা যায় : নয়া দিগন্ত -

অতিবৃষ্টি, ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কোনো কোনো এলাকায় আরো অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরো ৫০টি গ্রাম। বর্তমানে তিন উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছেন। খাদ্যসঙ্কটে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, ১০ হাজার ৭৫১টি পুকুর ও খামারের এক হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। সাত হাজার মৎস্যচাষির পাঁচ হাজার ৯৮৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জানান, বন্যাকবলিত উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও শিশুসহ দুই সহ¯্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তিন উপজেলায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ঘোষগাঁও, দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, বাঘবেড়সহ ৭টি ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে ঘোষগাঁও ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। জমির ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী মানুষ গৃহপালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলার উত্তরাঞ্চলে পানি কিছুটা কমলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে পানি বেড়েছে। ২৬টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার দিনের টানা দুর্ভোগে দিশেহারা মানুষ। ধোবাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ওয়াারিছ মেম্বার জানান, পানিবন্দী মানুষ চিঁড়া-মুড়ি খেয়ে দিনযাপন করছেন। তারাকান্দি গ্রামের কুলসুম আক্তার বলেন, ‘চারদিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছি। বাড়ির উঠানেও হাঁটুপানি। রান্না করা যাচ্ছে না। হাঁস-মুরগি মরে গেছে। মান্দালিয়া গ্রামের রামিজা খাতুনথ জানান, চুলা ডুবে যাওয়ায় রান্না করতে পারছেন না। চারদিন ধরে অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম সরওয়ার তুষার জানান, ৮ হাজার ৪২০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ও ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির ফসল আংশিক তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রকৌশলী আবু বকর ছিদ্দিক জানান, ১২৭ কিলোমিটার রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান, গতকাল (সোমবার) নতুন করে উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের ২৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উজানের পানি কিছুটা কমছে। দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তিনি।

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হালুয়াঘাটের পাঁচটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধারকার্যক্রম পরিচালনা করছে। উজানের পানি কমে যাওয়ায় ভুবনকুড়া, জুগলী, গাজিরভিটা, সদর ও পৌরসভার পানি নেমে গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আফজাল এইচ খান ও সালমান ওমর রুবেল বন্যার্তদের মাঝে পৃথকভাবে রান্না করা খাবার দিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির আব্দুল করিমের নেতৃত্বে হালুয়াঘাটের বিভিন্ন গ্রামে রান্নাকরা খাবার ও শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন। তাবলিগ জামায়াতসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণকার্যক্রমে অংশ নিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ জানান, উপজেলার উজান দিকে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়নের পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি এখন ভালো।
ফুলপুর সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এছাড়া ফুলপুর সদর, রূপসী, বালিয়া, বওলা, ভাইটকান্দি ও রামভদ্রপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জমির আমন ফসল ও সবজি বিনষ্ট হয়েছে। পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ জানান, এক হাজার ৬২০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ ও দুই হাজার ৪৪০ হেক্টর জমির আমন ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৫ হেক্টর জমি সবজি ফসল সম্পূর্ণ ও ৭০ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement