০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বার্ষিকীতে তেলআবিবে হামাসের রকেট হামলা

-

- ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল মহিমান্বিত : হামাস
- হলোকাস্ট চালাচ্ছে ইসরাইল

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজা ভূখণ্ডের খান ইউনুস থেকে ইসরাইলের তেলআবিব ও আশপাশের অঞ্চলে পাঁচটি রকেট ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরাইলি গণমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় হামলার সতর্কতা জানিয়ে সাইরেন বেজে ওঠার পরপরই কয়েকটি রকেট তেলআবিব ও আশপাশে আঘাত হানে। এ সময় ইসরাইলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেলআবিব, আরেক শহর কফর চাবাদ ও রিশন লেজিওনেও রকেট হামলার সতর্কতা জানিয়ে সাইরেন বেজে ওঠে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রকেট হামলার ক্ষয়ক্ষতি শনাক্ত করা হয়েছে। বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরের কাছে তেলআবিবের হোলন এলাকায় ধ্বংস করা ক্ষেপণাস্ত্রের শার্পনেলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কফর চাবাদে একটি রকেট সরাসরি আঘাত হেনেছে। এসব ঘটনায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। ইসরাইলের মেগান ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের শার্পনেলের আঘাতে আহত ত্রিশোর্ধ্ব দুই নারীকে তাদের চিকিৎসা কর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর শমির মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে গেছেন। তাদের আঘাত তেমন গুরুতর নয়।
এমডিএ আরো জানায়, তাদের চিকিৎসাকর্মীরা আরো কয়েকজনকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এদের কেউ কেউ অতিরিক্ত উদ্বেগ ও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন আর অন্যরা জরুরি আশ্রয়স্থলে দৌঁড়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আঘাত পান। হামাসের সামরিক বিভাগ আল কাসসাম ব্রিগেড তাদের দাফতরিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেয়া এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তারা ইসরাইলের ‘অনেক ভেতরে’ রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলা ও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বার্ষিকীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি থেকে এসব রকেট ছোড়া হয়েছে।

৭ অক্টোবরের হামলা ছিল মহিমান্বিত : হামাস
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে যে হামলা চালিয়েছিল হামাসের যোদ্ধারা, তাকে ‘মহিমান্বিত’ বলে উল্লেখ করেছে তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব। ৭ অক্টোবরের হামলা এবং তার ফলে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর চলমান ভয়াবহ আগ্রাসনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক ভিডিওবার্তায় এ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে হামাস।
ভিডিও বার্তায় কথা বলেছেন হামাসের মুখপাত্র খলিল আল হায়া। তিনি বলেছেন, “শত্রুরা পুরো বিশ্বের সামনে এমন একটি বিভ্রম সৃষ্টি করেছিল যে শ্রেষ্ঠত্ব এবং সক্ষমতায় তারা অদ্বিতীয়। তাদের সেই বিভ্রম ভেঙে দিয়েছে গত ৭ অক্টোবরের হামলা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলা এ কারণেই মহিমান্বিত। ফিলিস্তিনের জনগণ, বিশেষ করে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা তাদের প্রতিরোধ, দৃঢ়তা ও রক্ত দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করছেন।”হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের সবাই গত প্রায় এক যুগ ধরে কাতারে বসবাস করছেন। খলিল আল হায়াও কাতার থেকেই দিয়েছেন ভিডিওবার্তাটি। গত ৩১ জুলাই এক আততায়ীর হামলায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর থেকে গুরুত্ব বেড়েছে হায়ার।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সীমান্তে হামলা চালিয়ে দেশটির ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামাস এবং তাদের মিত্র প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) অন্তত এক হাজার যোদ্ধা। সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০৫ জনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে ২৪২ জনকে ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।
বস্তুত ১৯৪৭ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল রাষ্ট্রটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। হামাসের সেই হামলার জবাব দিতে এবং বন্দীদের উদ্ধারের নামে ওই দিন থেকেই গাজায় বর্বর হামলান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। এমন কোনো দিন নেই যে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হাতে ফিলিস্তিনি নিহত হয়নি। গত এক বছরে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় এক লাখ। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতা করে আসছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে একটি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য উভয়পক্ষকে রাজি করাতে বিস্তর চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে চলতে সম্মত হয়নি।

হলোকাস্ট চালাচ্ছে ইসরাইল : তেমনি হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা খালিদ মেশাল বলেছেন, গাজায় ইসরাইল যা ঘটাচ্ছে, তা কেবল হলোকাস্টের সঙ্গেই তুলনীয়। গতকাল সোমবার সকালে দেয়া এক ভাষণে তিনি আরও বললেন, গাজায় সরাইলিদের বিরুদ্ধে শিগগির বিজয় আসবে। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হামাসের এই নেতা আরও বলেন, সব ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেই ৭ অক্টোবরের ঘটনা ঘটতে পেরেছে এবং সেই দিনের পর হামাস তার কৌশলগত ফল অর্জন করেছে। এ সময় তিনি হিজবুল্লাহ, হাউছিসহ যেসব সংগঠন ফিলিস্তিনি জনগণ ও হামাসকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানান। আরব দেশগুলো গাজায় অর্থায়ন করায় তাদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।
খালিদ মেশাল বলেন, গাজায় ইসরাইল তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েই লেবাননে নতুন যুদ্ধ ফ্রন্ট খুলেছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, ইসরাইল জর্দান ও মিসরের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করছে। হামাসের অন্যতম শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘ইসরাইল যদিও ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু তারপরও সামগ্রিকভাবে তারা পরাজিত হয়েছে।’ এ সময় তিনি ফিলিস্তিনিদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনারা হতাশ হবেন না, আমরা শিগগির বিজয়ী হবো।’

 


আরো সংবাদ



premium cement