লেবাননে রাতভর ব্যাপক হামলা ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৭
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাংশে হিজবুল্লাহর শক্তিকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শহরতলিতে গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত একটানা ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এসব হামলায় কমপক্ষে আরো ২৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৯৩ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে গত ১১ দিনে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় শতাধিক শিশু নিহত এবং আহত হয়েছে ৬৯০ জনের বেশি শিশু। লেবাননে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ও প্রয়োজনীয় সেবা সরবরাহের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ। আলজাজিরা, এপি ও রয়টার্স।
এদিকে রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বিমান হামলায় একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে পুরো বৈরুত শহর বারবার কেঁপে ওঠে, বেশ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বিস্ফোরণের লাল-সাদা ঝলকানি দেখা যায়। হিজবুল্লাহর শক্তিকেন্দ্র বৈরুতের দাহিয়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর গত কয়েক দিনের এসব হামলায় তার উত্তরসূরি হাশেম সাফিউদ্দিনও নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
শনিবার লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার থেকে সাফিউদ্দিনের সাথে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ইসরাইল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য নতুন নেতাকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে তারা। লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈরুতের কেন্দ্রস্থলের দক্ষিণে দাহিয়া আবাসিক এলাকায় ইসরাইলের টানা হামলার কারণে উদ্ধারকর্মীরা সেখানে যেতে পারছে না। তাই সেখানে কী পরিণতি ঘটেছে তার চিত্রও পরিষ্কার হচ্ছে না। আর সাফিউদ্দিনকে নিয়ে হিজবুল্লাহ এ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
তাছাড়া ইসরাইল লেবাননে তাদের হামলা বিস্তৃত করা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার প্রথমবারের মতো দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সুন্নি প্রধান শহর ত্রিপোলিতে হামলা চালিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ডানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছে, তারা লেবানন থেকে তৎপরতা চালানো হামাসের দুই সদস্যকে হত্যা করেছে।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা আরো জানিয়েছেন, শনিবার রাতে বৈরুতের দক্ষিণাংশের এলাকাগুলোতে অন্তত আটবার আঘাত হানা হয়ে। বিমানবন্দরের কাছেও কিছু হামলা হয়। এর আগে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী কিছু বাসিন্দাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল। ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র হ্যাগারি শনিবার জানান, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনীর স্থল অভিযানে হিজবুল্লাহর ৪৪০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন আর ইরানের সমর্থনপুষ্ট বাহিনীটির ২০০০ লক্ষ্যস্থল ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। হিজবুল্লাহ তাদের কতজন যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে তা প্রকাশ করেনি।
ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযানে এ পর্যন্ত তাদের ৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি হামলায় লেবাননের কয়েক শ’ বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরাইল বলছে, তাদের উত্তরাঞ্চলে গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হিজবুল্লাহর আক্রমণে ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের নিরাপদে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনতেই লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে তারা।
দক্ষিণ লেবাননের ২৫ গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ : এদিকে দক্ষিণ লেবাননের ২৫টি গ্রাম থেকে লোকজনকে জরুরি ভিত্তিতে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এমন নির্দেশনার পর ধারণা করা হচ্ছে যে, ইসরাইল সেখানে স্থল অভিযান আরো বিস্তৃত করছে। খবর আল জাজিরার। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরাই বলেন, হৌলা, মেইস আল-জাবাল এবং বিলদা এলাকার লোকজনকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হবে অথবা নিজেদের জীবনকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণের দিকে যাবেন না। তিনি আরো বলেন, লেবাননের বাসিন্দাদের উত্তরে আওয়ালি নদীর দিকে যেতে হবে। গত এক বছরে দক্ষিণ লেবাননের বেশ কিছু তালিকাভুক্ত গ্রামে বারবার বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে কাফার কিলায় যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তবে ইসরাইলি বাহিনীকে আটকাতে লড়াই করে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ। লেবাননে ঢুকে পড়া বেশ কয়েকজন ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যার দাবি করেছে তারা। হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা তাদের ভূখণ্ডে ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিহত করতে সীমান্তে কামান নিক্ষেপ করেছে। সেই সাথে উত্তর ইসরাইলের মানারায় নিহত ও আহতদের সরিয়ে নেয়ার সময় ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারা।
লেবানিজ সেনাবাহিনীকে সহায়তা : লেবানিজ আর্মড ফোর্সেসকে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র তহবিল দিয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া লেবানন ও ইসরাইলের সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজনকে তাদের ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে আনতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলিউশন ১৭০১ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। গতকাল রোববার মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এলবিসি ইন্টারন্যাশনাল এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করে।
খবরে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে বৈঠকে লেবাননের নিরাপত্তা ও মানবিক সঙ্কটের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়েও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশই একমত হয়েছে যে, লেবাননের সশস্ত্রবাহিনীকে অর্থায়ন করে তাদের শক্তিশালী করতে হবে। সে জন্য তারা তাদের আর্থিক সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের জরুরি ত্রাণ হিসেবে ১৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা করে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং সব ইসরাইলি বন্দীকে মুক্তির বিষয়ে আলোচনা আরো অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেইসাথে তাদের মানবিক ত্রাণসহায়তার বিষয়েও তারা গুরুত্বারোপ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট মোচন ও পরিবর্তিত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সৌদি আরবের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা