০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

লেবাননে নিহত ২ হাজার ছাড়াল

-

- লেবানন-গাজায় একসাথে যুদ্ধবিরতি চায় ইরান
- হিজবুল্লাহর প্রতিরোধে পিছু হটল ইসরাইলি সেনারা
- ইসরাইলের সব গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংসের হুঁশিয়ারি ইরানের

লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১২টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গতকাল শনিবার সকালেও হামলা অব্যাহত ছিল। এ নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননজুড়ে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ২৬১ জন নারী ও ১২৭টি শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়। এদিকে লেবাননের উত্তরাঞ্চলীয় শহর ত্রিপোলিতে গতকাল ভোরে প্রথমবারের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। খবর : আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, মিডলইস্ট আই ও আল-মায়াদিন।
অন্য দিকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে স্থল অভিযান চালানোরও পরিকল্পনা করছেন ইসরাইলি সেনারা। সূত্রের মাধ্যমে রয়টার্স জানতে পেরেছে, ত্রিপোলিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ওই হামলা হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের এক কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিহত হয়েছেন। হামাস-সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলায় তাদের এক নেতা নিহত হয়েছেন। সুন্নি অধ্যুষিত বন্দরনগরী ত্রিপোলিতে হামলার ব্যাপারে ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেনি। শনিবারও বৈরুতে একের পর এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ শহরতলিতে যা দহিয়েহ নামে পরিচিত। ওই এলাকায় হামাস ও হিজবুল্লাহ স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এলাকাটি খ্রিষ্টান এলাকা আচরাফিহ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে। ফলে ওইসব এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বা শহরের অন্যপাশে আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষ। ফলে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত এখন অস্থায়ী তাঁবুতে পরিণত হয়েছে।
ইসরাইলি হামলার মুখে লেবাননে ১২ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। অব্যাহত বিমান হামলার মুখে রাজধানী বৈরুতের হাজারো বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়িঘর ছেড়েছেন। ইসরাইল দাবি করছে যে, তারা হিজবুল্লাহর স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রাণ হারাচ্ছে বেসামরিক নাগরিক। এমন পরিস্থিতিতে উত্তর ইসরাইলে বিমান হামলার সতর্কতাগুলো অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, উত্তর লেবাননের ত্রিপোলির একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের নেতার নাম সাঈদ আতাল্লাহ। শনিবার হামাস-সমর্থিত মিডিয়া জানিয়েছে, হামলায় তার পরিবারের আরো তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। ত্রিপোলির ওই শরণার্থী শিবিরে সপরিবার বসবাস করতেন সাঈদ আতাল্লাহ। ইসরাইল এই হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
যুদ্ধবিরতি চায় ইরান : এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি এ কথা বলেছেন, লেবাননে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে তেহরান। তবে সে চুক্তিতে হিজবুল্লাহর সমর্থন থাকতে হবে। এ ছাড়া একই সাথে গাজায় যুদ্ধ বন্ধেরও উদ্যোগ নিতে হবে। আরাকি বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করব এই শর্তে যে, তা প্রথমত লেবানিজ ও দ্বিতীয়ত ‘প্রতিরোধকারীদের’ কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে। আর তৃতীয়ত, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিও চূড়ান্ত হতে হবে।” ইরানের সর্বোচ্চ কূটনীতিবিদ আরাকি বর্তমানে বৈরুতে আছেন। ‘এই জটিল পরিস্থিতিতে’ তার বৈরুতে অবস্থান, লেবাননের প্রতি ইরানের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

পিছু হটলো ইসরাইলি সেনারা : হিজবুল্লাহর বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল শনিবার মধ্যরাতে আদাইসেহ নামের একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম দিয়ে আবারো এই চেষ্টা চালিয়েছিল ইসরাইলি সেনারা। তবে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। আদাইসেহ গ্রামে ইসরাইলি সেনাদের সাথে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হয়। ওই সময় ইসরাইলি সেনারা পিছু হটে। যেসব সেনা লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। আদাইসেহ গ্রামের লড়াই নিয়ে দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সাথে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। তবে এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি। এমনকি অভিযানে গিয়ে কত সেনা হতাহত হয়েছে সে ব্যাপারেও মুখ খোলেনি আইডিএফ। গত দুই সপ্তাহ ধরে গাজার যুদ্ধ অনেকটাই লেবাননের দিকে চলে গেছে। এই সময়ের মধ্যে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ অনেক উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইল। এ ছাড়া পেজার এবং ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হিজবুল্লাহর কয়েক হাজার যোদ্ধাকে আহত করেছে। ধারণা করা হয়েছিল, এসব হামলার জেরে হিজবুল্লাহ সীমান্তে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়তে পারবে না। তবে ইসরাইলি সেনারা স্থল হামলা চালাতে যখন লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা চালানো শুরু করে তখনই হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা তাদের লক্ষ্য করে গুপ্ত হামলা শুরু করে। এতে করে স্থলহামলার প্রথমদিনই ইসরাইলের চৌকস ব্রিগেডের আট সেনা নিহত হয়।

গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংসের হুঁশিয়ারি : ইরানে নতুন করে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করলে ইসরাইলের সবগুলো জ্বালানি স্থাপনা একসাথে ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল আলী ফাদাভি শুক্রবার লেবাননের আল-মায়াদিন টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানে হামলা চালালে নিজের অস্তিত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে ইহুদিবাদী ইসরাইল। তিনি বলেন, দখলদার দেশটি যদি কোনো ভুল করে তাহলে আমরা এটির জ্বালানির সব উৎস, সবগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সব তেল শোধনাগার ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে একযোগে হামলা চালাব। ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইহুদিবাদী সেনাদের ভয়ঙ্কর সব অপরাধের শাস্তি দিতে গত মঙ্গলবার রাতে ইরান ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর তেলআবিব ইরানের তেল ক্ষেত্রগুলোতে হামলা চালানোর হুমকি দেয়। ওই হুমকির প্রেক্ষাপটে জেনারেল ফাদাভি পাল্টা এ হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বলেন, ইরান একটি বিশাল দেশ যার রয়েছে বহুমুখী অর্থনৈতিক কেন্দ্র, অথচ ইসরাইলের মাত্র তিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও কয়েকটি শোধনাগার রয়েছে। জেনারেল ফাদাভি বলেন, ওইসব কেন্দ্রে একযোগে হামলা চালানোর সক্ষমতা ইরানের রয়েছে। এদিকে ইরানের সেনাবাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল আব্দুর রহিম মুসাভি শুক্রবার আল-মায়াদিনকে বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি কোনো হেয়ালিপনা করে তাহলে তাকে ‘ভয়ানক ও ধ্বংসাত্মক জবাব’ দেয়া হবে।
সামরিক স্থাপনায় হিজবুল্লাহর হামলা : গতকাল শনিবার পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর সাতটি হামলা চালানোর দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি শনিবার টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জানায়, তারা উত্তর ইসরাইলের হাইফা শহরের কাছে রামাত ডেভিড বিমান ঘাঁটিতে ফাদি-১ রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইসরাইলের এই স্থাপনাটি লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ হামলার ফলে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে বিশেষ করে নাজারেথসহ বেশ কিছু শহরে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে।
হিজবুল্লাহ আরো জানায়, তাদের যোদ্ধারা একটি ইসরাইলি মেরকাভা ট্যাংককে গাইডেড অ্যান্টি-আর্মার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যার ফলে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।


আরো সংবাদ



premium cement