০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

দুর্নীতির সিন্ডিকেট মুক্ত হয়নি সমবায় অধিদফতর

-


বিভিন্ন দফতরের দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের ঘুম হারাম হলেও এখনো দুর্নীতির সিন্ডিকেট মুক্ত হয়নি সমবায় অধিদফতর। বিগত বছরগুলোতে অধিদফতরে যেসব কর্মকর্তা সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম চালিয়েছেন তারা রয়েছেন এখনো বহালতবিয়তে।
এমনই একজন সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো: শরিফুল ইসলাম। অধিদফতরের অনিয়ম-দুর্নীতি পরিচালনায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা ফিরিস্তি উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) বেশ কয়েকটি দফতরে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, হাসিনা সরকারের আমলে নানা কুকর্ম করে তিনি পকেটস্থ করেছেন বিপুল অর্থ। বিগত সরকার সমর্থিত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধা প্রদান ও নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারী মনোভাব দেখাতেন তিনি। সুবিধা দিয়েছেন তার পছন্দের লোকজনকে। আর যারা তার পছন্দের তালিকায় নেই তাদের করেছেন অমানসিক নির্যাতন। বদলি করেছেন বারবার।
অভিযোগ উঠেছে, সমবায় অধিদফতরে যেসব কর্মকর্তার ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও লালন পালন করে যাচ্ছেন শরিফুল ইসলাম। নিবন্ধক ও মহাপরিচালক সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসহ নানা বাণিজ্যে জড়িত সে।
সমবায় অধিদফতরের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গত ১ বছরে ২৩৪ জনকে বদলি করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি এমন আরো ৬০-৭০ জনের বদলির আদেশ। প্রতিটি বদলি থেকে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। ক্লার্কের পদোন্নতিতে করেছেন ঘুষ বাণিজ্য। এ পদে ঘুষের দর উঠিয়েছেন সাত থেকে আট লাখ টাকা। ডিজি মো: শরিফুল ইসলাম পদোন্নতি কমিটির দুর্নীতি ও ঘুষের বিষয়ে সব কিছু জেনেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পদোন্নতি কমিটির কাছ থেকে তিনিও বড় অংশের টাকা পেয়েছেন এবং বর্তমানে পদোন্নতি বাণিজ্যের টাকা জায়েজ করতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সমবায় অধিদফতরের নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য (যশোর-৫) তদবির করেই শরিফুল ইসলামকে ডিজি হিসেবে সমবায় অধিদফতরে নিয়ে আসেন।
আরো অভিযোগ রয়েছে, সমবায় অধিদফতরের যে ৫১১ জন লোকবল নিয়োগ ঝুলে আছে, তা সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ছেলের সুপারিশ বা তালিকা মোতাবেক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিবেন এমন শর্তসাপেক্ষে শরিফুল ইসলাম ডিজি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক অভিযোগের ব্যাপারে ঘুষ লেনদেনের দালিলিক প্রমাণ পাওয়ার পরও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি বর্তমান নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো: শরিফুল ইসলাম। অভিযুক্ত ও বদলিকৃত অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) মো: হাফিজুল হায়দার চৌধুরীকে অনিয়ম ও দুর্নীতি পুনঃবাস্তবায়ন করতে আবারো অতিরিক্ত নিবন্ধক (প্রশাসন) শাখায় পদস্থ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সমবায় অধিদফতরের ৫১১ পদে কর্মচারী নিয়োগ ঘিরে শতকোটি টাকা বাণিজ্যে সিন্ডিকেটের সাথে ছিল তার যোগাযোগ। নিয়োগবাণিজ্যে জড়িত অধিদফতরের তৎকালীন অতিরিক্ত নিবন্ধক (প্রশাসন) ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি মো: হাফিজুল হায়দার চৌধুরী এবং উপ-নিবন্ধকের (প্রশাসন) বিরুদ্ধে ডিজি শরিফুল ইসলাম কোনো ব্যবস্থা নেননি।

অভিযোগ রয়েছে, বাতিল হওয়া পরীক্ষায় আবেদনই করেননি এমন প্রায় ১০০ জনের নাম ছিল উত্তীর্ণদের তালিকায়। তাদের নাম ও ইউজার আইডি সংযুক্ত করা হয়েছে। অথচ তাদের খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। এমনকি কোনো কোনো পদে ছেলেকে মেয়ে বা মেয়েকে ছেলে বানিয়ে উত্তীর্ণ করা হয়। উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় বিভিন্ন ব্যক্তি গোপন কক্ষে ঢুকে উত্তরপত্রের নম্বর জালিয়াতি এবং অনুত্তীর্ণ, অযোগ্য প্রার্থীদের রোল ফলাফল শিটে অন্তর্ভুক্ত করেন। যেখানে এমসিকিউ পরীক্ষার ফল পরীক্ষার পরদিনই দেয়া যায়, সেখানে দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর ফল প্রকাশ করা হয়। এসব দুর্নীতিতে ডিজি শরিফুল ইসলাম জড়িত ছিলেন। তবে অনিয়মের কারণে পরীক্ষার ফল বাতিল করলেও দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত সুপারিশও নেই। এতে তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে এবং নিয়োগ পরীক্ষার খরচ বাবদ সরকারি কোষাগারের ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা গচ্চা গেছে। যা সরকারি অর্থের অপচয়।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো: শরিফুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement