০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

যক্ষ্মা রোগীদের বিশাল অংশ শনাক্ত হচ্ছে না

-

বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগীদের একটি বিশাল অংশ শনাক্ত হচ্ছে না, যদিও বয়স্ক মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে যক্ষ্মাকে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের মধ্যে যক্ষ্মার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। জনসংখ্যা অনুপাতে এ দেশে প্রতি লাখে ২২১ জন যক্ষ্মা আক্রান্ত শনাক্ত হবে ধরে নিয়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি কাজ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে প্রতি লাখে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে ১৮০ জন। প্রতি লাখে বাকি ৪১ জনই শনাক্ত হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা বলছেন। শনাক্ত না হলে নিজের অজান্তেই যক্ষ্মা আক্রান্তরা ছড়িয়ে যাচ্ছে মারাত্মক জীবাণু। ফলে বাংলাদেশে কেউই নিরাপদ না বলে মনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটি। যক্ষ্মার চিকিৎসা ও ওষুধ বিনা মূল্যে দেয়া হয় তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ শীর্ষ যক্ষ্মা প্রবণ দেশ। বাস্তব ভিত্তিতে কর্মসূচি চালানো হলে যক্ষ্মায় রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সফলতা পেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতি মিনিটে একজন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজারের। সে অনুসারে বাংলাদেশে প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মায় একজনের মৃত্যু হচ্ছে। যক্ষ্মা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর একটি অন্যতম প্রধান হুমকি। ১৯৯৫ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রায় ৩০ লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে শিশু রয়েছে প্রায় ২০ হাজার।

যক্ষ্মা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হলেও বিগত সময়ে যেনতেন প্রকারে তথ্য মিলিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সব কিছু নতুন করে পর্যালোচনারও দাবি উঠেছে।
বিশ্বের যক্ষ্মা প্রবণ ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরে এবং ৫০ শতাংশ লোকের যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২.১৬ শতাংশ। জাতীয় যক্ষ্মা জরিপ ২০১৫-১৬ হতে জানা যায়, বছরে মোট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রতি লাখে ২৬০ জন আর নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি লাখে ২২১ জন। যদিও তা গত বছরগুলোর অনুমাননির্ভর পরিসংখ্যানের চাইতে কম কিন্তু এখনো যক্ষ্মায় মৃত্যুহার প্রতি লাখে ৪৫ জন। ‘জাতীয় যক্ষ্মা জরিপ ২০১৫-২০১৬’ থেকে জানা যায়, গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে যক্ষ্মা রোগের প্রকোপ বেশি, বিশেষ করে যেসব স্থানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অধিক, মানুষকে ঠাসাঠাসি করে বসবাস করতে হয় এবং আবাসস্থলে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে না সেসব স্থানে যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে যক্ষ্মা শনাক্তের হারও অনেক কম। এর পেছনে কারণ হিসেবে অনুমান করা হয় যে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা স্ক্রিনিং ও মনিটরিং ব্যবস্থা অনেকটা সহজেই চালু রাখা যায় কিন্তু শহরে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট থাকার পর ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে রোগী শনাক্ত হয় রোগী যখন নিজে এসে তার সমস্যা তুলে ধরেন।

এত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ঢাকা বিভাগীয় বিশেষজ্ঞ ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন জানান, বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় যক্ষ্মা রোগ চিহ্নিতকরণ বাড়ছে। আগে যেখানে প্রতি লাখে ৫৬ থেকে ৯০ জন রোগী শনাক্ত হতো এখন ১০০ থেকে ১৪০ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। কেন বেড়েছে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘সঠিক যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি যেমন জিন এক্সপার্ট মেশিন বেড়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত বহনযোগ্য এক্সরে মেশিন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় যক্ষ্মা শনাক্ত বেড়েছে।’ উল্লেখ্য, দেশে মোট ৭৩৫টি জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে যক্ষ্মা নির্ণয়ে। কিন্তু তার পরও কাক্সিক্ষত যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক চিকিৎসকদের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে এখনো সঠিক ধারণা নেই। তাদের অনেকেই যক্ষ্মা পরীক্ষা করতে হবে এমন কিছু ভাবতেই চান না বলে কাক্সিক্ষত মানে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement