০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১,
`

সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিলের সিদ্ধান্ত

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও মো: নাহিদ ইসলামসহ অন্যরা : পিআইডি -

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হবে বলে আশ্বস্ত করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, শুধু সাইবার নিরাপত্তা আইন নয়, পর্যায়ক্রমে সব কালাকানুন বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় অবশ্যই আমাদের সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত। সে দিকেই আমরা যাবো। ঠিক এই মুহূর্তে পুরাটা বাতিল করব না, না স্পিচ অফেন্স সব বাতিল করব সেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে নিব। তবে এই আইন বাতিল হবে। পরবর্তীকালে যখন নতুন আইন হবে, এটার মূল উদ্দেশ্য হবে নাগরিককে সুরক্ষা দেয়া। তিনি বলেন, আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে। আপনাদের কথা দিতে পারি আমরা পর্যায়ক্রমে সব ধরনের কালাকানুন থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করব। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ সংশোধনবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, এ মামলার সবচেয়ে নির্মম ভিকটিম খাদিজাতুল কোবরা। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছেন। তার পরে আপিল বিভাগ এই জামিনের তারিখ বারবার পিছিয়ে দেয়। যেন বিচার ছাড়াই তাকে জেলে রাখা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছিলাম, এটা কী করছে আপিল বিভাগ। উনি কী উত্তর দিয়েছিলেন তা বলতে চাই না। এইসব মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের।
তিনি আরো বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের একটা ধারণা আছে, আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে সব মামলা প্রত্যাহার করতে পারে। এটা সঠিক নয়। একটা মামলার বিভিন্ন স্তর থাকে। সব মামলা ইচ্ছা করলে প্রত্যাহার করা যায় না। বিশেষ করে যে মামলায় সাজা হয়ে যায়। যিনি সাজাপ্রাপ্ত তার আবেদন ছাড়া মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম বলেন, অপপ্রয়োগের জন্যই এই আইনটা তৈরি করা হয়েছিল। ফলে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এটা ব্যবহার হয়েছে। আমরা যত সংশোধন করি না কেন এ কারণে মানুষের মধ্যে অনাস্থাটা থেকে যাবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা উচিত। সম্পূর্ণ সংশোধন করেও যদি এই নামটা রাখা হয় তা হলেও মানুষ এই আইনটাকে বিশ^াস করবে না। তিনি বলেন, অবিলম্বে এই আইনটা বাতিল বা স্থগিত করা উচিত। এই আইনে যাতে আর মামলা না নেয়া হয়। আমাদের এই সিদ্ধান্তটা খুবই দ্রুত নিতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধনের অযোগ্য। এ আইন পুরোপুরি বাতিলের দাবি করতে হবে। তিনি বলেন, খাদিজাতুল কোবরার গল্পসহ এরকম অসংখ্য বঞ্চনার গল্প রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই আইনটি কর্তৃত্ববাদ বিকাশের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। যে কারণে মনে করি এটা সংশোধনের অযোগ্য। বাতিল হওয়া উচিত।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, আমাদের আইন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার একটি কারণ হলো, উন্নত বিশে^ আইন কমিশনের মাধ্যমে নতুন আইন নিয়ে আলোচনা হয়। আমাদের এখানে সেটা হয় না। তিনি বলেন, আইন করার বিষয়ে যারা গবেষক তাদের যুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী বলেন, এই আইন বাতিল করে মানুষ যাতে সুরক্ষা পায় সে ধরনের আইন আমরা চাই। তিনি বলেন, যে আইন আমাদের সুরক্ষা না দিয়ে ভয় দেখায় সেই আইন থাকা উচিত নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে দেয়া উচিত। সাইবার নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়, এ কারণে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলা উচিত। এছাড়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন বলেন, বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা কিভাবে এই আইনের অপপ্রয়োগ করেছে সেটাও তুলে ধরা উচিত।
আইন, প্রবাসীকল্যাণ ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মতবিনিময় সভায় সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর প্রস্তাবিত সংশোধনী তুলে ধরা হয়। তবে আলোচকদের অধিকাংশই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির, সাংবাদিক রিয়াজ আহমেদ, ডা: জাহেদ উর রহমান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্যতম ভিকটিম খাদিজাতুল কোবরা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।


আরো সংবাদ



premium cement