০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মুখোমুখি সংঘর্ষে হিজবুল্লাহ-ইসরাইলি বাহিনী

-


হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। গত মঙ্গলবার লেবাননে প্রথম স্থল হামলা চালানোর ঘোষণা দেয় ইসরাইল। তবে গতকাল বুধবার দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইল জানে লেবাননে তাদের স্থল হামলা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। ফিলিস্তিনের গাজায় তারা সহজে ঢুকে পড়তে পারলেও লেবাননের ভেতরে প্রবেশ করতে তাদের সেনাদের বেগ পেতে হবে। কারণ হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের তৈরিই করা হয়েছে এমন স্থল হামলার জন্য। তারা এ ক্ষেত্রে বেশ প্রশিক্ষিত। এ ছাড়া হিজবুল্লাহর এসব যোদ্ধার সরাসরি যুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আছে।
হিজবুল্লাহর একটি আক্রমণে চারজন ইসরাইলি সৈন্য নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল বুধবার ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, হামলাটি লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডাইসা এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণ এবং অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তিনের সীমান্ত অঞ্চলে ইসরাইলের একটি সৈন্যদল হিজবুল্লাহর আক্রমণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। হামলায় বহুসংখ্যক ইসরাইলি সৈন্য আহত হয়েছে এবং উদ্ধারকারী দল তাদেরকে চারটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ওডাইসাতে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর হিজবুল্লাহ যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে এটিকে তাদের একটি বিজয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ এই হামলার পর ইসরাইলি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। অথচ শহরটিতে প্রবেশের আগে সেখানে ব্যাপক কামান হামলা চালিয়েছিল তারা।

এ দিকে দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের প্রথম একজন সেনা মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, একটি কমান্ডো ব্রিগেডের ২২ বছর বয়সী একজন সেনা যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। অন্য দিকে হিজবুল্লাহর বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, লেবাননের সীমান্ত শহর মারুন আল-রাসে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে চলমান সংঘর্ষে তারা কয়েকজন ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যা করেছে। বুধবার লেবাননের যোদ্ধাদের সাথে ইসরাইলি সেনাদের এটি দ্বিতীয় সরাসরি সংঘর্ষ বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। তাদের মতে, দু’টি সংঘর্ষেই ইসরাইলি সেনাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছে। তবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ দিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হাউছিরা। পৃথক খবরে বিবিসি ও রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ বুধবার সকালে ইসরাইলের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি ইসরাইলি সামরিক ব্যারাকে রকেট হামলার দাবি করেছে তারা। এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় ৭টা ১৫ মিনিট থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি হামলায় পরিচালনা করে হিজবুল্লাহ। এ হামলায় শতুলা ও মাসকাফ আমের বসতিতে জড়ো হওয়া ইসরাইলি সেনা এবং ‘শোমেরা ব্যারাকে ইসরাইলি শত্রুবাহিনীর সমাবেশ’কে লক্ষবস্তু করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তারা।

শেষ কয়েক মিনিটে তারা বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে ‘সরাসরি’ এবং ‘নির্ভুল’ আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়ার দাবি করেছে। লেবাননের আদাইসেহ শহরে ইসরাইলি বাহিনীকে বিতাড়িত করার দাবি করেছিল হিজবুল্লাহ। এর কিছুক্ষণ পরই এই হামলার ঘটনা সামলে এলো। হিজবুল্লাহর এমন দাবির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল। একই দিনে ইয়েমেনের হাউছিরাও ইসরাইলের হামলার দাবি করেছে। তারা বলছে, ইসরাইলি সামরিক চৌকি লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে তারা। বুধবার হাউছি সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, তিনটি ডানাযুক্ত ‘কুদস ৫’ রকেট দিয়ে ইসরাইলের গভীরে সামরিক পোস্টগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে তারা।

আরো সৈন্য পাঠাচ্ছে ইসরাইল : এ দিকে দক্ষিণ লেবাননে আরো ইসরাইলি সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ)। বুধবার ইসরাইলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল ইসরাইলের প্রতিরক্ষাবাহিনীর বরাত দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে আরো সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। আইডিএফ আরো জানায়, ওই অঞ্চলের ২৮টি গ্রামের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নিহত আরো ৫৫ : লেবাননে ইসরাইলের হামলায় আরো ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ১৫৬ জন। গত মঙ্গলবার হামলায় নিহত ও আহতের এই তথ্য জানায় লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর আগে জানায়, সোমবার ইসরাইলি হামলায় নিহত হয় ৯৫ জন। এ ছাড়া আহত হন আরো ১৭২ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ হত্যার দুই দিন পর রোববারেও বিমান হামলায় ৫০ জন নিহত হয়েছে।
দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইলি বাহিনী। গত শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণে হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, বিমান হামলার কারণে বৈরুত ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালতে বাধ্য হচ্ছে। ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলার কারণে দেশজুড়ে ১০ লাখের মতো মানুষ ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়ে থাকতে পারে। ‘এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা,’ বলছিলেন নাজিব মিকাতি।


আরো সংবাদ



premium cement